Sylhet Today 24 PRINT

ঢাকায় টাকা জাদুঘর

সিলেটটুডে ডেস্ক  |  ৩০ অক্টোবর, ২০১৮

টাকা জাদুঘর বা মুদ্রা জাদুঘর ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত। প্রাচীন বাংলা থেকে শুরু করে আধুনিক কাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের ধাতব মুদ্রা এবং কাগুজে নোট সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই টাকা জাদুঘরে। সেই সঙ্গে এখানে জায়গা পেয়েছে মুদ্রা সংরক্ষণের প্রাচীন কাঠের বাক্স ও লোহার সিন্দুক।

ইতিপূর্বে সীমিত পরিসরে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এমন একটি কারেন্সি মিউজিয়াম ছিল। ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের প্রথম এই টাকা জাদুঘর।

কড়ি থেকে কাগুজে নোট এখানে সংরক্ষিত ও প্রদর্শিত হচ্ছে। আছে প্রাচীন আমল থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত মুদ্রিত বিভিন্ন ধরনের ধাতব মুদ্রা, কাগজের নোট ও মুদ্রা সম্পর্কিত দ্রব্যসামগ্রী। প্রদর্শিত মুদ্রাগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ সহ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম ছাপাঙ্কিত পাঞ্চ মার্কড (রৌপ্য মুদ্রা) যার ব্যাপ্তি খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম-৪র্থ শতক থেকে খিস্টাব্দ ২য় শতক পর্যন্ত। কুষাণ মুদ্রা, হরিকেল মুদ্রা, দিল্লী ও বাংলার সুলতানদের মুদ্রা, মোগল ও ব্রিটিশ শাসকদের মুদ্রাসহ আধুনিক মুদ্রা সম্ভার।

স্মরণাতীতকাল থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত বাংলায় ক্ষুদ্র লেনদেনে মুদ্রা হিসেবে কড়ি ব্যবহার করা হত, সে সব কড়ির কিছু নমুনাও রয়েছে প্রদর্শনীতে। কুষাণ সম্রাটগণের প্রদত্ত শক পার্থিয়ান ও তাম্রমুদ্রার কিছু নমুনা রয়েছে যা খ্রিস্টাব্দ ১ম ও ২য় শতকে ব্যবহার করা হত। হরিকেল মুদ্রা মূলত ৭ম ও ৮ম খিস্টাব্দের দিকে বর্তমান সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লার ময়নামতি, চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ব্যবহার হত।

ময়নামতির প্রত্নস্থল থেকে বিপুল হরিকেল মুদ্রা পাওয়া যায়। মধ্যযুগে মুসলিম শাসনামলে তথা সুলতানি শাসনামলে (১৪শ ও ১৫শ শতকে) ২৬ জন শাসক বাংলার বিভিন্ন টাকশাল থেকে মুদ্রা জারি করেন। মুদ্রার তথ্যের উপর ভিত্তি করে এখন পর্যন্ত ৪০টি টাকশালের নাম পাওয়া গেছে। গজনীর সুলতান মাহমুদ সর্বপ্রথম মুদ্রাকে 'টঙ্কা' বা 'টাকা' হিসেবে পরিচিতি প্রদান করেন। দিল্লির সুলতান ইলতুতমিশ তার স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার নাম দিয়েছিলেন 'তানকাহ' বা 'টাকা'। এছাড়াও 'টাকা জাদুঘর'-এ রয়েছে মোঘল সময়কালের 'কোচ' ও 'অহম' বা 'আসাম' মুদ্রা।

'টাকা জাদুঘর'-এর প্রদর্শনীতে বিশেষ ভাবে স্থান পেয়েছে দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুগলক শাহ, মোগল সম্রাট শাহজাহান, আওরঙ্গজেব, ফররুখশিয়ার ও ব্রিটিশ ভারতীয় স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র মুদ্রা এবং কাগজের নোট। এছাড়াও আছে ব্রিটিশ পরবর্তী পাকিস্তান আমল, স্বাধীন বাংলাদেশের মুদ্রা ও কাগজের নোটের ধারাবাহিক ইতিহাস।

জাদুঘরে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২০টি দেশের কাগজের নোট, পলিমার, হাইব্রিড নোট ও ধাতব মুদ্রা রয়েছে। জাপান ও জার্মান টাকশালের মুদ্রা তৈরির মাস্টার জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ। বিভিন্ন দেশ তথা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, সাবেক চেকোস্লোভাকিয়া, ইতালি, আফগানিস্তান, চীন, ল্যাটিন আমেরিকা, ভিয়েতনাম, লিথুনিয়া, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া এবং কমিউনিস্ট আমলের পোলিশ ব্যাংক নোট, চেক ও বন্ড। বর্তমান সময়ের যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, জামার্নি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তান এর মুদ্রা।

ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, দিবস এবং কালজয়ী ব্যক্তিদের স্মরণে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ১২টি স্মারক মুদ্রা ও ৪টি স্মারক নোট প্রকাশ করেছে। এগুলোর মধ্যে ১টি স্বর্ণের, একটি নিকেলের ও বাকিগুলো রৌপ্য মুদ্রা। এ সকল মুদ্রা ও নোটগুলো দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবে। শুধুমাত্র মুদ্রা বা নোট নয় আছে মুদ্রা তৈরির ডাইস, মুদ্রায় নির্মিত বাংলার ঐতিহ্যবাহী অলঙ্কার, বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা দ্রব্যাদি, শস্য সংরক্ষণে রাখা মাটির মটকি প্রভৃতি।

টাকা জাদুঘরের বের হবার স্থানের পাশেই আছে একটি স্টুডিও।সেখানে এক লক্ষ টাকার স্যুভেনির নোটে প্রেসিডেন্টের ছবির জায়গায় নিজের ছবি লাগিয়ে নেওয়া যায় মাত্র পঞ্চাশ টাকার বিনিময়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.