সনেট দেব চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল | ১০ মে, ২০১৫
আজ বিশ্ব মা দিবস। সীমাহীন ভালোবাসার একটি দিন। পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর এবং প্রিয় শব্দটি হাজারবার বলার দিন। ১৯১১ সাল থেকে এই দিনটি পালন হয়ে আসছে মা দিবস হিসেবে। সর্বপ্রথম ১৯১১ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আমেরিকাজুড়ে পালিত হয় প্রথম 'মা দিবস'। সেসময় আমেরিকায় মায়েদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে 'মাদারিং সানডে' নামে একটি বিশেষ দিন উদযাপন করা হতো। তারপর ১৯১৪ সালে দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
মা দিবস উদযাপনের ধারণাটি প্রথম মাথায় আসে মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ডের। তবে আধুনিক মা দিবসের ধারনার প্রবর্তক অ্যান জার্ভিস। শান্তিকর্মী অ্যান জার্ভিস যুদ্ধবিধ্বস্ত আমেরিকার নারীদের নিয়ে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যরক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা নিয়ে প্রচার কাজ শুরু করেছিলেন। ১৮৬৮ সালে তিনি নারীদের সংঘবদ্ধ করেন এবং আমেরিকার কিছু জায়গায় প্রচারণা চালান যে, টমেটোর চারা যেন সবাই মা দিবসের পরই রোপণ করেন। তার আগে নয়। অ্যান জার্ভিস দিনটির সরকারি অনুমোদন পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা চালাতে থাকেন, কিন্তু সফল হতে পারেননি। তবে মৃত্যুর পর তার মেয়ে অ্যানা জার্ভিস মায়ের অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের কাজে হাত দেন। তিনি চেষ্টা করতে লাগলেন একটি বিশেষ দিন ঠিক করে মা দিবসটি উদযাপন করার জন্য। সে লক্ষ্যেই ১৯০৮ সালের ১০ মে তিনি পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফিটন শহরের সেই চার্চে, যেখানে তার মা অ্যান জার্ভিস রোববার পড়াতেন সেখানে প্রথমবারের মতো দিনটি উদযাপন করেন। এরপর থেকেই আস্তে আস্তে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বিস্তার হতে থাকে চারপাশে এবং এক সময় এটি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে মা দিবস পালিত হয়। কারণ দিবসটি উদযাপনের সূত্রপাত বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম। তবে বেশির ভাগ দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার দিনটি পালিত হয়।
মা কে নিয়ে কি লিখবো। নিজের অনুভূতির মাধ্যমে যতটুকু প্রকাশ করা যায় তা লিখে দেখানো যাবে কি? মা এমন একজন মানুষ যাকে নিয়ে বছরের পর বছর লিখলেও শেষ হবে না। আমার মা এমন এক মানুষ যাকে দাঁড়িপাল্লার এক পাশে বসিয়ে অন্য পাশে পুরো পৃথিবী বসালেও মায়ের সমান হবে না। গর্ভে থেকে বড় হবার আগ পর্যন্ত এই মা আমাদেরকে কথা বলার থেকে শুরু করে সব কিছুই শিখিয়েছেন।
আমার মা ; সেতো অনন্ত বিশ্বস্ততার। পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর শব্দ 'মা'। সবচেয়ে ভালোবাসার শব্দ 'মা'। বড় আশ্রয়ের জায়গা 'মা'।
ছেলেবেলা বাইরের থেকে বাসায় যখন আসতাম, তখন মা বলতেন ‘আজ কোথায় গিয়েছিলে?’ অনেক সময় মিথ্যে কথা বলতাম। কিন্তু তা আর বেশি সময় থাকত না। ধরা পড়ে যেতাম। স্কুলে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে চলে যেতাম ভিক্টোরিয়া মাঠে বন্ধুদের সাথে খেলতে। স্কুলের টাইম শেষে চলে আসতাম বাসায়। স্কুল ফাঁকি দিয়ে মাঠে বন্ধুদের সাথে খেলার কোন কিছু যাতে টের না পান সেই ব্যবস্থা করে বাসায় যেতাম। কিন্তু তাও উপায় নেই। ধরা খেয়ে যেতাম। সেই জন্য অনেক পিটুনি খেতেও হয়েছে। তেমনি পড়ালেখার জন্যও পিটুনি খেতে হয়েছে।
অনেক সময় বাবাকে না বলে চলে যেতাম অনেক জায়গায়। মাকে জানিয়ে যেতাম। পড়ে বাবা জানলে মা সেই পরিস্থিতি সামাল দিতেন। এর জন্য আমার চেয়ে মা সবচেয়ে বেশি বকুনি খেয়েছেন।
মাকে নিয়ে এমন একটি ঘটনা আছে। আমি এক দিন মায়ের কাছে একটি ক্যামেরা কেনার ইচ্ছা বললাম। সে সময় জাতীয় ফটো এজেন্সীতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই সময়ের পরিস্থিতি বুঝে মা এক আত্নীয়ের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে আমাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাকে তিনি তা বলেননি। পরবর্তীতে আমি ক্যামেরা কিনে করে বাসায় আসার পর তিনি আমাকে বলেছিলেন। সেই ধার করা টাকা মা একটু একটু করে শোধ দিয়ে দিয়েছেন। স্নেহের এই ঋন কোনোদিন শোধ করতে পারবো কি না জানিনা।
আজ সেই ক্যামেরাটি ভালোমতো কাজ করছে না। তারপরও মোটামুটিভাবে চলছে। মেকানিকের কাছে নিয়ে যেতে বলেছিলেন অনেকে। অনেকে বলেছিলেন এইটা বিক্রি করে নতুন ক্যামেরা কিনবার জন্য। কিন্তু সবাই কি আর বুঝবে এই ক্যামেরার আমার কাছে এই ক্যামেরাটি কতটা মুল্যবান জিনিস। এই ক্যামেরাটি আমার কাছে শত হাজার কোটি টাকার চেয়েও মুল্যবান।
মায়ের কষ্ট দেখে মাঝে মাঝে নিজের সহ্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলতাম। এমন অনেক সময় গেছে রাতের পর রাত মা ঠিকমত ঘুমাননি। কি করেননি আমাদের জন্য! মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সবাইকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। সাধ্যের বাইরে গিয়েও পূরণ করেছেন সব আবদার। আজ আমরা সবাই বড় হচ্ছি। মায়ের স্বস্তির নিঃশ্বাস যেন পৃথিবীটাকে সজীব করে দেয়। যিনি প্রথম পৃথিবী দেখান, সবরকম দুর্যোগ থেকে সন্তানকে রক্ষা করেন তার মূল্য কি কেউ কখনো দিতে পারবে? তাই বছরের এই ‘বিশেষ’ দিনে মাকে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। বিনম্রচিত্তে স্মরণ করতে চাই মায়ের স্নেহ-ত্যাগ-ভালোবাসার কথা। হয়তো বছরের প্রতিটি দিন মাকে ভালোবাসবো একই রকম করে; তবু আজকের দিনের সব ভালোবাসা শুধু মা- তোমারই জন্য। মা দিবসে বিশ্বের সব মাকে ভালোবাসা আর বিনম্র শ্রদ্ধা।