Sylhet Today 24 PRINT

নদীতে বড়শির পসরা বসিয়ে মাছ ধরেন গ্রামের নারীরা

শাকিলা ববি, হবিগঞ্জ |  ১০ এপ্রিল, ২০১৭

টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নদী, জলাশয়গুলো এখন পানিতে ভরপুর। তাই নদী জলাশয়ে বেড়ে গেছে বড়শি দিয়ে মাছ শিকারিদের আনাগোনা। শখে বা প্রয়োজনে, সাধারণত মাছ শিকার পুরুষরাই করে থাকেন। তবে একটু ব্যতিক্রম দৃশ্য দেখা গেল হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নের ঝনঝইন্না নদীর পাড়ে।

কয়েকজন বয়স্ক মহিলা ঝনঝইন্না নদীতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছেন। তারা প্রত্যেকেই ৭ থেকে ৮ টা বড়শি পেতে নদীর পাড়ে বসে আছেন।

তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঝনঝইন্না নদীর পাশে অবস্থিত গোয়লনগর গ্রামের বাসিন্দা তারা। পরিবারে বয়োজ্যেষ্ঠ হওয়ায় সারাদিন বসে থাকা ছাড়া বাড়িতে কোনো কাজ নেই তাদের। তাই অনেকটা শখে এবং প্রতিদিনের খাবারে মাছের চাহিদা মেটাতেই তারা মাছ ধরতে আসেন। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই নদীতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন তারা। মাছ ধরার সরঞ্জামাদির পাশাপাশি তারা সাথে নিয়ে আসেন পান। সারাদিন পান চিবিয়ে গল্প করে বেলা শেষে বিভিন্ন ধরণের মাছ নিয়ে বাড়ি ফেরেন তারা।

মাছে-ভাতে বাঙালি জাতির ৬০ শতাংশ প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করে মাছ। বয়োজ্যেষ্ঠ এই নারীরা ঝনঝইন্না নদী থেকে পুটি, টাকি, শিং, কৈ সহ বিভিন্ন দেশীয় মাছ ধরেন বড়শি দিয়ে ।

যদিও শখের বশেই মানুষ বড়শি দিয়ে মাছ ধরে, কিন্তু অনেকের কাছেই এই মাছ ধরার উপভোগ্যতা নেশার মত কাজ করে।

এমনই একজন মাছ শিকারি ঝনঝইন্না নদীর পাশে অবস্থিত গোয়ালনগরের জরিনা খাতুন। তিনি বলেন, ছোটবেলায় বড়শি দিয়ে মাছ ধরা তার নেশা ছিল। ছোট ভাইদের সাথে নদীতে মাছ ধরতেন। কিন্তু বিয়ের পর আর এ কাজ করার সুযোগ হয়নি তার। এখন ছেলেদের বউ ঘরের সব কাজ করে তাই সারাদিনই অবসর সময় পার করেন। তাই গত ৪/ ৫ বছর যাবত ছোটবেলার মতো আবারো মাছ ধরার নেশা চাপে তার। তাই বর্ষার সময় এলেই নদীতে বড়শি পেতে বসেন।

মাছ শিকারি জয়তুন বিবি বললেন ভিন্ন কথা, সন্তানাদি ও নাতি-নাতনী নিয়ে ১০ সদস্যের পরিবার তার। ২ ছেলে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তার নাতি-নাতনী মাছ খেতে খুব পছন্দ করে। কিন্তু বাজারে মাছের দাম বেশি তাই সব সময় সাধ্যমত মাছ কিনতে পারেন না। সেজন্য নদীতে আসেন বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে। ৭/৮টা বড়শি পাতলে মোটামুটি ২ বেলার রান্নার মাছ হয়ে যায় বলে জানান জয়তুন।

পেশাদার মাছ শিকারিদের মতো নদীতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে সরঞ্জামাদি কিনতে বেশি খরচ হয় না। ছিপ হিসেবে ব্যবহার করা হয় বাঁশের ছিংলা, গাছের ডাল, টোপ কাটি হিসেবে কচুর ডাটা, পাট কাটি, নাইলনের সুতা, বড়শি, মাছের খাবার হিসেবে কেঁচো, ভাত, আটার বড়ি ব্যবহার করা হয়। সুতা আর বড়শি ছাড়া বাকি জিনিস তারা আশপাশ থেকে সংগ্রহ করেন। যার ফলে অল্প খরচে সহজেই মাছের চাহিদা ও শখ পূরণ করতে পারেন গ্রামবাংলার নারীরা।

ছবি: রাসেল আহমেদ

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.