Sylhet Today 24 PRINT

সার্ভাইভাল গেইমের নাম ইউরোপ

মীর মোনাজ হক, বার্লিন |  ৩১ অক্টোবর, ২০২০

আট হাজারেরও বেশি শরণার্থী এবং অভিবাসী বর্তমানে পূর্ব ইউরোপের দেশ বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় রয়েছেন, এদের মধ্যে প্রায় ৭০০ বাংলাদেশি রয়েছেন। এদের বেশিরভাগই বিহাই শহরের আশেপাশের অঞ্চলে, ক্রোয়েশীয়দের কাছে এবং একই সময়ে ইইউ সীমান্তের কাছে এক জঙ্গলে বসবাস করছে মাসের পর মাস ধরে। তবে ২,০০০ থেকে ৩,০০০ মানুষ শিবিরে থাকেন না, সীমান্তের অদূরে বনাঞ্চলে প্লাস্টিকের তাঁবুতে কালাতিপাত করছেন অনেকেই, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ঢোকার 'গেইম' প্র্যাকটিস করছে, কারণ অভিবাসী কেন্দ্রগুলিতে পর্যাপ্ত থাকার ব্যবস্থা নেই। এরা প্রায় সকলেই বাংলাদেশ থেকে তুরস্কতে চলে এসে, চোরাপথে গ্রিসের মেটোপথে বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় ঢোকে, উদ্দেশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো একটা দেশে ঢোকা।
সম্প্রতি জার্মান ব্রডকাস্টার ডয়েচে ভেলে এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন করেছে। নাম দিয়েছে "গেইমের নাম ইউরোপ" এই গেইম মঞ্চায়ন এর পেছনে বড় ধরনের উস্কানিতে আছে তুরস্ক, উদ্দেশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে 'ডি-স্টাবিল' করা।

বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তের ঠিক কাছেই অবস্থিত মিরাল ক্যাম্প৷ আর সে কারণে বসনিয়ায় অন্য অঞ্চলে অবস্থিত ক্যাম্পগুলোর চেয়ে এই ক্যাম্পটিই শরণার্থী ও অভিবাসীদের কাছে বেশি আগ্রহের৷ এখান থেকে তারা সহজেই অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করতে পারেন৷ এই চেষ্টার একটা নামও দিয়েছেন তারা- ‘গেম মারা’৷

ক্যাম্পের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি শরণার্থী এই অঞ্চলে থাকায় বেশিরভাগেরই আশ্রয় নিতে হয়েছে পাশের জঙ্গলে, অথবা পরিত্যক্ত এক ছাদবিহীন কারখানায়৷

বসনিয়ার তিনদিনে অনেক বাংলাদেশি শরণার্থী ও অভিবাসীর সঙ্গে কথা হয়েছে৷ প্রায় প্রত্যেকেই নিজের গায়ের কাপড় সরিয়ে দেখিয়েছেন লাঠির দগদগে দাগ৷

ডয়েচে ভেলের সাংবাদিক অনুপম দেব কানুনগো বর্ণনা করছিলেন, "প্রতিদিনই রাস্তায় আমাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মরক্কোসহ নানা দেশের অভিবাসন প্রত্যাশীদের সঙ্গে৷ কারো চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছে, কারো পিঠে রক্ত জমে কালো হয়ে গেছে"৷

ডয়েচে ভেলের বর্ণনায়, "শরণার্থীরা জানান, বসনিয়ায় পুশ-ব্যাকের পর তারা যখন প্রচণ্ড শীতের মধ্যে খালি গায়ে, খালি পায়ে হেঁটে আসেন, তখন কোনো বাসও তাদের নিতে চায় না৷ তবে কিছু বসনিয়ান সহমর্মী হয়ে তাদের জামা-জুতা দান করেন৷"

"ক্লাদুসার মিরাল ক্যাম্পে গিয়ে এমন অনেকের সঙ্গে দেখা হলো যাদের হাত ভাঙা, চোখে পট্টি বাঁধা৷ একজন পিঠের কাপড় তুলে দেখালেন স্পষ্ট লাঠির ক্ষত৷"

তুরস্কই এই নতুন গেইম মঞ্চস্থ করেছে, হয়তো প্রশ্ন করবেন কিভাবে? তাহলে পুরো কাহিনীটা বর্ণনা করি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে:

অভিন্ন বিশ্বাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে তুরস্ক ও বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক গভীরে এখন। "আমি আনন্দিত হব যদি তুর্কির প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেন, দয়া করে আমার শুভেচ্ছা ও আমন্ত্রণের বার্তা প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির কাছে পৌঁছে দেবেন।" বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে যখন একবছর আগে তুরস্কের দূতাবাস নতুন করে ঢাকায় আবার পুনঃস্থাপন হলো। সকলেই জানেন নিশ্চয়ই ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হলে, এর্দোয়ান তুর্কী পার্লামেন্টে বাংলাদেশকে ইসলামি নেতার হত্যাকারী বলে আখ্যায়িত করেছিলো, সেই থেকে দুদেশের ডিপ্লোম্যাটিক সম্পর্কে ভাটা পড়ে, তার দু'বছর পর বাংলাদেশও আবার আঙ্কারায় দূতাবাস পুনঃস্থাপন করে। সেই থেকে এর্দোয়ান বাংলাদেশের বন্ধু হয়ে যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান তুরস্কের ফার্স্ট লেডি। এই কথাগুলো এইজন্যেই বলছি কারণ, যে ৭০০ জন বাংলাদেশি তুরস্ক হয়ে গ্রিস তারপর বসনিয়া হার্সে গর্বিনার জঙ্গলে মাসের পর মাস অপেক্ষা করছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢোকার জন্যে ১৫/১৬ লক্ষ টাকা খর্চা করে হলেও এই গেইমে অংশ নিচ্ছে তাদেরকে অস্ত্র বানিয়ে এর্দোয়ান ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বনাশ কারতে চায়, আরও শরণার্থী ইউরোপে ঢোকাতে চায়, কারণ তুরস্ককে ইইউ সদস্য পদ দেওয়া হচ্ছে না, আর তার পেছনে ফ্রান্স এবং জার্মানির বড় ভূমিকা রয়েছে, সেটা এর্দোয়ান বুঝে গেছেন।

এখন আর এক গেইম শুরু হয়েছে ফ্রান্সে জঙ্গিদেরকে পাঠিয়ে, ফরাসি সংস্কৃতি ধ্বংস করার গেইমে, ফরাসি বিপ্লব শুরু হয় প্রায় ৩০০ বছর আগে ব্যঙ্গচিত্র দিয়েই, কার্টুন শিল্প ফরাসিদের সংস্কৃতির একটা অংশ, আর সেই ফ্রান্সের শিক্ষকের শিরশ্ছেদ করে যখন তিনি ক্লাসে ছাত্রদেরকে "ফ্রিডম অফ স্পিচ" শেখায়, নিস শহরে তিনজন ফরাসিকে হত্যা করে, ফ্রান্সের বিরুদ্ধেই উস্কানিমূলক অভিযানে আবার বাঙালিদেরকেই ব্যবহার করছে। ফরাসি পণ্য বর্জন করার ডাক দেয় তুরস্ক, পাকিস্তান সরকারিভাবে, পরে এখন বাংলাদেশি ইসলামি জঙ্গিদেরকে নিজের দলে টেনে নিয়েছে এর্দোয়ান। তা না হলে এই গেইমে বাংলাদেশের ইসলামি জঙ্গিদের কি ফায়দা ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দেওয়া পণ্য বর্জনের? সৌদি আরব কিন্তু ফ্রান্সকে বয়কট করেনি বা করবেও না, কারণ ফ্রান্সের সমরাস্ত্রসহ মিগ বিমান সৌদির দরকার এছাড়াও মক্কার বিশাল মসজিদ কমপ্লেক্স ফরাসি আর্কিটেক্টদের ডিজাইনে নির্মাণ হচ্ছে। এখানে এর্দোয়ান তার নিজস্ব ব্যর্থতার জন্যেই ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি ইসলামি উগ্রবাদী দেরকে সঙ্গে নিয়েছে। আর তাই এই ৭০০ জন বাংলাদেশি পূর্ব ইউরোপের এই জঙ্গলে শীত কাটিয়ে উঠতে পারবে কিনা কেউ জানেনা। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢোকার স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে!

১৫/১৬ লক্ষ টাকায় দেশেই ভালোভাবে ইনভেস্ট করলে সুখেই থাকতে পারতো তারা, ইউরোপে সারা জীবনেও ১৬ লক্ষ টাকা জমাতে পারবেনা তারা, কারণ তারা না জানে ভাষা না আছে স্কিল্ড। তাই সবশেষে বলতে হয় এর্দোয়ান আগামী মাসে যখন বাংলাদেশ সফর করবেন তখন ব্রাদারহুড জঙ্গিরাও খুশি হবে, কিন্তু আজ জখন খবরে শুনি যে গত মঙ্গলবারের ঢাকায় বিশাল জনস্রোত ফরাসি দূতাবাস ঘেরাও আর ফ্রেন্স পণ্য বর্জনের ডাক দেয়, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকজন এমপি প্রস্তাব করেছেন বাংলাদেশের রেডিমেড গার্মেন্টস বয়কট করতে, এখন ঘটনাটি অন্যদিকে মোড় নিতেই পারে, কারণ ইইউ দেশগুলোতে প্রায় ৮ বিলিয়ন ইউরো পরিমাণ গার্মেন্টস রপ্তানি হয় বাংলাদেশ থেকে। শেষ পর্যন্ত এর্দোয়ান এর চালে পড়ে বাংলাদেশ কি ইইউকে হারাবে? আর এই ৭০০ বাঙালির ভাগ্যে কি আছে সেটা এরাও হয়তো জানেনা। তবুও আশা করবো এদের একটা মানবেতর সুব্যবস্থা জাতিসঙ্ঘের সাহায্যকারী সংস্থা নিশ্চয়ই করবে। তথ্যসূত্র: ডয়েচে ভেলে

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.