Sylhet Today 24 PRINT

সেলিনার বনসাই রাজ্য

রিপন দে, মৌলভীবাজার |  ২৭ আগস্ট, ২০১৮

১ ফুট থেকে ২ ফুট উচ্চতার একেকটি গাছের দাম ২ হাজার থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত। শখের বসে শুরু করলেও এখন এর অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে নিজেই অবাক।  নিরবে এক বিপ্লব ঘটিয়েছে সেলিনা পারভিন।

সেলিনা পারভিন একজন বনসাইপ্রেমী। শখের বসে শুরু করলেও এখন বাণিজ্যিক ভাবে ভালই আয় হচ্ছে তার বনসাই বাগান থেকে। ইতোমধ্যে হয়েছেন দেশের সেরা। পরিচিতি পেয়েছেন দেশ-বিদেশে।  

সেলিনা পারভিন কুষ্টিয়ার মেয়ে বিবাহ করেছেন কুষ্টিয়ার ছেলে কাজল মাহমুদকে। কাজল মাহমুদ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার গাজীপুর চা-বাগানের ব্যবস্থাপক। স্বামীর কর্মস্থল হওয়ায় ১৯৯৬ সাল থেকেই বসবাস করছেন মৌলভীবাজারে। চা বাগানের সবুজের চাদরে বিছানো সবুজ শ্যামল পরিবেশে চা বাগানের বাংলোতে গড়ে তুলেছেন এক বনসাই রাজ্য।

কি নেই সেলিনা পারভিনের বনসাই বাগানে! চেনা-অচেনা কিংবা বিলুপ্তপ্রায় গাছসহ আছে প্রায় ২০০ প্রজাতির নানা জাতের গাছ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন জাতের বট, নারিকেল গাছ, পাকুড়, হিজল, তমাল, জাম, আমলকী, শেওড়া, জারুল, ডুমুর, ডালিম, কদম, নিম, জামরুল, বাবলা, কৃষ্ণচূড়া, কামরাঙা, বকুল, অশোক, কুল, পাইন, বাঁশ, তেঁতুল, আম, কাঁঠাল, জলপাই, সফেদা, বিভিন্ন প্রকার ফুলসহ অনেক প্রজাতির গাছ।

গাছকে যে আদরের যত্নে বনসাই করার মাধ্যমে বস বানানো যায় তা দেখিয়েছেন সেলিনা। এক ছাদের নিচে নারকেল বটসহ এত এত গাছের জায়গা দেওয়া সম্ভব হয়েছে বনসাই শিল্পের প্রতি তার ভালবাসা ও সন্তাদের মত মততার কারনে।

কিভাবে এ বিপ্লব করেছেন তা জানালেন , তিনি জানান স্কুল জীবন থেকে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ম্যাগাজিনের প্রতি তার অন্য রকম নেশা ছিল। ম্যাগাজিন পড়তেন সেখান থেকে পরিবেশ বা বৃক্ষ নিয়ে কোন আর্টিকেল চোখে পড়লে তা মনযোগ দিয়ে পড়ার সাথে সাথে কেটে ফাইলে রেখে দিতেন। এভাবেই দিনে দিনে আগ্রহ জন্মে বনসাইয়ের প্রতি। একটু একটু করে শুরু করেন । দিনে দিনে এ শিল্প রপ্ত করে পেলেন। প্রথমে বাণিজ্যিক কোন চিন্তা ছিল না। নিজের ভেতরের ভালো লাগা থেকেই কাজটি শুরু করেছিলেন কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছেন এর বাজার মূল্য অনেক। গত সপ্তাহে একটি বনসাইয়ের দাম ২ লাখ পেয়েও বিক্রি করেননি তার ধারনা এ গাছের বাজার মূল্য ৩লাখ।  

সেলিনা জানান,  বিভিন্ন জায়গা থেকে গাছ সংগ্রহ করে সে গাছ টবে লাগানো হয়। নিবিড় পর্যবেক্ষন আর ভালবাসায় গাছটির বয়স হওয়ার পরেও ওটা একটি সীমিত উচ্চতায় আটকে থাকে, তবে এত গাছটির শরীরজুড়ে লাবণ্যে কমে না। সবুজ পাতা, অনেক বছরের আলো-জল খাওয়া শাখাগুলোও সময়ের সমৃদ্ধ মেজাজ নিয়ে দুলছে। এই পরিবেশটাকে গাছের শরীরজুড়ে ধরে রাখতে লাগে অনেক সময় ও পরিচর্যা। দিতে হয় নিয়মিত সেচ ও সার। সামান্য হেলাফেলার সুযোগ নেই। স্বামী, ১ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসারে বনসাইগুলোও সমান যতœ-আত্তি পায়। এই কাজটির মধ্য দিয়ে চার দেয়ালে আটকে না রেখে নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি।

একবার বিদেশ থেকে একদল পর্যটক আসলেন ঘুরতে। তারা বাগানের বাংলোতে বনসাই বাগান থেকে জানতে চাইলেন এগুলাে কেউ করছে নাকি কিনে আনা হয়েছে। সেলিনা পারভিন নিজের কর্মেও বর্ণনা দিলেন। সেদিন স্বামী কাজল মাহমুদের সামনেই বিদেশী পর্যটকরা এর বাজার মূল্যের কথা জানালো। বনাসাইয়ের এত দাম জেনে অবাক হলেন সেলিনা পারভিন। তবে মনে মনে খুশি হলেন শখের বসে এত দামী কিছু করতে পেরেছেন বলে। সে দিনের পর থেকে স্বামী কাজল মাহমুদের উৎসাহের মাত্রা বেড়ে গেলো । সেলিনা পারভিনের শিল্প সৃষ্টির এই কাজ এখন আর তাঁর নিজের পরিধিতে আটকে নেই। তাঁর এই বনসাই দেখে বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটি তাঁকে সদস্য করেছে। তিনি বনসাই সোসাইটির একাধিক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। প্রশংসিত হয়েছেন। তাঁর প্রদর্শিত বনসাই পেয়েছে প্রথম পুরস্কার। বাণিজ্যিকভাবেও বনসাইয়ের সম্ভাবনা আছে। অনেকেই ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি কিংবা গাছের প্রতি মমতা থেকেই নানা জাতের বনসাই কিনে থাকেন। একটি বনসাইয়ের দাম ১ হাজার থেকে ৪-৫ লাখ টাকাও হতে পারে।

সেলিনা পারভিন বলেন, অনেকে বনসাই শিল্পকে একটু অবহেলার চোখে দেখেন তাদের মত হচ্ছে-  বনসাইয়ের মাধ্যমে একটি গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার রোধ করে এটাকে ছোট করে রাখা হয়। এটা আসলে ঠিক না। বরং এ চর্চার মাধ্যমে গাছের আরও প্রসার বাড়ছে। অনেক বিলুপ্ত গাছ রক্ষা পাচ্ছে। শহরের শিশুরা গাছ  চিনতে পারছে। বনসাই প্রদর্শনীতে এসে অনেকে প্রকৃতিপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

 এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো: শাহাজান জানান, সেলিনা পারভিনের বনসাই জাতীয় পর্যায়ে পুরুস্কৃত হয়েছে তা অবশ্যই গর্বের। জেলা কৃষি অফিস যে কোন ধরনের সাহায্য চাইলে তা করতে প্রস্তুত আছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.