Sylhet Today 24 PRINT

‘আই এম হাংরি, প্লিজ গিভ মি ওয়ান পাউন্ড’

দেবব্রত চৌধুরী লিটন |  ২৩ মে, ২০১৬

'প্লিজ গিভ মি ওয়ান পাউন্ড', ' লন্ডনি ছাব, আই এম হাংরি, প্লিজ গিভ মি ওয়ান পাউন্ড'- বলতে বলতে তিনি হাত বাড়িয়ে দেন রাস্তায় চলাচলকারী মানুষের দিকে। কখনো এই আবেদন নিয়ে চলন্ত গাড়ির দিকে দৌঁড় দেন। গাড়ির গ্লাসে ঠুকা দিতে দিতে বলেন- 'প্লিজ গিভ মি ওয়ান পাউন্ড'।

তাঁর নাম নুরজাহান বেগম। সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় ভিক্ষা করেন তিনি। তবে তাঁর ভিক্ষা চাওয়ার কৌশল অন্য ভিক্ষুকদের মতো নয়। ব্যক্তিক্রমিভাবে ভিক্ষা চাওয়ার জন্য নগরীর বেশিরভাগ মানুষের কাছেই পরিচিত প্রায় পঁচাত্তর বছর বয়সী এই বৃদ্ধা।

আরও পড়ুন - মানুষ বিক্রির দলিল!

সিলেট প্রবাসীবহুল অঞ্চল। প্রবাসীদের বেশিরভাগই যুক্তরাজ্যের লন্ডনের বাসিন্দা। সিলেটে এরা 'লন্ডনী' নামে পরিচিত। আদতে সিলেটে সকল প্রবাসীরাই 'লন্ডনী' নামে পরিচিত, তা যে দেশেই তারা থাকুন না কেনো। সারাবছরই শহর সিলেটে লেগে থাকে এই 'লন্ডনী'দের আনাগোনা। আর সিলেট শহরের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হলো জিন্দাবাজার। ফলে প্রবাসীরা সিলেট আসলে জিন্দাবাজার আসতেই হয়।

নুরজাহান বেগমের টার্গেট এই 'লন্ডনী'রাই। সকাল থেকে জিন্দাবাজার এলাকায় অবস্থান নেন তিনি। আর পোষাক-আসাক, চেহারা কিংবা কথা বলার স্টাইলে কাউকে 'লন্ডনী' মনে হলেই নুরজাহান বেগম দৌঁড় দেন তাঁর দিকে। তারপর সেই আবদার, 'প্লিজ গিভ মি ওয়ান পাউন্ড', ‌'লন্ডনী ছাব, আই এম হাংরি, প্লিজ গিভ মি ওয়ান পাউন্ড'।

তাঁর ভিক্ষার চাওয়ার এই অভিনব কৌশলের কারণে অনেকেই খুশি হয়ে টাকা পয়সা দিয়ে যান। প্রবাসীদের কেউ কেউ উপহারও দেন নুরজাহান বেগমকে। আবার পথচারীদের অনেকেও তাঁর সাথে যেচে গিয়ে কথা বলেন।

 নুরজাহান বেগম বলেন, আমি যখন ভিক্ষা করা শুরু করি তখন আরো অনেক ভিক্ষুকের কারণে টাকা পয়সা কম মিলতো। তখন প্রবাসীদের কয়েকজনই আমাকে ‌'গিভ মি ওয়ান পাউন্ড' কথা শিখিয়েছে। এমন করে ভিক্ষা চাওয়ার ফলে আয় রােজগার আগের থেকে বেড়েছে। অনেকে খুশি হয়ে, কেউ কেউ মজা পেয়েও টাকা পয়সা দিয়ে যায়- বলেন নুরজাহান।

স্যরি, থ্যাংকইউ-এর মতো ইংরেজি শব্দও জানেন নুরজাহান।

সোমবার বিকেলে জিন্দাবাজার এলাকায়ই কথা হয় নুরজাহান বেগমের সাথে। তিনি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, 'অখন লন্ডনীরা দেশো কম আইন (আসেন), এরলাগি (এইজন্যে) ভিক্ষাও কম মিলে। বয়সের কারণে খুব বেশি দৌড়াতেও পারি না।

রোববার ছিলো শবে বরাত। শবে বরাতের রাতে কেমন আয় হয়েছে জানতে চাইলে নুরজাহান বলেন, 'ঠেলাঠেলির লাগি শাহজালালের দরগাহতে গেছিনা। তাছাড়া শবে বরাতের রাতে দরগাতে সিজনাল ভিক্ষুক বাড়ি যায়। এতে করে সারা রাত বসে থাকলেও তেমন লাভ হয় না।'

নুরজাহান বলেন, জিন্দাবাজার এলাকায় নগরীর অন্যান্য স্থানের চেয়ে ভিক্ষুকের পরিমাণ বেশি থাকায় আগের চেয়ে আয় রোজকার কমে গেছে।

কথা প্রসঙ্গে নুরজাহান বলেন, 'বেটিইনতে (মহিলারা) বাইচ্চাইন ছাড়ি দেয় ভিক্ষা করাত। ইতা বাচ্চাইন্তে মানুষরে পায়ে ধরি বইথাকে, মানুষে তারারে ভিক্ষা দিব না আমারে ভিক্ষা দিব।'



জানা যায়, নুরজাহানের স্বামীর বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার দয়ামির এলাকায়। বাবার বাড়ি হবিগঞ্জের কোছারখলায়। স্বামী, ৩ ছেলে ও নাতনী নিয়ে তাঁর সংসার। নগরীর বাদাম বাগিচা এলাকায় ২ হাজার টাকা ভাড়ার একটি বাসায় বসবাস করেন। নুরজাহানের বড় ছেলে মৃগী রোগে আক্রান্ত। শরীর ভাল থাকলে মাঝেমধ্যে রিকশা চালায় সে। মেঝো ছেলেও রিকশা চালায়। তবে স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা বাসায় থাকে সে। আর ছোট ছেলে একটি চাকরি করে। ছোট ছেলের জন্য বউ খুঁজছেন বলে জানান নুরজাহান।

সোমবার বিকেলে পশ্চিম জিন্দাবাজার এলাকায় কথা হয় তাঁর সাথে। কথা বলার ফুসরত নেই তাঁর। কথা শেষ না করে লোকজন দেখলেই বগলের থলে নিয়ে দৌড় দেন। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে আসেন। এভাবেই চলে গল্প।

কথা শেষ করে ছবি তুলতে গেলে নুরজাহান বেগম বাধা দিয়ে বলেন, 'বাবা ফেইসবুকে ছবি ছাড়িও না।'

এই ভিক্ষা করার টাকায় চলে তার স্বামী-ছেলের চিকিৎসাসহ পরিবারের ভরণ পোষন। স্বামী লেবু মিয়া আগে রিক্সা চালাতেন। বাত রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি এখন আর রিক্সা চালাতে পারেন না। অসুস্থ হয়ে তাকে ঘরেই পরে থাকতে হয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.