Sylhet Today 24 PRINT

সফল শিক্ষক, সংগঠক আহমদ হাসান স্যার

ফয়সল আহমদ রুহেল |  ০৭ অক্টোবর, ২০২২

আহমদ হাসান; বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এক ব্যক্তিত্বের নাম। ছাত্রছাত্রীদের কাছে ‘হাসান স্যার’ নামে তিনি পরিচিত ছিলেন। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনীতিতে ছিল নিবিড় সম্পৃক্ততা। ছাত্রজীবনে কলেজের ভিপি ও ছাত্রনেতা ছিলেন। নিজ এলাকায় একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে পরিচিতি ছিল। জীবনের সকল বসন্ত ব্যয় করেছেন জ্ঞান বিতরণের মত মহান কর্মে।

জন্ম
গুণী শিক্ষক আহমদ হাসান ১৯৪১ সালের ৩১ জানুয়ারি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার উত্তর ভাদেশ্বরের করগ্রামে (উত্তরভাগ) জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-মৌলভী সিদ্দিক আলী। মাতা ফাতেমা খানম। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

শিক্ষাজীবন
আহমদ হাসান স্যারের বাবা ছিলেন একজন মাদ্রাসা শিক্ষক। বরমচাল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। আহমদ হাসান বাবার সাথে বরমচাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে বরমচাল হাইস্কুল থেকে এসএসসি (মাধ্যমিক) পাস করেন। ১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা বোর্ড ঢাকার অধীনে এইচএসসি (উচ্চ মাধ্যমিক) পাস করেন।

আহমদ হাসান ১৯৬৪ সালে মদন মোহন কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ব পাকিস্তানের অধীনে বিকম পাস করেন। ওই সময় তিনি কলেজের ভিপি ও ছাত্রনেতা ছিলেন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ময়মনসিংহ থেকে বিকম বিএড করেন। এছাড়া তিনি ১৯৬৯ সালে ন্যাশনাল এন্থেম (জাতীয় সংগীত) ট্রেনিং কোর্স করেন। আহমদ হাসান ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান এক্সাম সেন্টার ঢাকা থেকে গণিতে শর্টকোর্স সম্পন্ন করেন।

চাকুরি
আহমদ হাসান ১৯৬৫ সালে সেন্টেল জৈন্তা এইচ বি হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। এরপর ১৯৬৮ সাল থেকে তার নিজ এলাকা গোলাপগঞ্জ ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন।

আহমদ হাসান ১৯৬৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জুবিলী হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তারপর ১৯৭৩ সালে সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি হন। দীর্ঘদিন সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে ১৯৮৭ সালে জকিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ও ১৯৮৯ সালে জৈন্তা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।

পরে ১৯৮৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন এবং সাফল্যের সাথে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ২৯ জানুয়ারি আহমদ হাসান সরকারি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

দাপ্তরিকভাবে অবসর গ্রহণ করেও তিনি অবসর নিতে পারেননি। সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকার গণ্যমান্য মুরুব্বিদের অনুরোধে তিনি শাহজালাল আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিতে হয়।

২০০০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কর্মরত অবস্থায় আহমদ হাসান স্যার মৃত্যুবরণ করেন।

সাফল্য
আহমদ হাসান স্যার একজন আদর্শ শিক্ষক ছাড়াও ছিলেন একজন ক্রীড়া সংগঠক। তিনি সিলেটের ক্রীড়ার মান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। হকি টিমকে আকর্ষণীয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তুলতে হাসান স্যারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আশির দশকের স্বনামধন্য স্পোর্টস টিচার কাশেম স্যার অবসরে চলে গেলে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়ে যান হাসান স্যার। তার নেতৃত্বে ১৯৮১ সালে সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হকি টিম ঢাকা বিভাগের আরমানিটোলা স্কুলের সাথে ১-০ গোলে পরাজিত হয়ে জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। তবে তার টিম জেলা পর্যায়ের প্রথম ছিল।

সামাজিক কর্মকাণ্ড
আহমদ হাসান ছাত্রজীবনে রাজনীতি, খেলাধুলা ও সংস্কৃতিমনা ছিলেন। তিনি একজন ভাল সংগঠক ছিলেন। তার নিজ এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রয়েছে। যেমন ভাদেশ্বর আব্দুল মতিন মেমোরিয়াল হল এন্ড লাইব্রেরির তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সিলেট সদরেও সামাজিক কর্মকাণ্ডে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। তিনি ‘হাসান স্যার’ নামে সিলেট সদরে পরিচিত। আহমদ হাসান স্যারের নিজস্ব বাসা সিলেট নগরীর রায়নগর, রাজবাড়ী, ১৬ মিতালী আবাসিক এলাকায়। তার প্রচেষ্টায় ওই এলাকায় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও এলাকার জনগণের সহযোগিতায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। যা এখন মিতালী জামে মসজিদ নামে পরিচিত। আহমদ হাসান স্যার মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ওই মসজিদের মোতাওয়াল্লি ছিলেন।

বহু গুণে গুণান্বিত হাসান স্যার দীর্ঘ ৩৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে অগণিত শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের বাতিঘর হয়ে আলো ছড়িয়েছেন। তার শিক্ষার্থীদের অনেকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তার গৌরবময় কীর্তিতে স্মরণ করে অগণন শিক্ষার্থী।

ফয়সল আহমদ রুহেল: সাউথ লন্ডন প্রতিনিধি, চ্যানেল এস টেলিভিশন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.