Sylhet Today 24 PRINT

কোথায় যায় করের টাকা?

দ্বোহা চৌধুরী |  ০৬ জুন, ২০১৬

খুব সহজ একটি প্রশ্ন, যে কোনো ট্যাক্সদাতা মাত্রই করতে পারেন। “আমার দেয়া ট্যাক্সের টাকা কোথায় যায়?” এর উত্তরটা কিন্তু বেশ গোলমেলে। আসলেই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ দুটো উপায় মিলিয়েই দেশের প্রতিটি মানুষ ট্যাক্স বা কর প্রদান করেন। আর এ ক্ষেত্রে “যেহেতু আমি কর দেই, আমি জানতে চাইতেই পারি, আমার টাকা কোথায় যায়?”

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের অর্থবাজেট। ৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার এ বাজেটকে অনেকে উচ্চাভিলাসী বললেও, একটি সহজ প্রশ্নের জবাব জানার প্রয়াস রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে, আর তা হলো আমার দেয়া করের টাকা কোথায় যাচ্ছে? প্রতিবারের মত এবারও বেড়েছে প্রদেয় করের পরিমাণ, তবে সে তুলনায় সাধারণ মানুষের সুযোগ সুবিধা কতটুকু দিবে সরকার, তা একটি গবেষণার বিষয়।

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো একটি ইনফোগ্রাফিকের মাধ্যমে বেশ সহজভাবেই একটি হিসাব প্রদান করেছে এ প্রশ্নের উত্তরে। প্রতি ১০০ টাকা প্রদেয় ট্যাক্সের কত টাকা কোন খাতে যাচ্ছে, তা বেশ সহজেই বোঝা যায় ইনফোগ্রাফিকটির মাধ্যমে। নতুন বাজেটের প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের দেয়া করের টাকা কোন খাতে খরচ হবে, তার একটা হিসেব দেয়া হয়েছে এ ইনফোগ্রাফিকে।

এ ইনফোগ্রাফিকের তথ্যমতে, প্রতি ১০০ টাকা ট্যাক্সের ২২.২ শতাংশ টাকা যাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা খাতে। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকা করের ২২.২ টাকা যাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতনের পেছনে, আর এটিই করের টাকার সর্বোচ্চ হারের খরচ।

এর পরেই রয়েছে সুদ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও রাষ্ট্র থেকে ঋণ হিসেবে গৃহিত টাকা এবং সরকারি বিভিন্ন ব্যাংকিং খাতে জনগণের গচ্ছিত টাকার বিপরীতে প্রদেয় সুদ দেয়া হয় সাধারণ মানুষের দেয়া করের টাকা থেকে। আর এর পরিমাণ প্রতি ১০০ টাকায় ১৭.৫ টাকা। তার পরের খাত হিসেবে রয়েছে সাহায্য ও মঞ্জুরী খাত। এ খাতে প্রতি ১০০ টাকা করে ১৭.৮ টাকা ব্যয় হবে।

তার পরবর্তী খাত হিসেবে পণ্য ও সেবা খাতে খরচ হবে ৯.১০ টাকা, ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে ৭.৮ টাকা, অনুন্নয়ন বিনিয়োগে ৭.৬ টাকা, পেনশন খাতে ৭.৪ টাকা, সম্পদ সংগ্রহে ৪.৩ টাকা, বিবিধ ব্যয় ৫.৩ টাকা এবং অপ্রকাশিত ব্যয় হবে ১ টাকা।

তুলনামূলক বিচার করতে গেলে, অবশ্যই এ হিসেবকে বিশ্বের অন্য দুয়েকটি দেশের বাজেটের ও করের টাকা খরচের হিসেবের সাথে তুলনা করতেই হবে। আর এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রথমেই তুলনা করাটা সমীচীন। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বিত্তশালী দেশগুলোর একটি, তাছাড়া যুদ্ধবাজ জাতি হিসেবেও পরিচিত দেশটি কতটুকু কল্যানমুখী, তাও একটি বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত। আধুনিক পুঁজিবাদী অর্থনীতির আরেক নাম কল্যানমুখী অর্থনীতি বলা হয়, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ধরা হয় এর একটি অন্যতম উদাহরণ হিসেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল প্রায়োরিটিজ সংগঠনও ২০১৫ সালে একটি ইনফোগ্রাফিক প্রকাশ করেছিলো, প্রতি ১ ডলার ট্যাক্সের টাকা কোন কোন খাতে খরচ হয়। আর এ ইনফোগ্রাফিকের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে সামরিক খাত, যে খাতে করের সর্বোচ্চ পরিমাণ ২৭% অর্থাৎ প্রতি ডলারে ২৭ সেন্ট খরচ হয় (নিরাপত্তার জন্য নাকি অন্য দেশে আক্রমণ পরিচালনার জন্য, তা জানা নেই)।

তার পরের খাত হিসেবে অবশ্য কল্যানমুখী একটি খাত রয়েছে, যা হচ্ছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সেবা। দেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার দিকেও গুরুত্ব দিতে সামরিক খাতে খরচে প্রায় কাছাকাটি অর্থাৎ ২৬.৫ % খরচ করছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

স্বাস্থ্য খাতের পরেই ফেডারেল ডেট বা দায় (বিভিন্ন কারণে রাষ্ট্রের উপর কিছু দায় ন্যস্ত হয়, ক্ষেত্রবিশেষে এটি সাধারণ জনগণের টাকার কারণে বা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে গৃহিত ঋণের কারণে)। এ খাতে ব্যয় হয় ১৫.৩ % অর্থাৎ প্রতি ডলারে ১৫.৩ সেন্ট।

সামাজিক নিরাপত্তা, বেকার ভাতা ও শ্রম খাতে যুক্তরাষ্ট্রে জনগণের করের টাকার ৮.৪% ব্যয় হয়। যেটি যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ বড় ব্যয় খাত। এর পরের খাতটি হচ্ছে ভেটেরানস বেনেফিট। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত, শারিরীকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ (মিলিটারী ক্ষেত্রেও) ব্যক্তিদের মধ্যে প্রদেয় সহযোগিতার এ খাতে যুক্তরাষ্ট্র ব্যয় করে ৫.৮ শতাংশ, বা ডলারে ৫.৮ সেন্ট।

খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের করের টাকার ৫% ব্যয় হয়। সরকার পরিচালনার ব্যয় ৩.৪% ব্যয় করে, যেটি বৃহত্তম ও সুপ্রাচীন গণতান্ত্রিক এ দেশটির ট্যাক্স বা করের আয় থেকে ব্যয়ের একটি অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয় মাত্র ২.৫ শতাংশ বা প্রতি ডলারে ২.৫ সেন্ট।

এছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১.৯%, শক্তি ও পরিবেশ খাতে ১.৬%, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষায় ১.৫%, বিজ্ঞান গবেষণায় ১.১% এবং আবাসন খাতে .১% ব্যয় করা হয়।

সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দুরে রেখে এবার যদি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ এবং বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের দিকে নজর দেই, তাহলে দেখবো প্রায় বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের মতই একটি চিত্র। তবে এক্ষেত্রেও রয়েছে ব্যপক পার্থক্য।

ভারতীয়দের ট্যাক্সের টাকা কোন কোন খাতে খরচ হচ্ছে, তার একটি ইনফোগ্রাফিক তৈরি করেছে সংবাদ সংস্থা এনডিটিভি। এর মাধ্যমে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একজন ভারতীয় নাগরিকের দেয়া ১০০ রূপী ট্যাক্সের বা করের টাকা কোন খাতে খরচ হচ্ছে, তা সহজেই জেনে নেয়া যায়।

ভারতে ট্যাক্সের টাকা খরচের সবচেয়ে বড় খাতটি হচ্ছে অঙ্গরাজ্যসমূহকে ট্যাক্সের প্রদান করা অংশ। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, ট্যাক্সের ২৩% টাকা অঙ্গরাজ্যসমূহকে প্রদান করে। তার ঠিক পরেই বড় খরচের খাত সুদ প্রদানে। বিভিন্ন উৎস থেকে গৃহিত ঋণের সুদ হিসেবে ভারত খরচ করে প্রাপ্ত করের ২০ শতাংশ, বা প্রতি ১০০ রূপীতে ১০ রূপী।

বড় দুটি খাতের পরেই রয়েছে আরো তিনটি সমান গুরুত্বপূর্ণ খাত। এগুলো হলো নিরাপত্তা, কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা এবং অন্যান্য অপরিকল্পিত ব্যয়। এ তিনটি খাতেই ১১ শতাংশ হারে খরচ করের টাকা খরচ করে ভারতীয় সরকার।

ভর্তুকির পেছনে ভারত সরকারের ব্যয় হয় ১০ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি শত রূপীতে ১০ রূপী। এছাড়াও রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যসমূহের পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত সহায়তা ও অন্যান্য কারণে খরচ হয় ১৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। তিনটিই গণতান্ত্রিক সরকার। তিনটি দেশের বাজেটই কল্যাণমুখী ও জনগণের জন্য বলে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ আয়ের উন্নত দেশ, ভারত উন্নয়নশীল দেশ, এবং বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.