Sylhet Today 24 PRINT

‘চোখবাঁধা মাইক্রোবাস’ একাত্তরের অগ্নিসাক্ষী!

রেজা ঘটক |  ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় দেশের ৬৪ জেলায় ৬৫টি বধ্যভূমিতে 'গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার' মঞ্চায়িত হচ্ছে। ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এই উদ্যোগের একটি সফল মঞ্চায়ন ছিল ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে 'চোখবাঁধা মাইক্রোবাস ও শূন্যতার গল্প' নাটকের প্রযোজনা।

নাটকটি রচনা করেছেন ড. মাহফুজা হিলালী ও নির্দেশনা দিয়েছেন আমিনুর রহমান মুকুল। রায়েরবাজার বধ্যভূমিকে কেন্দ্র করে লেখা হলেও নাটকটিতে ড. মাহফুজা হিলালী ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের প্রধান প্রধান কর্মতৎপরতা গুলোকেই উপজীব্য করেছেন। নাটকটিতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের প্রতি পাকিস্তানের অমানবিক ক্ষোভ, স্থানীয় রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের সহযোগিতায় বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের ধরপাকড় এবং অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁদের হত্যা করার পাশবিক চিত্রগুলো স্থান পেয়েছে।

নাটকে প্রফেসর ড. মুনীর চৌধুরী, সাংবাদিক সেলিনা পারভীন, কবি মেহেরুন্নেসা, সঙ্গীতজ্ঞ আলতাফ মাহমুদ, ডা. আলীম চৌধুরী, ডা. রাব্বী, ডা. আযহারুল ইসলাম, ডা. হুমায়ুন কবীর, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, লেখক মুহম্মদ আখতার, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আ.ম. ফয়জুল মহীসহ অসংখ্য চরিত্রকে জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি পাক-হানাদার কর্তৃক তাঁদের প্রতি সীমাহীন অমানুষিক ও বর্বর নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ডগুলোকে দৃশ্যায়ন করা হয়েছে।

পাশাপাশি নাটকে আমরা দেখতে পাই পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র ও নীল নকশার তৎপরতা, জেনারেল ইয়াহিয়া খান, জেনারেল রাওফরমান আলী, জেনারেল টিক্কা খানদের পৈশাচিক কর্মকাণ্ড, স্থানীয় রাজাকার-আলবদরদের নানান কিসিমের অপরাধ কার্যক্রম। নাটকে স্থান পেয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর বর্বর ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড, যা ইতিহাসে 'অপারেশন সার্চ লাইট' নামে পরিচিত। এছাড়া একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস জুড়ে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম ও গেরিলাদের অভাবনীয় আক্রমণের ঘটনাগুলোও এই নাটকে স্থান পেয়েছে।

একাত্তরের ডিসেম্বর মাসে বিশেষ করে ১৪ ডিসেম্বর ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও স্থানীয় রাজাকার-আলবদর বাহিনী কর্তৃক যে সকল বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়, মূলত সেসকল ঘটনাগুলোকেই নাটকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। নাটকে আমরা এসকল বাস্তব চরিত্রগুলোর পাশাপাশি দুটি প্রতীকী চরিত্রের অসাধারণ উপস্থিতি দেখতে পাই।

যার একটি 'চোখবাঁধা মাইক্রোবাস ও শূন্যতার গল্প' নাটকের কথক বা সূত্রধর এবং অপরটি হাইকমান্ড বা রাজাকার শিরোমণি। নাটকে এই দুটি চরিত্রই কাল্পনিক এবং এই দুটি চরিত্রকেই মেটাফরিক ভাবে প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তৃতীয় আরেকটি চরিত্র 'নেতা' নামে আমরা নাটকে দেখলেও সেটি যে পাকিস্তানের জাতির জনক মুহম্মদ আলী জিন্নাহ, সেটি সুস্পষ্টভাবেই বোঝা যায়।

নাটকের সূত্রধর (আমিনুর রহমান মুকুল) নাটকের শুরুতেই বাঙালি জাতির শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এক সুদীর্ঘ বয়ান উচ্চারণ করেন। যেখানে আমরা এই নাটকের বিশাল ক্যানভাসের অস্তিত্ব অনুমান করতে পারি। এই নাটকের সূত্রধর এমন একটি চরিত্র, যে কিনা প্রতীকী হলেও বাঙালির প্রতিটি প্রতিরোধের অগ্নিসাক্ষী ও পুরোধা চরিত্র হিসেবে নিজের পরিচয় প্রদান করেন। বাঙালির রক্তের স্রোতে ডুবতে ডুবতে এই চরিত্রটি নিজের পরিচয়ের কথাও কখনো কখনো ভুলে যায়। আবার অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত এই চরিত্রটি নতুন অন্য একটি চরিত্রে খুব অনায়াসে অটোমেটিক বদলে যায়।

হাজার বছরের বাঙালিদের প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতীকী এই চরিত্রটি বাংলার ঋতু বদলের মতই শত শত ঘটনা পরম্পরা ও সংগ্রামে-প্রতিরোধে এক নায়কোচিত চরিত্র থেকে আরেক বীরবলের চরিত্রে রূপান্তরিত হয়। হাজার দুয়ারি ধাঁধাঁর মত এই চরিত্রটি আদতে বাঙালি জাতিসত্তার রূপক চরিত্র হিসেবে ক্ষণে ক্ষণে নানান কায়ায়, নানান বয়ানে, নানান চরিত্রে বাঙালিদের সংগ্রাম ও প্রতিরোধের এক বলিষ্ঠ প্রতীকী চরিত্রে বাঙালি জাতীয়তাবাদের মেটাফরিক উপস্থাপনা। চরিত্রটি আমিনুর রহমান মুকুল অত্যন্ত সুদক্ষ মুনশিয়ানায় ফুটিয়ে তোলেন।

দ্বিতীয় চরিত্রটি শুধু একাত্তর নয় বরং যুগে যুগে বাঙালিদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যায় নেতৃত্ব প্রদানকারী এক হাইকমান্ড বা রাজাকার শিরোমণির কাল্পনিক বা প্রতীকী চরিত্র। যে চরিত্রে অসাধারণ দক্ষতা, অসামান্য কৌশল এবং দুর্দান্ত অভিনয় প্রতিভা প্রদর্শন করেন কাজী ফয়সল। আর নেতার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেন দোস্ত মোহাম্মদ নূরী শাহ।

নাটকের ক্যানভাস:
'চোখবাঁধা মাইক্রোবাস ও শূন্যতার গল্প' নাটকের শুরুটা বাংলা অঞ্চলের কৈবর্ত বিদ্রোহ দিয়ে আর শেষটা ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হাজার হাজার বাঙালির ও বুদ্ধিজীবীর লাশ আবিস্কার দিয়ে। সেদিন (১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১) রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে শুধু লাশ আর লাশ। তখনও ছিল আজকের মত পৌষের দিন। রায়েরবাজারের একেবারে শেষপ্রান্তে যেখানে বিল, সেই বিলের ভেতরে অনেকগুলো ডোবা।

ডোবায় ভাসছে কচুরিপানা। ফুটে আছে বেগুনি চোখওয়ালা ফুল। কত কত ফুল যে ফুটে আছে- চোখ জুড়ানো, মন ভোলানো সেসব ফুলের কোলেই কেবল লাশ আর লাশ। চোখ উপড়ানো, মুখ থ্যাতলানো, দাঁত খোলা, হাত বাঁধা, চোখ বাঁধা, লাশের স্তূপ। কারো হাতের আঙুল নাই, কারো পায়ের আঙুল নাই, কারো হৃৎপিণ্ড তুলে নেওয়া হয়েছে, কারো গায়ের চামড়া ছিলে ফেলা হয়েছে, কারো চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, কারো মস্তক বিচ্ছিন্ন, কারো লাশ স্তূপীকৃত, কারো লাশ গলিত, কারো লাশ কেবল একখণ্ড মাংসপিণ্ড। বাংলার সূর্যসন্তান বুদ্ধিজীবীদের লাশ এভাবে রায়েরবাজার বধ্যভূমির ডোবায় পড়ে আছে!

এই নাটকের শুরুটা একাদশ শতকের শেষের দিকে বরেন্দ্র বিদ্রোহ দিয়ে আর শেষটা ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের লাশ আবিস্কারের মাধ্যমে, যখন বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষেই এক বুদ্ধিশূন্য, মেধাশূন্য ধ্বংসস্তূপের উপর এক সদ্য স্বাধীন মানচিত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে।

নাটকের পটভূমি:
বাংলা অঞ্চলের মানুষ ইতিহাসের বিভিন্ন সময়েই শাসকদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, গড়ে তুলেছে প্রতিবাদ-বিদ্রোহ। কখনো তারা সফল হয়েছে, কখনো বা ব্যর্থ হয়েছে। বাংলা অঞ্চলের ইতিহাসে প্রথম সফল জনবিদ্রোহের নাম কৈবর্ত বিদ্রোহ বা বরেন্দ্র বিদ্রোহ। একাদশ শতকের শেষের দিকে (১০৭০ থেকে ১০৮৫) পাল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে পাল কর্মচারী দিব্যের নেতৃত্বে বরেন্দ্রভূমিতে কৈবর্ত সম্প্রদায়ের স্বাধীন রাজ্য গঠনকে ইতিহাসে কৈবর্ত বিদ্রোহ বা বরেন্দ্র বিদ্রোহ বলা হয়।

৭৫০ সালে পাল রাজা গোপালকে দিয়ে বাংলা অঞ্চলে যে পাল সাম্রাজ্যের শুরু, পালদের চারশো বছর রাজত্বের প্রায় শেষের দিকেই তা মুখোমুখি হয় বরেন্দ্র বিদ্রোহের বা কৈবর্ত বিদ্রোহের। তখন পাল বংশের রাজা ছিলেন দ্বিতীয় মহীপাল, ধারণা করা হয় যার রাজত্বকাল ছিল ১০৭৫ সাল থেকে ১০৮০ সালের মধ্যে।

কৈবর্ত বিদ্রোহের নেতা ছিলেন দিব্যক বা দিব্য। তিনি প্রথমদিকে হয়তো পালদের একজন রাজ কর্মচারী কিংবা সামন্ত ছিলেন। তিনি কৈবর্তদের একত্রিত করে একটি শক্তিশালী বাহিনী গঠন করেন। অনেক সামন্ত মহাজনও তখন দিব্যকে সহযোগিতা করেছিলেন। দ্বিতীয় মহীপাল দিব্যের বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে পরাজিত ও নিহত হন। এতে গৌড় রাজধানী ও বরেন্দ্র দিব্যের হস্তগত হয়।

সন্ধ্যাকর নন্দীর লেখা 'রামচরিত' গ্রন্থ থেকে আমরা কৈবর্ত বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি। যাকে এই নাটকের সূচনাপর্ব হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। 'কৈবর্ত' শব্দটি এসেছে 'ক' (পানি) এবং 'বর্ত' (জীবনযাপন) শব্দদ্বয় থেকে। যেহেতু কৈবর্তরা ছিল জেলে সম্প্রদায় এবং তাদের জীবনযাপন ছিল পানিকেন্দ্রিক। তবে এর ভিন্নমতও আছে।

অধ্যাপক লাসেন বলেছেন, 'কৈবর্ত' শব্দটি মূলত এসেছে 'কিম্ভর্ত' শব্দ থেকে যার অর্থ নিচু পেশার মানুষ। তবে কৈবর্তদের পেশা কেবল মাছ ধরাই ছিল না। আরেক ধরনের কৈবর্তদের কথাও শোনা যায়, যাদের ডাকা হতো হেলে। এই হেলেরা ছিল কৃষক সম্প্রদায়। মূলত বরেন্দ্র অঞ্চলে বসবাসকৃত অধিকাংশ মানুষই ছিল জেলে এবং কৃষক, এই দুই সম্প্রদায়ের। অর্থাৎ হাইলা আর জাইলা নিয়েই কৈবর্ত।

কৈবর্ত বিদ্রোহ থেকে শুরু করে বাঙালির বীরত্বগাঁথা সকল সংগ্রাম ও প্রতিরোধের বয়ান খুব সংক্ষিপ্তভাবেই উঠে আসে নাটকের সূত্রধরের কণ্ঠে। সেসব কথা বলতে বলতে এই কথক কখনো খেই হারিয়ে ফেলেন, কখনো ঘুমিয়ে পড়েন, কখনো জেগে ওঠেন, কখনো আহাজারি করেন, কখনো নির্বাক তাকিয়ে থাকেন, কখনো শব্দহীন কণ্ঠে কেবল হাঁসফাঁস করেন, কখনো বেহুশ হয়ে মাটিতে মরার মত পড়ে থাকেন, আবার বাঙালির রক্তের ভেতর থেকে টগবগিয়ে ফুটতে ফুটতে কথার লহরি ছোটান।

এই সূত্রধর আদতে হাজার বছরের বাঙালি জাতিসত্তার প্রতীক রূপে সংগ্রামে, প্রতিরোধে, মিছিলে নেতৃত্ব প্রদানকারী এক মেটাফরিক মহাকাব্যিক মহানায়ক। যিনি এই দৃশ্যমান তো একটু পরেই আবার অন্ধকারে ক্রন্দনরত, চিৎকার করা চাঁদের কিরণ। যার সুনির্দিষ্ট কোনো রূপ নাই তবুও দৃশ্যমান, সুনিপুণ কোনো দেহ নাই তবুও দেহবান, কুয়াশায় হারিয়ে যাওয়া কোনো কুহেলিকার মত অদৃশ্য এক জ্যোতির্বান, যার জন্মই যেন ঘোরলাগা কোনো জোছনা থেকে আবার সংগ্রামে-প্রতিরোধে নিহত হবার পর যিনি রক্তের অতল গহীনে হারিয়ে যান। এ যেন এক জীবন্ত চক্রব্যূহ। বারবার কেবল ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদল করেই তিনি কেবল অটোমেটিক জন্মগ্রহণ করেন।

এই মহানায়কের হাজারবার জন্ম ও মৃত্যু যেন প্রতিটি দর্শকই নাটকের মাধ্যমে সরাসরি দেখতে পান। এ যেন এক মায়ার খেলা। মায়ায় জড়িয়ে ক্ষণে ক্ষণে তিনি কেবল ধ্বংসস্তূপের ভেতরে আবারো জন্মগ্রহণ করেন। আর নতুন করে বাঙালিকে বিজয় সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। খাঁটি রক্তমাংসের পরিবর্তে এই মহানায়কের শরীর যেন অশরীরী এক শান্তির দেবদূত। বাঙালির বিজয় মঞ্চেই যেন তিনি বারবার ফিরে ফিরে আসেন।

তাই আমরা তাকে যেমন ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামে দেখতে পাই, তেমনি ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মিছিলেও তাকে দেখতে পাই। মিছিলে গুলি খেয়ে তাকে নিহত হতে দেখতে পাই। ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী বিজয়েও তাকে মিছিলের সম্মুখভাগে দেখতে পাই। ৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের মিছিলেও তাকে নেতৃত্ব দিতে দেখি। ৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনেও তাকে আমরা বক্তৃতারত দেখতে পাই। ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের বিজয়মেলাও তাকে আমরা বিজয়মালায় আবিস্কার করি। আর সর্বশেষ ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনেও প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার রাইফেলের ঝংকারে তার উপস্থিতিও আমরা টের পাই। তিনি যেন এক অনিঃশেষ বিজয়ী আলোর ঝলকানি। বাঙালির যে কোনো সংগ্রাম-প্রতিরোধেই তাঁকে আমরা সামনের সারিতে আবিস্কার করি।

নাটকের ব্যবচ্ছেদ:
নেতার ঘোষণার পর ভারতভাগের মাধ্যমে নতুন একটি রাষ্ট্র পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়। কিন্তু রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার নেতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেদিন বীরবাঙালি প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সেই প্রতিরোধের চূড়ান্ত অংশ মঞ্চায়ন হয় ইয়াহিয়া খানের ঘোষণার মাধ্যমে। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের চরিত্র করেন রেজাউল করিম রেজা। যিনি ঘোষণা দেন ত্রিশ লাখ বাঙালির মৃত্যু নিশ্চিত করে হলেও অখণ্ড পাকিস্তানকে বাঁচিয়ে রাখার।

ইয়াহিয়া খানের সেই হুকুম তলব করেন জেনারেল টিক্কা খান (ফয়জুর রহমান মিল্টন) ও জেনারেল রাওফামান আলী (সেলিম হায়দার)। গোটা পূর্ব পাকিস্তানে একাত্তরের পুরো নয় মাস জুড়ে এই দুই পাক জেনারেলের নেতৃত্বে যে নারকীয় ঘটনাবলী ঘটতে থাকে, সেই সকল অমানুষিক নির্যাতন ও বর্বর ঘটনা পরম্পরাই এই নাটকে উপস্থাপন করা হয়।

সাংবাদিক সেলিনা পারভীন (জয়িতা মহলানবিশ), কবি মেহেরুন্নেসা (সুরভী রায়), বাঙালি ফুটবল সংগঠক লাড়ু ভাই (শামীম সাগর), প্রফেসর মুনীর চৌধুরী (মাহবুব আমীন মিঠু), মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (ইবান রিয়াজ), লেখক মুহম্মদ আখতার (মো. ফখরুজ্জামান চৌধুরী), সঙ্গীতজ্ঞ আলতাফ মাহমুদ (রফিক নটবর), সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ( ), ডা. আলীম চৌধুরী (আরিফ খান), ডা. রাব্বী (বাবু) প্রমুখ বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের কীভাবে স্থানীয় রাজাকার-আলবদররা একাত্তরের ডিসেম্বরে চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন ও অত্যাচার চালিয়ে হত্যা করে, সেই সকল নির্মম ঘটনাবলী নাটকে কখনো এককভাবে, কখনো বা দলীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়।

সেখানে হাইকমান্ড বা রাজাকার শিরোমণির চরিত্রে নেতৃত্বে দেন কাজী ফয়সল। চৌধুরী মঈনুদ্দীনের চরিত্র করেন মো. মেহেদী হাসান। জেনারেল ইয়াহিয়া খানের চরিত্র করেন রেজাউল করিম রেজা, জেনারেল টিক্কা খানের চরিত্র করেন ফয়জুর রহমান মিল্টন, জেনারেল রাওফরমান আলীর চরিত্র করেন সেলিম হায়দার।

পাকিস্তানের নীল নকশা ও ষড়যন্ত্রসহ ২৫ মার্চের রাতে ঢাকার গণহত্যা থেকে শুরু করে ১৪ ডিসেম্বর রায়েরবাজারের ডোবায়-নালায় বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞের পুরো খণ্ড খণ্ড চিত্র বা একত্রে দলীয় চিত্র নাটকে দেখানো হয়। দর্শক রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের খোলা আকাশের নিচে মুক্ত মঞ্চে যেন এক ঝলক সেই একাত্তরের স্ন্যাপশট হুবহু দেখতে পায়।

হানাদারদের সেই চোখবাঁধা মাইক্রোবাস যেন গোটা ঢাকা শহরে ঘুরে ঘুরে একে একে ধরে আনে মুনীর চৌধুরীকে, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীকে, সিরাজুদ্দীন হোসেনকে, আলতাফ মাহমুদকে, সেলিনা পারভীনকে, মেহেরুন্নেসাকে, ডা. আলীম চৌধুরীকে, ডা. রাব্বীকে, ডা. হুমায়ুন কবীরকে, মুহম্মদ আখতারকে, আ.ম. ফয়জুল মহীকে।

তারপর হাইকমান্ডের নির্দেশে তাঁদের উপর চালানো হয় ইতিহাসের বর্বরতম নির্যাতন। একপর্যায়ে তাদেরকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করা হয়। তারপর তাঁদের লাশের উপর বেয়নেট চার্জ করা হয়, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের লাশকে বিকৃত করা হয়, আর এক পৈশাচিক চিৎকারে মেতে ওঠে হায়েনার দল। বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার পরেও ওদের নির্যাতনের খায়েস যেন একটুও মেটে না। ওদের পৈশাচিক চিৎকার যেন একুশ শতকের অন্যান্য নির্যাতনকেও প্রতীকী রূপে নাটকে উপস্থাপন করা হয়।

নাটকের সংলাপে অসাধারণ সব কথোপকথন সংযোজন করা হয়েছে। অত্যন্ত যৌক্তিক ও গবেষণাধর্মী এই নাটকটি সত্যি সত্যিই ড. মাহফুজা হিলালীর এক অসাধারণ কর্মযজ্ঞ। নাটকের ঘটনাবলী, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, চরিত্রগুলোর সন্নিবেশ এবং তাঁদের মুখের ভাষা, সব যেন মিলেমিশে এক মহাকাব্যে রূপ নিয়েছে। কিন্তু ইয়াহিয়া খানের মুখে 'ত্রিশ লক্ষ বাঙালির লাশ চাই' সংলাপটির ঐতিহাসিক প্রমাণ থাকলেও এই সংলাপটি একাত্তরের পাক হানাদারদের ঘোষিত পূর্বপরিকল্পনারই হুবহু বাস্তবায়ন' হিসেবে প্রমাণ যেন একটু বেমানান ঠেকেছে।

কারণ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিকভাবে আমরা যে ত্রিশ লক্ষ শহীদের কথা বলি, তা যুদ্ধের আগে পাক হানাদারদের ত্রিশ লাখ বাঙালি মারার পরিকল্পনার কথার বাস্তবায়ন বুঝায় না। কারণ যুদ্ধের ভয়াবহতা ছিল তার চেয়েও ভয়ংকর। গোটা দেশের সাড়ে সাত লক্ষ জনগোষ্ঠীই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কোনো না কোনোভাবে নির্যাতিত, স্থানচ্যুত ও যুদ্ধের কবলে নিষ্পেষিত। ইয়াহিয়া খানের মুখে এই সংলাপটি না থাকাই বরং নাটকের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিত।

নাটকের সেট:
'চোখবাঁধা মাইক্রোবাস ও শূন্যতার গল্প' নাটকের সেট করেছেন আলী আহমেদ মুকুল। বধ্যভূমির উন্মুক্ত মঞ্চে এরকম সাদামাটা ও প্রতীকী সেট বেশ মানানসই মনে হয়েছে। বিশেষ করে নাটকে চলমান সেট প্রতিস্থাপন ও সঞ্চালনের সময় শুধুমাত্র সেনাদের কাজে লাগিয়ে নির্দেশক আমিনুর রহমান মুকুল অসামান্য দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। এককথায় দুর্দান্ত সেট এবং তার যৌক্তিক ব্যবহার। কারণ প্রায় ৮০ জন আর্টিস্ট এই সেট ব্যবহার করেছেন দারুণ দক্ষতায়।

নাটকের লাইট:
এত বড় ক্যানভাস এবং এত জন আর্টিস্ট নিয়ে যে মহাযজ্ঞ, সেই তুলনায় নাটকের লাইট নিয়ে আমি মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারিনি। নাটকের লাইট করেছেন জুনায়েদ ইউসুফ। তাকে সহযোগিতা করেছেন সাইফ মণ্ডল। ভবিষ্যতে এই নাটকের পুনরায় কোনো মঞ্চায়ন থাকলে আমি আলোক প্রক্ষেপণের দিকটিকে আরও গুরুত্ব দিতে অনুরোধ করব। সেক্ষেত্রে নির্দেশক আমিনুর রহমান মুকুলকে বিষয়টি আরও গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে।

নাটকের কোরিওগ্রাফি:
নাটেকর কোরিওগ্রাফি করেছেন অনিকেত পাল বাবু। এত বড় মঞ্চের প্রতিটি ইঞ্চি অত্যন্ত সুবিবেচনা ও দক্ষতার সাথে ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি মঞ্চের নিচে দর্শকদের সাথে ইন্টার-অ্যাকটিভ করানোর জন্য নাটকটি আরও জীবনঘনিষ্ঠ হয়েছে বলেই আমার মনে হয়েছে। এককথায় অসাধারণ।

নাটকের আবহসংগীত:
নাটকের আবহসংগীত করেছেন অজয় দাশ। বেশ কিছু দৃশ্যে আবহসংগীত চমৎকার। কিন্তু যেসকল জনপ্রিয় গান নাটকের আবহসংগীতে ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের কণ্ঠে এত সুন্দর কম্পোজ, সেই কম্পোজের বদলে ফিউশন কিছুটা অযৌক্তিক লেগেছে, বরং অরিজিনাল গান ব্যবহার করাটা বেশি যৌক্তিক ছিল। তাছাড়া সাউন্ড প্রক্ষেপণে ডুয়েল পদ্ধতি (দুইটা স্ক্রিনের জন্য দুইটা প্রক্ষেপ) একদম অকার্যকর ঠেকেছে।

কারণ আমরা যারা দর্শক সারিতে বামদিকে বসেছিলাম, তারা ডানদিকের শব্দ একটুও শুনতে পাইনি। আবার ডানদিকের দর্শক সারিতে যারা ছিলেন তারা বামদিকের শব্দ শুনতে পায়নি। আমাদের যেমন ডায়লগ শুনতে সমস্যা হয়েছে, তেমনি ডানদিকের দর্শকদেরও এই সমস্যা হবার কথা। অজয়কে বলব, ভবিষ্যতে এধরনের শব্দ প্রক্ষেপণে উভয় সেট সারাক্ষণ সচল রাখার পদ্ধতি অনুসরণ করতে, যাতে কোনো দর্শক নাটকের কোনো সংলাপ বা শব্দ যাতে মিস না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে।

নাটকের কস্টিউম:
নাটকের কস্টিউম ডিজাইন করেছেন এনাম তারা সাকি। নাটকের সূত্রধর, হাইকমান্ড ও নেতার কস্টিউম ডিজাইন দুর্দান্ত হয়েছে। পাক সেনাদের পোষাকে সেনাবাহিনীর পূর্ণাঙ্গ পোশাক সেট অনুসরণ করলে আরও ভালো হতো। অন্যান্য চরিত্রের পোশাক নির্বাচনে আরও যত্নবান এবং একাত্তরের ছাপ সুস্পষ্ট করার মুনশিয়ানা দাবি করে।

নাটকের প্রপস, ভিডিও গ্রাফিক্স ও পোস্টার:
নাটকের প্রপসে অত্যন্ত মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন পলাশ হেনড্রি সেন। এককথায় অসাধারণ। ভিডিও গ্রাফিক্স দুর্দান্ত। শেখ শাহীনকে ধন্যবাদ যৌক্তিক ভিডিও গ্রাফিক্স সন্নিবেশ ঘটানোর জন্য। নাটকের সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন পোস্টার করেছেন শিল্পী চারু পিন্টু। টাইপোগ্রাফির জন্য আমিনুর রহমান মুকুলও ধন্যবাদ পাবেন।

নাটকের নির্দেশক:
মাত্র আড়াই মাসে এত বড় মঞ্চে এত বড় একটি ক্যানভাসকে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনিপুণভাবে তুলে আনার জন্য নির্দেশক আমিনুর রহমান মুকুল যে কঠোর পরিশ্রম করেছেন, প্রতিটি কলাকুশলী ও আর্টিস্টকে দিয়ে কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলন করিয়ে এত সুন্দর একটি প্রযোজনা উপহার দিয়েছেন, সেজন্য মুকুলকে আমার রেড স্যালুট। এককথায় এক অসাধ্য কর্মযজ্ঞ মুকুল সাধন করেছেন।

নির্দেশনা সহকারী হিসেবে সেলিম হায়দার ও কামরুজ্জামান তাপুকেও আমার মোবারকবাদ। মুকুলকে অত্যন্ত যোগ্য সঙ্গ দেবার কারণেই এত বড় যজ্ঞটি শেষপর্যন্ত সফলভাবে মঞ্চায়ন হয়েছে। সেজন্য এই কৃতিত্ব সেলিম ও তাপু'রও পাওনা। পাশাপাশি নাটকের এত বড় টিমকে যোগ্য সমন্বয়কারী হিসেবে আসাফ-উদ-দৌলা ও কাজী ফয়সল যে কঠোর পরিশ্রম করেছেন, তা নাটকটিকে আলোর পথ দেখাতে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছে। এজন্য আসাফ এবং ফয়সলও ধন্যবাদ পাবেন।

অভিনয়:
এত বড় ক্যানভাসে একজন যোগ্য ও দক্ষ কথক বা সূত্রধরের চরিত্রে আমিনুর রহমান মুকুল অসামান্য দক্ষতা ও অভিনয় কৌশল প্রদর্শন করেছেন। চরিত্রের যে কত রকমের ওঠানামা, কত রকমের সিকোয়েন্সে কত ভিন্ন ভিন্ন স্টাইল, কখনো হাসি, কখনো কান্না, কখনো কণ্ঠের ওঠানামা, কখনো দর্শকের সাথে ইন্টার-অ্যাকটিভ, কখনো স্রেফ নাটকটির নাটাই ধরে রাখা, কত রকমের মুনশিয়ানা যে মুকুল এই নাটকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই হ্যান্ডেল করেছেন, যা এককথায় অবিশ্বাস্য, অসাধারণ, মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ। মুকুলের অভিনয় দক্ষতার কত রকম যে লেয়ার ও সারফেস, এককথায় আমি অভিভূত।

হাইকমান্ড বা রাজাকার শিরোমণি চরিত্রে কাজী ফয়সল এককথায় দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। থিয়েটারে এটাই আমার দেখা ফয়সলের এযাবতকালের সেরা অভিনয়। সাধু সাধু। ডায়লগ থ্রোয়িং, পারফরমেন্স, মঞ্চের এ মাথা থেকে ও মাথা দাপিয়ে বেড়ানো, নির্যাতনের মাত্রাকে এক সুউচ্চ মুনশিয়ানায় ফয়সল এক অনন্য রূপ দিয়েছেন। আমি জাস্ট মুগ্ধ।

সেলিনা পারভীন চরিত্রে জয়িতা মহলানবিশ, মেহেরুন্নেসা চরিত্রে সুরভী রায়, নেতা চরিত্রে দোস্ত মোহাম্মদ নূরী শাহ, ইয়াহিয়া খান চরিত্রে রেজাউল করিম রেজা, জেনারেল টিক্কা খান চরিত্রে ফয়জুর রহমান মিল্টন, জেনারেল রাওফরমান আলী চরিত্রে সেলিম হায়দার, ফুটবল সংগঠক লাড়ু ভাই চরিত্রে শামীম সাগর, মুনীর চৌধুরী চরিত্রে মাহবুব আমীন মিঠু, আলতাফ মাহমুদ চরিত্রে রফিক নটবর, মুহম্মদ আখতার চরিত্রে ফখরুজ্জামান চৌধুরী, ডা. আলীম চৌধুরী চরিত্রে আরিফ খান, ডা. রাব্বী চরিত্রে বাবু, চৌধুরী মঈনুদ্দীন চরিত্রে মেহেদী হাসান, মোফাজ্জ্বল হায়দার চৌধুরী চরিত্রে ইবান রিয়াজ, আলতাফ মাহমুদের মায়ের চরিত্রে মেহেরান সানজানা প্রমুখদের অভিনয় মনে রাখার মত। প্রত্যেকেই সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন চরিত্র রূপায়নে। অন্যান্য চরিত্রগুলো যারা করেছেন এককথায় চমৎকার একটি প্রযোজনা।

মুজিব জন্মশতবর্ষ ও বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ৬৪ জেলার ৬৫টি বধ্যভূমিতে 'গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার' মঞ্চায়ন উদ্যোগটি সত্যি সত্যিই ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। নতুন প্রজন্মের কাছে এই নাটকগুলোর ঐতিহাসিক তাৎপর্য ও গুরুত্বকে আরও সুমহান করবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। ভবিষ্যতে সারা বছর এই নাটকগুলো এভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে বারবার উপস্থাপন করতে পারলেই বরং এই উদ্যোগ আরও সফল হবে বলে আমি মনে করি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.