Sylhet Today 24 PRINT

১২ বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ফারিয়া

বিনোদন ডেস্ক |  ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

শবনম ফারিয়া। বর্তমান সময়ের একজন জনপ্রিয় এবং কর্মব্যস্ত অভিনেত্রী। টেলিভিশন নাটক নিয়ে বেশ ব্যস্ত। সম্প্রতি ‘দেবী’ ছবির মধ্য দিয়ে সকলের দৃষ্টি কেড়েছেন। তাকে এই পর্যন্ত আসতে নিজের সঙ্গে নিজেকে যুদ্ধ করতে হয়েছে। যদি তিনি এই যুদ্ধে হেরে যেতেন তাহলে হয়তো শবনম ফারিয়া হতে পারতেন না। তাকে আরো অনেক আগেই হারিয়ে যেতে হতো। সম্প্রতি নিজের ফেসবুকে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।

ফেসবুকে ফারিয়া লেখেন, ‘শুনতে খুব সহজ শোনালেও যে বিষয়টার মধ্য দিয়ে যায় সেই জানে এইটা নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন কতটা কঠিন! আমার প্রথম ডিপ্রেশন শুরু হয় ২০১৫ সালে একটা ‘সামান্য’ ব্রেক-আপ এর পর পর! যদিও এখন সামান্য বলছি, তখন বিষয়টা মোটেও সামান্য ছিল না! সেসময় আমি কিংবা আমার পরিবার বুঝতে পারেনি যে, আমার সেই অস্বাভাবিক আচরণ, রুমের মধ্যে নিজেকে বন্ধ করে রাখা, সারাক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করা, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে শেয়ার না করে ফেসবুকে সংবেদনশীল কথা বার্তা লিখে ফেলা, রাতের পর রাত ঘুম না হওয়ায় শুটিংয়ের সেটে খিটখিটে মেজাজে থাকা ডিপ্রসানেরই একটা বহি:প্রকাশ! সেই ডিপ্রেশন প্রায় ছয় মাসের মতো ছিল, আমার বাবা-মা’র চেষ্টায় অনেকটাই স্বাভাবিক হয়!’

তিনি আরো লেখেন, ‘দ্বিতীয় বার আবার বুঝি, বাবা চলে যাওয়ার পর! যেহেতু ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা সবচেয়ে ভাল বন্ধু ছিল, আর আমার বাবাকে যারা ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন শুধু তারাই জানে আমার বাবা আর আমার বন্ধুত্বের পরিধি। বাবার মৃত্যুর পর আমার মনে হলো, আমার আসলে কেউ নেই, মা’র কিছু হলে আমার কি হবে! কিন্তু ততদিনের আমার মা এবং আমি দুজনই বুঝে গেছি যে আমি ডিপ্রেশনে আমার মা অনেকটা জোড় করেই আমাকে বাবা চলে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই কাজে পাঠায়! তখন যেটা হলো, কাজে থাকলে আমি সব ভুলে যাই, যেহেতু আমার পেশাটাই অদ্ভুত একটা পেশা, যে সেট এ ঢুকলেই আমরা অন্য কেউ হয়ে যেতে পারি! কিন্তু বাসায় ফিরলে সেই একই অনুভূতি! কিন্তু আমার মা আর সেই রিস্ক নেয়নি, আমাকে ‘ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট’ এর কাছে পাঠান এবং ২/৩ বার কথা বলার পরেই আমার ডিপ্রেশন সেবারের মত চলে যায়!’

আত্মহত্যার চেষ্টা কেন করেছিলেন সে বিষয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘সেই প্রথমবারের’ ছয় মাস ডিপ্রেসড থাকা অবস্থায় কম করেও অন্তত ১২ বার আমি সুইসাইডের কথা ভেবেছি!!! ঘুমের ওষুধের পাতা হাতে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে নিজের সঙ্গে নিজে যুদ্ধ করেছি। সেসময় আমি যদি চলে যেতাম, তাহলে কি আজকে আমি শবনম ফারিয়া হতে পারতাম? আপনারা/তোমরা আমাকে চিনতে? অচেনা/অজানা এতো মানুষের ভালবাসা পেতাম? একজন মানুষের ভালবাসা পাইনি বলে এতো এতো ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হতাম?’ আর এখন যে মানুষটি আমার হাতটা ধরেছে, আমার সব স্বপ্নের সঙ্গী, তাকেইবা পেতাম কোথায়? অন্তত তার সঙ্গে অকারণেই ঝগড়াগুলো কিভাবে করতাম? জীবনকে সুযোগ দিতে হয়, ভুল করতে হয়, ধাক্কা খেতে হয়, নয়তো তুমি যখন অনেক বড় কেউ হবে, তোমার বায়োপিকে কি লিখবা? এসব ঘটনা না থাকলে তো বোরিং হয়ে যাবে।’

আরো পড়ুন: রিকশাচালককে পেটানো সেই নারী আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার

‘সঞ্জয় দত্ত এমন অঘটন না ঘটালে আমরা ‘সানজুর’ মত অসাধারণ সিনেমা কোথায় পেতাম! কিংবা বাবার চলে যাওয়ার পর যদি কিছু করতাম তাহলে আমার মার কি হতো একবার ভাবতে পারেন, আমার মার পৃথিবী আমাকে ঘিরে , আমার কিছু হলে তার কি হতো!’

‘প্রত্যেকটা বাবা-মার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস তার সন্তান, তবে একেকজনের প্রকাশ ভঙ্গি একেক রকম! কেউ আদর করে কপালে চুমু দিয়ে বলে, ‘বাবা হোমওয়ার্কটা করতে যাও’ আবার কেউ চিৎকার দিয়ে বলে ‘কুত্তার বাচ্চা, এখনো পড়তে বসলি না?’ কিন্তু দুজনের মটিভ কিন্তু একই।’

‘আমার মা যেমন নামাজ নিয়ে কিছু যন্ত্রণা দেন, যখন মুড ভাল থাকে ‘বাবা নামাজটা পরো, সব সমস্যার সমাধান এইটা, বাবার কথা মনে পরলে নামাজে বলো, আল্লাহ বাবার কাছে তোমার মনের কথা পৌঁছে দিবে।’

আর মেজাজ খারাপ থাকলে বলেন, ‘পশ্চিম দিকে তো আছাড়ও খাও না, তোমার সমস্যা হবে না কে তো কার হবে।’ কিন্তু ভেবে দেখেন সে আমার ভাল চায় বলেই এমনটা বলে! এই অত্যাচারের মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক ভালবাসা।

ফারিয়া আরো লেখেন, ‘যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালানো খুব সহজ, কিন্তু যুদ্ধে জয়ী হওয়া কঠিন, কিন্তু যদি কষ্ট করে একবার তুমি জিতে যাও, সারা পৃথিবী তোমাকে মনে রাখবে, কিন্তু যদি পালাও, মানুষ ৪০ দিন মনে রাখবে তাও কাপুরুষ হিসাবে! তুমি যদি মুসলিম হও, তোমার কোন জানাযা হবে না, তুমি ভাবতে পারো এটা তোমার পরিবারের জন্য কত অসম্মানের, কতটা কষ্টের?’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.