Sylhet Today 24 PRINT

সুসাহিত্যিক ও নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত নূরজাহান বেগম

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৩ মে, ২০১৬

নূরজাহান বেগম বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত এবং সাহিত্যিক। তিনি সওগাত পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিনের কন্যা।

ভারত উপমহাদেশের প্রথম নারী সাপ্তাহিক পত্রিকা "বেগম" পত্রিকার সূচনালগ্ন থেকে এর সম্পাদনার কাজে জড়িত এবং ছয় দশক ধরে বেগম পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন নূরজাহান বেগম। তাঁর ডাক নাম ছিল নূরী।
বাংলাদেশের নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত বেগম পত্রিকার সম্পাদক, সাহিত্যিক নূরজাহান বেগমের আজ ২৩ মে মৃত্যুবরণ করেছেন।

নূরজাহান বেগম ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুরের চালিতাতলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন ছিলেন 'মাসিক সওগাত' এবং 'সাপ্তাহিক বেগম' পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং মা ফাতেমা খাতুন ছিলেন গৃহিনী। তাঁর বাবার আদি নিবাস ছিলো কুমিল্লা জেলার (তৎকালীন ত্রিপুরা) চাঁদপুর মহকুমার অন্তর্গত পাইকারদী গ্রামে। এই গ্রামটি অনেক বছর আগে মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

নূরজাহান বেগমের দাদার নাম আব্দুর রহমান, দাদীর নাম আমেনা বিবি। নূরজাহান বেগমের শৈশব কেটেছে গ্রামের বাড়িতে মা, মামা, দাদী, নানীর সঙ্গে। ছোটবেলায় তিনি ছিলেন খুবই চঞ্চল। তাঁকে সামাল দিতে মা, চাচা, চাচী, মামা, দাদী, নানা, নানিকে হিমশিম খেতে হতো। গ্রামে থাকার সময়ে নূরজাহান বেগম খালের পানিতে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটান। তাই তার পরিবার গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯২৯ সালে সাড়ে তিন বছর বয়সে মা আর মামা ইয়াকুব আলী শেখের সঙ্গে তিনি কলকাতায় বাবার বাসায় চলে যান। বাবা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন থাকতেন কলকাতায় ১১ নং ওয়েলেসলি স্ট্রিটের একটি দোতলা বাড়িতে। দোতলার একদিকে ছিল তাঁর সওগাত পত্রিকার অফিস। নিচতলায় ছিল প্রেস 'ক্যালকাটা আর্ট প্রিন্টার্স' আর অন্যদিকে থাকা খাওয়ার ঘর।

সওগাত পত্রিকা অফিসে নিয়মিত সাহিত্য মজলিস বসত যেখানে যোগ দিতেন কাজী নজরুল ইসলাম, খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ, আবুল কালাম শামসুদ্দিন, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, হবীবুল্লাহ বাহার, ইব্রাহীম খাঁ, কাজী মোতাহার হোসেন প্রমুখ৷ এই সাহিত্য মজলিসের নিয়মিত শ্রোতা ছিলেন নূরজাহান।

নূরজাহান বেগমের লেখাপড়ার প্রথম হাতেখড়ি হয় মায়ের হাতে। একদিন মা কন্যার হাত ধরে নতুন স্লেটের ওপর পেন্সিল দিয়ে লিখলেন ''অ আ ই ঈ''। মায়ের হাত ধরে এভাবেই নূরী আদর্শলিপি লিখতে শুরু করল। একই দিনে বাবাও তাঁকে আরবি পড়ার হাতে খড়ি দিলেন। শেখালেন ''আলিফ বে তে সে''। সেই সঙ্গে ইংরেজি ''এ বি সি ডি''।

অবসর সময়ে মা নূরীকে কবিতা, ছড়া, আরবি সুরা শেখান। নূরী পরম আগ্রহে সব শিখে নেয়। নূরজাহান বেগমের প্রথম স্কুল ছিল সাখাওয়াত মেমোরিয়াল বিদ্যালয়। তাঁর দ্বিতীয় স্কুল বেলতলা উচ্চ যেখানে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। এখানে তিনি চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর পঞ্চম শ্রেণীতে আবার আগের বিদ্যালয় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল বিদ্যালয় ভর্তি হন যা অবস্থিত ছিল ১৭নং লর্ড সিনহা রোডের তিনতলা ভবনে।

অষ্টম শ্রেণী থেকে ম্যাট্রিক পর্যন্ত তিনি ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা করে ১৯৪২ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তারপর আই এ ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ণ কলেজে। তাঁর আই এ তে পড়ার বিষয় ছিল দর্শন, ইতিহাস ও ভূগোল। এখানে তাঁর সহপাঠী ছিল সাবেরা আহসান ডলি, রোকেয়া রহমান কবির, সেবতি সরকার, জ্যোৎস্না দাশগুপ্ত, বিজলি নাগ, কামেলা খান মজলিশ, হোসনে আরা রশীদ, হাজেরা মাহমুদ, জাহানারা ইমাম।

পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি কলেজে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। লেডি ব্রেবোর্ণ থেকে ১৯৪৪ সালে আই এ পাশ করে বি এতে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে তিনি ১৯৪৬ সালে বি এ ডিগ্রি লাভ করেন।

নারীর অবস্থার উন্নয়ন ও সাহিত্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য নূরজাহান বেগম বহু পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৯৭ সালে তিনি রোকেয়া পদক পান।

এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন থেকে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। নূরজাহান বেগমের বাবা সাংবাদিকতার প্রবাদপুরুষ 'সওগাত' সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন।

তাঁর স্বামী দৈনিক ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার মেলার সাবেক পরিচালক, প্রয়াত সাংবাদিক রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাই। তিনি দুই কন্যা সন্তানের জননী।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.