Sylhet Today 24 PRINT

কালনাগিনী সাপে বিষ নেই

রিপন দে |  ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

কালনাগিনী বাংলাদেশের সব চেয়ে পরিচিত একটি সাপের নাম। যদিও বেশীর ভাগ মানুষ এই সাপকে দেখেনি তবে সবাই এই সাপের নাম জানে বিভিন্ন লোকগল্প, সাপুড়েদের চটকদার প্রচার এবং বাংলা সিনেমার মাধ্যমে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে অসংখ্য সিনেমা বানানো হয়েছে এই সাপকে নিয়ে।

বেহুলা-লখিন্দর থেকে শুরু করে কালনাগিনীর প্রেম, নাগ নাগিনী, শীষনাগ, নাগিনী কন্যা, নাগ পূর্ণিমা, নাগরানী, সতী নাগকন্যা, নাগমহল, নাগিনা, নাগজ্যোতি, নাচে নাগিন, রূপসী নাগিন, নাগিনী সাপিনী ইত্যাদি অনেক ছবি বানানো হয়েছে কালনাগিনীর নামে। সাপুড়েরাও বিভিন্নভাবে এই সাপকে বিষাক্ত বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন হাটে-ঘাটে।

ভয়ংকর এক বিষাক্ত সাপ হিসেবে আমাদের গ্রাম বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে একে উড়ন্ত সাপ, উড়াল মহারাজ সাপ, সুন্দরী সাপ, কালসাপ, কালনাগ বলে ডাকে সেই সাথে কালনাগিনীর তীব্র বিষে মানুষ মৃত্যু নিয়ে নানান লোকগল্প প্রচলিত কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সে গল্প শুধুই কাল্পনিক।

বাংলাদেশের বিচিত্র প্রাণীজগতের সবচেয়ে সুন্দর সাপগুলির মধ্যে অন্যতম একটি সুন্দর সাপ কালনাগিনী। ইংরেজি নাম Ornate Flying Snake ও বৈজ্ঞানিক নাম Chrysopelea ornata। ইংরেজিতে Flying Snake নাম হলেও সাপটি আসলে উড়তে পারে না। শুধু মাত্র খাদ্য বা অন্য কোন প্রয়োজনে উঁচু গাছের ডাল থেকে নিচু গাছের ডালে লাফ দিয়ে চলাফেরা করে।

কালনাগিনী একটি বিষমুক্ত সাপ। এদের বিষের প্রয়োগে আজ পর্যন্ত কোন মানুষ মারা যায় নাই। অথচ আমাদের চলচ্চিত্র মিথ্যাভাবেই এই সাপটিকে আমদের সমাজে খুব বিষাক্ত ও ভয়ংকরভাবে পরিচিত করেছে।

এই ভয়ংকর ধারনা থেকেই সাধারণ মানুষ যখনই সাপটিকে দেখে বিষাক্ত ভেবে মেরে ফেলে। তাই নিরীহ প্রকৃতির কালনাগিনী সাপ দ্রুত কমছে বাংলাদেশ থেকে। সিলেট, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে একসময় প্রচুর দেখা গেলেও বর্তমানে এই সাপটিকে তেমন দেখা যায় না। বর্তমানে গভীর বনে এদের দেখা যায়।

এরা দৈর্ঘ্যে ১০০ থেকে ১৭৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাথা লম্বা ও চ্যাপ্টা এবং মুখের সামনের দিকে চৌকোনা আকৃতির। এদের দেহের রঙ পিঠের দিক সবুজাভ হলুদ বা হালকা সবুজ রঙের এবং কালচে ডোরাযুক্ত হয়ে থাকে। ঘাড় থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত মেরুদণ্ড বরাবর কমলা রঙের এবং লাল দাগ দেখা যায়।

এদের খাদ্য তালিকার সাধারণত পোকামাকড়, টিকটিকি, গিরিগিটি, ব্যাঙ, ছোট পাখি ইত্যাদি থাকে। জুন থেকে জুলাই এদের প্রজনন মৌসুম। প্রজনন সময়ে এরা সাধারণত ৬ থেকে ১২টি ডিম দেয়।

'সাপ বেচে থাকুক আমাদের প্রয়োজনে' এই স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশে সাপের ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে দেশের আনাচে-কানাচে কাজ করে যাচ্ছেন কামরুজ্জামান বাবু এবং প্রসেনজিত দেববর্মা। তারা জানান, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য সাপকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই প্রয়োজন কিন্তু জীববৈচিত্রের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাণীটি আমদের অজ্ঞতা, কুসংস্কার আর বাংলা চলচ্চিত্রের ভুলভাবে উপস্থাপন করার কারণে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের পরিবেশ থেকে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. মো. কামরুল হাসান জানান, অজ্ঞতা অনুসারে কালনাগিনী সাপকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে এদের জীবন হুমকিতে ফেলা হয়েছে। এই সাপের কোন বিষ নেই। কোন মানুষ বা কোণ প্রাণি কখনো এই সাপের কামড়ে মারা যায়নি। কারণ এদের বিষ নেই। সমাজকে সচেতন করতে হবে তবেই মানুষের হাত থেকে রক্ষা পাবে এই কালনাগিনী সাপ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.