Sylhet Today 24 PRINT

প্রবাসে বাঙালির মানবিক মুখ শমসের ইকবাল

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১০ জানুয়ারী, ২০১৮

১৯৮৮ সাল। শমসের ইকবাল সুহেল তখন সিলেট মদন মোহন কলেজের ছাত্র। দেশে তখন রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। বন্ধুদের অনেকেই স্বৈরাচারী সরকারের কোপানলে পড়ে কারাগারে। এই অস্থিরতার সময়ে দেশ ছেড়ে কানাডায় পাড়ি জমান শমসের।

তবে আরো অনেক বাঙালির মতো সেখানে কেবল অর্থ উপার্জনেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি শমসের। এগিয়ে এসেছেন নানা সমজসেবামূলক কর্মকান্ডে। নিজের কাজের মাধ্যমে কানাডা প্রবাসীদের কাছে হয়ে উঠেছেন  বাঙালির মানবিক মুখ।

২০১৭ সালের জুলাই। কানাডার জুইস জেনারেল হাসপাতাল তাদের স্রিগাল ক্যান্সার সেন্টারের জন্য ফান্ড সংগ্রহে বাই সাইকেল ম্যারাথন আয়োজন করে। মানবিক এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই ম্যারাথনে অংশ নেন নানা দেশের আটশ' ব্যক্তি। এরমধ্যে একমাত্র বাঙালি প্রতিযোগি শমসের ইকবাল। এই বিপুল সংখ্যক প্রতিযোগীদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র পৌঁছতে পারেন ফিনিশ লাইনে।

সেখানে পৌছা অবশ্য চারটিখানি কতো নয়; কানাডার মন্ট্রিয়াল থেকে যেতে হবে কুইবিক সিটি। প্রায় ২৪০ কিলোমিটার পথ। তাও উঁচু নিচু পথ, বন জঙ্গল পাড়ি দিয়ে। এই দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে হাতেগোনা যে কয়জন ফিনিশ লাইন ছুঁয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছে বাঙালি মোহাম্মদ শমসের ইকবালো। তাও প্রায় ৫০ বছর বয়সে। বাইসাইকেল ম্যারাথনের মাধ্যমে তিনি ক্যান্সার সেন্টারের জন্য সংগ্রহ করেন ৪.১ মিলিয়ন ডলার। পুরো টাকাটাই তুলে দেন ক্যান্সার সেন্টার কর্তৃপক্ষের কাছে।

এই অর্জনের পর রাতারাতি কানাডায় পরিচিত মুখ হয়ে যান শমসের ইকবাল। তাকে নিয়ে শুরু হয় মাতামাতি। সেখানকার বিভিন্ন গণমাধ্যমেও ফলাও করে প্রকাশিত হয় মতাবতার স্বার্থে শমসেরের এই কৃতি। বাঙালি কমিউনিটিতেও অনুকরণীয় হয়ে উঠেন তিনি।

ব্যবসাক্ষেত্রেও সাফল্য পেয়েছেন শমসের। কানাডায় সফল গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তার।

শমসের ইকবাল বলেন, বাংলাদেশ থেকে সেখানে যারা যায় তাদের সকলেরই চিন্তা থাকে কেবল আয় রোজগার করা। এরকম মানবিক কাজে এগিয়ে আসার কথা প্রবাসীদের কেউ ভাবেই না। স্থানীয়দেরও ধারণা বাঙালিরা কেবল টাকা উপার্জনের জন্য তাদের দেশে যায়। আমিও সেখানে গিয়েও প্রথমে অনেক কষ্ট করেছি। এখন ব্যবসা করছি। তাই জীবিকার পাশাপাশি বিকল্প কিছু চিন্তা করেছি। মানুষের কল্যানে কাজ করতে চেয়েছি।

আর ছেলেবেলা থেকে ফুটবল খেলতাম। বিদেশে গিয়েও নিয়মিত শরীরচর্চা করি। ফলে বাইসাইকেল ম্যারাথন করে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে পেরেছি।

তিনি বলেন, আমার এই কাজের পর বাঙালি সম্পর্কে সেখানকার মানুষদের ধারণা অনেক বদলে গেছে। তারা এখন বাঙালিদের নিয়ে অনেক ইতিবাচক ধারণা পোষন করে। প্রথমে কিছুটা নেতিবাচক কথা বললেও বাংলাদেশি প্রবাসীরাও এখন আমাকে অনেক উৎসাহ দিচ্ছেন। তারাও বিভিন্ন সমাজসেবা ও মানবকল্যানমূলক কর্মকান্ডে এগিয়ে আসার সাহস পাচ্ছেন। আমার ফিনিশ লাইন স্পর্শ করার ঘটনা বাঙালি কমিউনিটিতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

তবে এখানেই থেমে থাকতে চান না শমসের ইকবাল। মাতবতার কল্যানে নিজের কাজ আগামীতেও অব্যাহত রাখতে চান। কানাডায়ই এই বছরে জনকল্যানে ফান্ড রাইজিংয়ের জন্য অনুষ্ঠিতব্য একটি মিনি ম্যারথনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।

কেবল প্রবাসে নয় নিজের দেশেও যুক্ত হতে চান কল্যানকর কাজে। দরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষার প্রসারে কাজ করতে চান। তাদের বিনামূল্যে শিক্ষালাভের সুযোগ করে দিতে চান।

শমসের ইকবাল বলেন, দেশে যারা লেখাপড়া করতে পারে না, আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য, তাদের জন্য কিছু করতে চাই। এতোদিন অপ্রাতিষ্টানিক ও বিচ্ছিন্নভাবে এ কাজ করেছি। এখন কিছুটা প্রাতিষ্ঠানিক ও সমন্বিতভাবে কাজ করতে চাই। এজন্য সকলের সহযোগিতাও চান এই আলোকিত প্রবাসী।

প্রবাসে যিনি বাঙালির মুখ আলোকিত করেছেন, দেশেও ছড়িয়ে দিতে চান শিক্ষার আলো।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.