Sylhet Today 24 PRINT

বিশ্বনাথের \'বৃক্ষপ্রেমিক\' উমর মিয়ার গাছের রাজ্য

জাহাঙ্গীর আলম খায়ের, বিশ্বনাথ  |  ০৩ নভেম্বর, ২০১৬

গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত আব্দুল গাফফার উমরা মিয়া

নানারকম শখ থাকে মানুষের। কেউ পাখি ভালোবাসেন, কেউ গান গাইতে বা শুনতে, কেউ ঘুরে বেড়াতে। কেউ সংগ্রহ করেন জীববৈচিত্রের নানা উপকরণ। তেমনি সত্তরোর্ধ আব্দুল গাফফার উমরা মিয়ার শখ হচ্ছে গাছ লাগানো।

স্কুল জীবন থেকে গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন উমরা মিয়া। বৃক্ষের প্রতি অসীম ভালোবাসার ফলে মানুষের কাছে তিনি 'বৃক্ষপ্রেমিক' নামে পরিচিত। দৈনন্দিন জীবনে প্রাচীন আমলের গাছ-গাছড়াকেই তিনি আসবাবপত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। দুর্লভ সব বৃক্ষরাজি আর ফুলে ফুলে সাজানো রয়েছে তার বাড়িটি। প্রকৃতির রুপবৈচিত্রে সাজানো তার ওই বাড়িতে প্রতিদিনই আগন্তুকদের ভিড় লেগে থাকে। ওই বাড়িতে পদার্পন ঘটেছে দেশী-বিদেশী খ্যাতিমান ব্যক্তিদেরও।

উমরা মিয়ার সংগ্রহশালা দেখছেন এক দর্শনার্থী

প্রকৃতিপ্রেমী উমরা মিয়ার বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সদর ইউনিয়নের তাতীকোণা গ্রামে। ব্যক্তিজীবনে দু’সন্তানের জনক উমরা মিয়ার পিতা মৃত হাজী আব্দুল আজিজ সৈয়দ মিয়া এবং মৃত মরহুমা নুরজাহান বেগম। পেশায় একজন ব্যবসায়ী হলেও ১৯৭৫ সাল থেকে সিলেটের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক, স্কুল ও কলেজে নিজ ব্যয়ে রোপন করে চলেছেন অসংখ্য গাছ। আর বাড়িতে গড়ে তুলেছেন দুর্লভ সব বৃক্ষরাজির এক সংগ্রহশালা। বাড়ির প্রবেশ পথ থেকে বসত ঘরের ছাদ পর্যন্ত বিভিন্ন বিরল প্রজাতির গাছ-গাছালি এমনভাবে লাগিয়ে রেখেছেন, যেন গাছের জাদুঘর। সেখানে শোভা পাচ্ছে স্প্রে-ঝাউ, লেমন গাছ, গুরু-চন্দন, সেত-চন্দন, হলুদ গোলাপ, ইন্ডিয়ান ঝুরুন্ডা, ব্লিডিংহার্ট, ড্রাগন, ইপোর্কিয়া, নলীনি, এডোনিয়াম, অলকচুসহ দুর্লভ অনেক গাছ। তাঁর সংগ্রহশালায় রয়েছে হাল আমলের মহিষের শিং, প্রাচীন আমলের বৃক্ষের তৈরী চেয়ার-টেবিল, কুমির সদৃশ কাঠের সোফা, হেলান চেয়ার, হুক্কা, তছবিহ, খড়ম, তরবারী, শামুক, ঝিনুকের খোলস সহ আগেকার দিনের দিকদর্শন যন্ত্র।

বাংলাদেশ বনবিভাগের উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তারা ছাড়াও ২০০৭ সালে উমরা মিয়ার ওই বাড়িটি পরিদর্শন করেছেন সিলেটের শেকড় সন্ধানী গবেষক সৈয়দ মোস্তফা কামাল। এর আগে ১৯৯০ সালের ২৩ ডিসেম্বর বাড়িটি পরিদর্শন করেন তৎকালীন ব্রিটিশ সংসদীয় দলের নেতা মিষ্টার নরম্যান ও অ্যামেরিকান ম্যাডিকেল ডাইরেক্টর মিষ্টার রায়মন্ড ফিলিপস্।

কথা হয় বৃক্ষপ্রেমিক উমরা মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি নিঃসার্থভাবে নিজ খরচে বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে যৌতুকবিহীন বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন করে যাচ্ছি। ১৯৭৬ সালে হাইস্কুলে থাকাকালীন সময়ে সিলেটের প্রথম বেসরকারি নার্সারি ‘ইসলামপুর পল্লীশ্রী নার্সারী’ গড়ে তুলি। আমার একান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সিলেটের নুরজাহান হোটেলের ৪র্থ তলায় ফুটেছিল বিরল প্রজাতির ‘নাইট কুইন’ ফুল।

বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল হক সিলেটটুডে টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উমরা মিয়ার লাগানো গাছ-গাছালি আমার কলেজের পরিবেশকেই বদলে দিয়েছে। শুধু এই কলেজেই নয়, তাঁর লাগানো গাছ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাটে শোভা পাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি-কর্মকর্তা আলী নুর হোসেন সিলেটটুডে টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা তাঁকে বৃক্ষপ্রেমিক হিসেবেই চিনি। তিনি দেশ ও দশের কল্যাণে এক নিবেদিত প্রাণ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.