Sylhet Today 24 PRINT

চলে ওদের সাইকেল

সামিউল্যাহ সমরাট |  ১৩ মার্চ, ২০১৬

কনকনে শীত কিংবা কাঠফাটা রোদ অথবা বৃষ্টি। এসব  কোন বাঁধাই নয়।  থেমে থাকেনা স্কুলে যাওয়া, মিস হয়না কলেজের কোন ক্লাস। পাবলিক যানবাহনের জন্য অপেক্ষা নয়, নেই ‘পাছে লোকে কিছু বলে’র প্রতি তোয়াক্কা।ছেলেদের পাশাপাশি  মেয়েরা বাইসাইকেলে করেই নিজেদের প্রয়োজন সেরে নিচ্ছে । ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সেইসব অদম্য মেয়েদের ছবি তুলেছেন সামিউল্যাহ সমরাট ।





গাঁয়ের একেবারে প্রান্তিক অসচ্ছল পরিবারের মেয়েটিও একটি পুরনো সাইকেলে করে স্কুল, কলেজ,  এমনকি কখনও কখনও বাজার সদাই করে ঘরে ফিরছে। পেছনে ছোট ভাই বা বোনটিকে চড়িয়ে অনায়াসে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি থেকেও বেড়িয়ে আসে ।  
 


কথা  বলেছিলাম লাহিড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর  ছাত্রী আঁখি আক্তারের সাথে। সে  চতুর্থ শ্রেণীতে থাকাকালীনই বাই সাইকেল চালানো শিখে ফেলে । তখন অবশ্য নিজের সাইকেল ছিলনা । ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হবার সময় বাবা তাকে একটি পুরনো সাইকেল কিনে দেন । গত পাঁচ বছর সে বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়া আসা মিলিয়ে  প্রায় সাত কিলোমিটার পথ সাইকেলে করেই পাড়ি দিয়ে আসছে। গ্রামে থেকে তো ভ্যান গাড়ি স্কুল পর্যন্ত যায় তাহলে কেন এভাবে পরিশ্রম করে বাইসাইকেল চালায় একথা জিজ্ঞেস করতেই তার চোখে মুখে আত্মবিশ্বাস ঝলকে উঠল। তার ভাষায় “ভ্যান গাড়ি ৪/৫ জন প্যাসেঞ্জার ছাড়া যেতে চায়না । প্যাসেঞ্জারের জন্য অপেক্ষা করলে তো ক্লাস মিস হয়ে যাবে । বৃষ্টির দিনে ভ্যান পাওয়া যায়না । শীতের সকালেও একই অবস্থা । তাছাড়া প্রতিদিন ভ্যান ভাড়া হিসেবে ৩০/৪০ টাকা খরচ হয়ে যায় । তারচেয়ে একটা সাইকেল থাকলে কারো উপর নির্ভর করতে হয়না। সব কাজ সময় মত করতে পারি । টাকাও বাঁচে।

 আঁখির মত  এরকম আরও অনেকের  একই বক্তব্য। লাহিড়ী ডিগ্রী কলেজের সাবেক ছাত্রী  তাজমিন আক্তার চুমকি জানালেন তিনি  বাড়ি থেকে কলেজে নিয়মিত সাইকেলেই যাতায়াত করতেন।  ডিগ্রী পাশও করেছেন । গ্রামের রক্ষণশীল পরিবেশে এভাবে  বাইরে  সাইকেল চালাতে গিয়ে কোন অসুবিধা হয় কিনা জানতে চাইলে হাসি মুখে বললেন “প্রথম প্রথম  খুব সঙ্কোচ লাগত । আমার কাছে মানুষজন অবশ্য খুব একটা অসুবিধার কারণ ছিলনা । প্রয়োজনটাই যেখানে মুখ্য সেখানে  অন্য কারো কথা শোনার সময় কোথায়। তাছাড়া মেয়েরা যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ চালাচ্ছেন সেখানে এটা তো কোন ব্যাপারই না ” ।

এই অঞ্চলের অনেক অভিভাবকের সাথে কথা হল । তারাও মেয়েদের বাইসাইকেলে করে যাতায়াতকে স্বনির্ভরতার  প্রতিচ্ছবি হিসেবেই উল্লেখ করলেন ।



গাঁয়ের লোকজনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মেয়েদের চলাচলের প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে দিয়েছে বলেই এখানকার মেয়েরা  শিক্ষালাভ করতে পারছে। উচ্চশিক্ষার পথে এগিয়ে যেতে পারছে । কোন প্রকার ভেদাভেদের বালাই না রেখে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও নিজেদের অবস্থান করে নিতে চেষ্টা করছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.