Sylhet Today 24 PRINT

‘ইন লাভিং মেমোরি অব মাই হাজবেন্ড’

রিপন দে |  ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

‘ইন লাভিং মেমোরি অব মাই হাজবেন্ড’ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ডিনস্টন সিমেট্রিতে নাম পরিচয়হীন পাঁচটি কবরের একটিতে প্রিয়তমা স্ত্রী জেসিজি অশ্রুসিক্ত নয়নে লিখে গেছেন এই উক্তিটি।

ইংল্যান্ড থেকে স্বামীর মৃত্যু সংবাদ শুনে সুদূর শ্রীমঙ্গলে ছুটে এসেছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক জেসিজি। স্বামীর সঙ্গে তার আর শেষ দেখা হয়নি। শ্রীমঙ্গলের শতবর্ষের স্মৃতিবিজড়িত ডিনস্টন সিমেট্রিতে চির নিদ্রায় শায়িত জেসিজির স্বামী।

শহর থেকে প্রায় ১৬ কি.মি. দূরে জেমস ফিনলে টি কোম্পানির ডিনস্টন চা বাগানের ভেতরে। সবুজের চাদর বিছানো সিমেট্রি এলাকাজুড়ে কোথাও কোলাহল নেই, সুনসান-নিথর নিরবতা। শতাধিক বছর ধরে জেমস ফিনলে চা কোম্পানির এই সিমেট্রি রক্ষণাবেক্ষণ করছে।

এখানে একই সঙ্গে একটি কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন এক ব্রিটিশ দম্পতি। চিরদিনের মতো ঘুমিয়ে আছে আরও ৯ নিষ্পাপ শিশু সহ ৪৬ জন ব্রিটিশ নাগরিক।

১৯৩৯ সালের বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার একটি বিমান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের সময় শ্রীমঙ্গলের উদনাছড়া চা বাগানে বিধ্বস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় নিহত বিমানের দু’জন চালকের মরদেহ ডিনস্টন সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়। পরে আমেরিকার সামরিক বাহিনী দু’বিমান চালকের মৃতদেহ কবর থেকে উঠিয়ে নিজ দেশে নিয়ে যায়।

জেমস ফিনলে টি কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায় চা বাগান প্রতিষ্ঠার পর ১৮৮০ সালে শ্রীমঙ্গলে ব্রিটিশরা বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করে। সুদূর ব্রিটেন থেকে এখানে টি প্ল্যান্টার্সদের আগমন ঘটে। তৎকালীন সময়ে যেসব ব্রিটিশ এবং তাদের স্ত্রী-পুত্র, স্বজন মারা যান তাদের ডিনস্টন সিমেট্রিতে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। পাহাড়ঘেরা চিরসবুজ চা বাগানের মাঝখানে অবস্থিত এ সিমেট্রিতে ব্রিটিশদের কবর রয়েছে ৪৬ টি।

জেমস ডিনস্টন চা বাগানের এ সিমেট্রিতে সর্বপ্রথম সমাহিত করা হয় রবার্ট রয়বেইলি নামের এক ব্রিটিশ নাগরিককে। ৩৮ বছর বয়সে ১৮৮৫ সালের ৩০ আগস্ট তিনি ডিনস্টন চা বাগানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৮৯৬ সালের জুন মাসে শিশু উইলিয়াম জন ও ডেভিড সহাবির মৃত্যু হলে তাদের এখানে সমাহিত করা হয়। ১৯১৮ সালের ১৮ মে জর্জ উইলিয়াম পিটারের সহধর্মিণী মেরি এলিজাবেথ পিটার মারা গেলে তাকে এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। স্ত্রীর মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে ১৯১৯ সালের ২ অক্টোবর জর্জ উইলিয়াম পিটারও পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন।

ডিনস্টন সিমেট্রির নিরবতায় পাষাণ কবরের একই আচ্ছাদনে একই কবরে স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

 ১৯০২ সালের এপ্রিলে পানিতে ডুবে মারা যান এফডাবিউ, এলান। এ দু’জনের মরদেহ পাওয়া যায়নি। স্মৃতি রক্ষার্থে তাদের বন্ধুরা ডিনস্টন সিমেট্রিতে দু’টি প্রতীকী কবর তৈরি করে।

১৯১৯ সালের ২০ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলের দারগাঁও চা বাগানে মারা যান অ্যাডওয়ার্ড ওয়ালেস। এদিন ছিল তার ২৫তম জন্মদিন। কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ১৯৩৭ সালের শুরুর দিকে হান্ট নামের একজন ব্রিটিশ নাগরিক মারা যান তিনিও এই সিমেট্রিতে শায়িত আছেন। ১৮৯৬ সালের জুলাই মাসে জাহাজ যোগে নিজ দেশে যাওয়ার পথে মারা যান রামসান্টার।

১৯৩৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৩৫ বছর বয়সী গিলবার্ড হেনরিটেটের ছেলে পিটারটেট পিতার সমাধি দেখতে শ্রীমঙ্গল এসেছিলেন। গিলবার্ট হেনরির স্ত্রীর অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী তার মৃত্যুর পর মরদেহের ভস্ম প্রিয়তম স্বামীর পদপ্রান্তে অশ্রুসজল নয়নে রেখে গেছেন পুত্র পিটারটেট।

চারিদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত পাহাড় ঘেরা চিরসবুজ চা বাগানের মাঝখানে কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে শতবর্ষের স্মৃতিবিজড়িত শ্রীমঙ্গলের এই ডিনস্টন সিমেট্রি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.