Sylhet Today 24 PRINT

এসআইইউ: যে দানে শিক্ষা উদ্যান

প্রণবকান্তি দেব |  ০১ আগস্ট, ২০১৮

সিলেটে শিক্ষার বিস্তারে ‘ব্যক্তির দান’ এর ইতিহাস অনেক পুরনো। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে সিলেটের শিক্ষার দিগন্ত প্রসারিত হয়েছে নানাজনের ত্যাগ ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে। বিত্তবানদের চিত্তের উদারতায় আলোকিত হয়েছে মানস জগত। রাজা গিরিশচন্দ্র থেকে শুরু করে যোগেন্দ্র মোহন-মোহিনী মোহন, এরা প্রত্যেকেই শিক্ষার বিস্তারে দান করে গেছেন অকৃপণ হস্তে। সেই গৌরবময় পথ ধরে এবার এগিয়ে এলেন আরেকজন। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এসআইইউ) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ।

সম্প্রতি এতদঞ্চলের উচ্চশিক্ষার বিস্তারে বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করলেন কোটি কোটি টাকা মূল্যের জমি। লাভ-ক্ষতির এই দুরন্ত সময়ে, চাওয়া-পাওয়ার এই প্রতারক যুগে শামীম আহমেদ বিনাশর্তে চোখ বুজে লিখে দিলেন নিজের মূল্যবান সম্পত্তি।
বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে টাকা দিয়ে জমি কিনছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকেরা যেখানে নানা ফন্দি-ফিকিরের নানা নামে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন, এমনকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এখন যখন বাংলাদেশে খুব লাভজনক ব্যবসায় পরিণত, তখন শামীম আহমেদ এর সিলেট শহরের মধ্যে দু’একর জমি দানকে বিরল হৃদয়ের কাজ বলে নিঃসন্দেহে অভিহিত করা যায়।

২০০১ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি নিজে কোনো আর্থিক সুবিধা যেমন নেন না, তেমনি এখানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে ন্যুনতম খরচে। যে কারণে এস.আই.ইউকে বলা যায়, “প্রান্তজনের বিশ্ববিদ্যালয়।”

সমপ্রতি শামীম আহমদ ও তাঁর পরিবার মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ২ একর জমি প্রদানের মাধ্যমে ইউজিসি’র স্থায়ী সনদ প্রাপ্তির অন্যতম একটি শর্তপূরণ করলো। অবশ্য শিক্ষার জন্য এ দান শামীম আহমেদের জন্য নতুন কিছু নয় বরং পারিবারিক ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতা বলা যায়। তাঁর পিতা প্রয়াত মঈন উদ্দিন আহমদও ছিলেন শিক্ষানুরাগী। তাঁরই দানে আজকের মঈন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজ।

এদিকে, দু’একর জমি পেয়ে এস.আই.ইউ পেয়েছে নতুন যৌবন। শিক্ষার্থীরা নতুন স্বপ্নে, নতুন আশায় উদ্বেলিত। সবুজের মায়ায় জড়ানো ক্যাম্পাস তাদের হাতছানি দিচ্ছে নতুন দিনের। প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থীর কোমল পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে কোমল ঘাসের আঙিনা। খেলার মাঠ, কংক্রিটের বারান্দা, নীলকণ্ঠ ফুলের মেলা-সব মিলিয়ে এক শিক্ষা উদ্যান, যেন ডাকছে “এসো, নতুন দিনের আহবানে”।

বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০১ সালের ২৫ নভেম্বর গুলশান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে সরকারের নীতি অনুযায়ী বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মাধ্যমে এর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিশেষত্ব হচ্ছে ফুল-পাখি আর গাছ-গাছালই বেষ্টিত নিজস্ব ক্যাম্পাস, রয়েছে স্বল্প বেতনে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পড়াশোনার সুযোগ, রয়েছে আমেরিকান দূতাবাস পরিচালিত ‘আমেরিকান কর্ণার’, বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সমৃদ্ধ কম্পিউটার ল্যাব, ইলেক্ট্রনিকস ও ইলেকট্রিক মেশিন ল্যাব- যা অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও গড়ে উঠেনি।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপরিসর লাইব্রেরিটিও শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের আরেক প্রাণকেন্দ্র।

সম্প্রতি ইউজিসি থেকে হিকেপ প্রজেক্টের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে গবেষণা কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি বিভাগেই পরিচালিত হচ্ছে এ প্রকল্প। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাকুরি বাজারেও নিজেদের সাফল্যের প্রমাণ দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। সরকারি থেকে শুরু করে বেসরকারি এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মেধাবী শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন আকাশ ছোঁয়া। প্রবাসে জীবন যাপন করলেও প্রতিমাসেই ছুটে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির বার্তা নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিন্দুমাত্র কোন মুনাফা না নিয়ে নিজের অর্থ, মেধা ও শ্রম দিয়ে এগিয়ে নিতে চান সময়ের সাথে।

উল্লেখ্য, মোট ৫টি বিভাগে এস.আই.ইউ এ শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করছে। এখানে প্রতিদিন একঝাঁক তারুণ্যদীপ্ত, মেধাবি আর দক্ষ শিক্ষক-কর্মকর্তার সম্মিলিত কর্মদক্ষতায় পূর্ণতা পায় অযুত শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন। শামীম আহমদের অকৃপণ দানে আলো জ্বলে উঠে শত সহস্র শিক্ষার্থীদের অন্তরে, এ আলো একদিন ছড়িয়ে পড়বে সবখানে- সিলেট, বাংলাদেশ তারপর একদিন বিশ্বজুড়ে... হয়তো সে ভাবনা থেকেই নামকরণ “সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি”।

  • প্রণবকান্তি দেব: সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
  • [প্রকাশিত লেখায় মতামত, মন্তব্য ও দায় লেখকের নিজস্ব]

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.