Sylhet Today 24 PRINT

মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৮৬তম জন্মদিন আজ

সিলেটটুডে ডেস্ক  |  ০৬ এপ্রিল, ২০১৭

রুপালি পর্দার কিংবদন্তি নায়িকার নাম সুচিত্রা সেন। একাধিক প্রজন্ম তার ছবির ভক্ত। সবার কাছেই তিনি মহানায়িকা। দুনিয়াজুড়ে ভক্তকুল তার। আজ ৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার স্বপ্নের সেই মহানায়িকার ৮৬তম জন্মদিন।

১৯৩১ সালে বাংলাদেশের পাবনা জেলায় তার জন্ম। নিতান্ত ছেলেবেলা থেকেই অভিনয় এবং সংগীতের প্রতি একটা আলাদা টান ছিলো সুচিত্রা সেনের। তার আসল নাম ‘রমা’। চলচ্চিত্রে ছিলেন মাত্র ২৬টি বছর। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের গৌরব সুচিত্রা সেন।

যুগ যুগ ধরে সুচিত্রা সেন কোটি দর্শককে আচ্ছন্ন করে রেখেছেন। চোখের চাহনিই যথেষ্ট ছিল। ১৯৫০ এর দশক থেকে প্রায় ২৫ বছর কোটি বাঙালির হৃদয়ে ঝড় তুলে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন পর্দার অন্তরালে। ১৯৭৮ থেকে ২০১৪- প্রায় তিনটি যুগ ঠিক কোন অভিমানে এ বাংলার মেয়ে সুচিত্রা নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন- শেষ পর্যন্ত তা হয়তো অজানাই থেকে গেছে।

রমা বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তান এবং তৃতীয় কন্যা। বাবা-মা, এক ভাই ও তিন বোনকে সাথে নিয়ে রমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের বাড়িতে। পাবনাতেই তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদীক্ষা শুরু হয়। পাবনা মহাখালী পাঠশালায় শুরু এবং পরবর্তীতে পাবনা গার্লস স্কুলে ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৪৭ সালে দিবানাথ সেনের সঙ্গে সাতপাকে বাধা পড়েন সুচিত্রা। শ্বশুরবাড়ি ঢাকার গেণ্ডারিয়ায়। গেণ্ডারিয়া শুধু সুচিত্রা সেনের শ্বশুরবাড়িই নয়, সেখানে তাঁর দাদাশ্বশুরের নামে একটি সড়কের নামকরণ হয়েছে দীননাথ সেন রোড।

১৬ বছরের দাম্পত্যজীবন শেষে সুচিত্রা সেন ও দিবানাথ সেন আলাদা হয়ে যান। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার সময় তিনি অজয় করের বিখ্যাত ছবি `সাত পাকে বাঁধা` করেছিলেন। সংসারে খুনসুটি, বনিবনা না হওয়া কিংবা স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ নিয়ে `সাত পাকে বাঁধা`র মূল কাহিনী। বাসায় স্বামী দিবানাথ সেনের সঙ্গে ঝগড়া করে এসে শুটিংয়ে নায়ক সৌমিত্রের শার্ট ছিঁড়তে হয়েছিল সুচিত্রা সেনকে, এ যেন বাস্তব জীবনেরই গল্প।

সুচিত্রার সংসারজীবনের শুরুতে গেণ্ডারিয়ার বাড়ি ছেড়ে সেন পরিবারটি কলকাতার বালিগঞ্জে স্থায়ী হয়ে গিয়েছিল। দেশভাগের রাজনীতির কারণে তার পরিবার কলকাতায় স্থায়ী হয় এবং কলকাতার চলচ্চিত্রে তার ক্যারিয়ার শুরু হয়। তার প্রথম চলচ্চিত্র `শেষ কোথায়` কখনও মুক্তি পায়নি। তার চতুর্থ চলচ্চিত্র `সাড়ে চুয়াত্তর` (১৯৫৩) সুপারহিট হয়। এই চলচ্চিত্র থেকেই উত্তম কুমারের সঙ্গে তার জুটি স্থায়ী হয়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে তিনি বাংলা ও হিন্দি মিলে ৬২টি ছবিতে অভিনয় করেন। এর মধ্যে ৮টি চলচ্চিত্র হিন্দি ভাষায় নির্মিত, বাকি সবই বাংলা ভাষার।

পঞ্চাশের দশককে বলা হয় ভারতীয় চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগ। কারণ বম্বেতে এই সময়েই বিমল রায়, রাজ কাপুর, গুরু দত্তরা তাদের সেরা চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণ করেছেন বা অভিনয় করেছেন। আর কলকাতায় এই সময়েই নির্মিত হয়েছে সত্যজিতের `অপুত্রয়ী` কিংবা `জলসাঘর`। ঋত্বিক ঘটক এবং মৃণাল সেনও এই দশকেই চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করে দেন। পাশাপাশি এইসময়েই নির্মিত হয়েছে উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত জনপ্রিয় সব চলচ্চিত্র।

সুচিত্রা সেনের সেরা চলচ্চিত্রগুলোর পরিচালক ছিলেন অসিত সেন (`দীপ জ্বেলে যাই`, `উত্তর ফাল্গুনী`) এবং অজয় কর (`সপ্তপদী`, `হারানো সুর`)। `দীপ জ্বেলে যাই` চলচ্চিত্রটি অসিত সেন ১০ বছর পরে হিন্দিতে `খামোশি` নামে নির্মাণ করেন যেখানে সুচিত্রার চরিত্রে অভিনয় করেন বৈজয়ন্তীমালা। এছাড়া অগ্রদূত, যাত্রিক, নির্মল দে প্রমুখের চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন।

`সাড়ে চুয়াত্তর`-এর রমলা, `সাগরিকা`র সাগরিকা, `হারানো সুর`-এর রমা ব্যানার্জি, `পথে হলো দেরি`র মল্লিকা, `রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত`-র রাজলক্ষ্মী, `দীপ জ্বেলে যাই`-এর রাধা, `সপ্তপদী`র রিনা ব্রাউন, `উত্তর ফাল্গুনী`র পান্না বাঈ প্রমুখ চরিত্র দর্শকের মনে স্থায়ী হয়ে আছে, সেসব চরিত্রে সুচিত্রা সেন অভিনয় করেছেন বলেই।

সুচিত্রা সেন বম্বেতে ৮টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এরমধ্যে অন্যতম হলো `দেবদাস`। বাংলায় প্রমথেস বড়ুয়ার `দেবদাস` নির্মিত হওয়ার পর আরেক নামী বাঙালি পরিচালক বিমল রায় হিন্দিতে `দেবদাস` চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। এখানে সুচিত্রা পার্বতীর ভূমিকায় আর দিলীপ কুমার দেবদাসের ভূমিকায় অভিনয় করেন। সুচিত্রা-অভিনীত আরেকটি বিখ্যাত হিন্দি চলচ্চিত্র হলো গুলজার পরিচালিত `আঁধি`, যাতে সুচিত্রা অভিনীত চরিত্রটিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছায়া ছিল। হৃষিকেষ মুখার্জির `মুসাফির` আরেকটি উল্লেখযোগ্য হিন্দি চলচ্চিত্র।

সুচিত্রা সেন হলেন প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী যিনি আন্তর্জাতিক কোনো চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পান সেরা অভিনেত্রী হিসেবে। ১৯৬৩ সালে `সাত পাকে বাঁধা` চলচ্চিত্রের জন্য তিনি এই পুরস্কার পান, মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। এছাড়া তিনি ভারত সরকারের পদ্মশ্রী পুরস্কার পান ১৯৭২ সালে এবং ২০১২ সালে পান পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পুরস্কার বঙ্গবিভূষণ পদক। ২০০৫ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন, কিন্তু পুরস্কার নিতে নিভৃতবাস ছেড়ে দিল্লি যেতে হবে এই কারণে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

এদিকে সুচিত্রা সেনের জন্মদিন উপলক্ষে পাবনা জেলা প্রশাসন, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংসদ, পাবনা টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিক সমিতি, পাবনা ড্রামা সার্কেল, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন  জন্মদিনের কেক কাটা এবং আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জন্মদিন উপলক্ষে পাবনা শহরের গোপালপুর সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.