Sylhet Today 24 PRINT

সুরের পাখি আব্দুল আলীমের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

মারূফ অমিত |  ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

লোক সঙ্গীত,বাংলাদেশের সঙ্গীতের অন্যতম একটি ধারা। আবহমান বাংলার নিজস্ব এই সঙ্গীতের ধারায় গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনযাত্রা, সুখ-দুঃখের কথা ফুটে উঠে। আর এই লোক সঙ্গীতের ধারাকে যিনি আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রেখেছেন, কণ্ঠস্বরের অসাধারণ ঐশ্বর্য্য নিয়ে যিনি সুরের ঢেউ আছড়ে ফেলতেন আমাদের বুকের তটভূমিতে তিনি লোক সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল আলীম। আজ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ (শনিবার) উপমহাদেশের কালজয়ী এই লোকসঙ্গীত শিল্পীর ৪১ তম মৃত্যুবার্ষিকী।

প্রখ্যাত লোক সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল আলীম ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই পশ্চিম বঙ্গের (ভারত) মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামের এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মোহাম্মদ ইউসুফ আলী।

বাল্যকাল থেকেই আব্দুল আলীম সঙ্গীতের প্রবল অনুরাগী ছিলেন। প্রাইমারি স্কুলে পড়বার সময় গ্রামোফোন রেকর্ডে গান শুনে গান গাইবার জন্য তাঁর আগ্রহ জন্মে। বাল্যকালে তাঁর সঙ্গীত গুরু ছিলেন সৈয়দ গোলাম আলী। অল্প বয়স হতেই লোক সঙ্গীত গেয়ে খ্যাতি অর্জন করতে শুরু করেছিলেন।

তেরো বছর বয়সে ১৯৪৩ সালে তাঁর গানের প্রথম রেকর্ড হয়। রেকর্ডকৃত গান দুটি হলো-"তোর মোস্তফাকে দে না মাগো" এবং "আফতাব আলী বসলো পথে"। পরবর্তীকালে তিনি কলকাতায় যান এবং সেখানে আব্বাসউদ্দিন ও কাজী নজরুল ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে গান করেছেন। তিনি লোক ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উপর দীক্ষা নিয়েছেন বেদার উদ্দিন আহমেদ, ওস্তাদ মোহাম্মদ খসরু, মমতাজ আলী খান, আব্দুল লতিফ, কানাই লাল শীল, আব্দুল হালিম চৌধুরী প্রমুখের কাছে। লেটো এবং যাত্রা দলেও কাজ করেছেন তিনি।

দেশ বিভাগের পরে আব্দুল আলীম ঢাকায় চলে আসেন এবং রেডিওতে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। তিনি পরে টেলিভিশন সেন্টার চালু হলে সেখানেও সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন। এছাড়াও তৎকালীন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে আব্দুল আলীম গান করেছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রটি হলো ‘লালন ফকির’। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০টির মতো গান রেকর্ড হয়েছিল তাঁর। আব্দুল আলীম তাঁর আধ্যাত্মিক ও মরমী মুর্শিদী গানের জন্য অমর হয়ে থাকবেন। পেশাগত জীবনে আবদুল আলীম ছিলেন ঢাকা সঙ্গীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক।

সুরের পাখি আলীমের কিছু উল্লেখযোগ্য গান হলো- 'নাইয়া রে নায়ের বাদাম তুইলা', 'সর্বনাশা পদ্মা নদী', 'হলুদিয়া পাখী', 'মেঘনার কূলে ঘর বাঁধিলাম', 'এই যে দুনিয়া', 'দোল দোল দুলনি', 'দুয়ারে আইসাছে পালকি', 'কেন বা তারে সঁপে দিলাম দেহ মন প্রাণ', 'মনে বড় আশা ছিল যাবো মদীনায়' ইত্যাদি।

নিজ কৃতকর্মের জন্য আব্দুল আলীম একুশে পদক, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। লাহোরে পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্সে সঙ্গীত পরিবেশন করে জয় করেছেন পাঁচটি স্বর্ণ পদক। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে সম্মানিত করে।

আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আবদুল আলীম সংগীত পরিষদ আজ সকালে মরহুম শিল্পীর মাজার জিয়ারত ও পুস্পস্তবক অর্পণ করবে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল অমর এই শিল্পীর জীবনের ওপর করবে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.