Sylhet Today 24 PRINT

যেভাবে জনপ্রিয়তা পেলেন স্ট্যান লি

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৩ নভেম্বর, ২০১৮

মার্কিন কমিক বই লেখক, মার্ভেল কমিকসের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং স্পাইডার ম্যান, আয়রন ম্যান, ফ্যান্টাস্টিক ফোর, দ্য ইনক্রেডিবল হাল্কের মতো জনপ্রিয় সুপারহিরোদের স্রষ্টা স্ট্যান লি ৯৫ বছর বয়সে মারা গেছেন।

১৯৬১ সালে তিনি "লী দ্য ফ্যান্টাস্টিক ফোর ফর মার্ভেল কমিকস" তৈরি করেন। সেই থেকে তাকে পপ কালচারের জনক হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লি নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন বলে জানা গেছে। তার মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মিডিয়া অঙ্গনের তারকাসহ অসংখ্যা ভক্ত অনুরাগী।

স্ট্যান লির জন্ম ১৯২২ সালে একটি অসচ্ছল ইহুদি পরিবারে। তার পরিবার এসেছিল রোমানিয়া থেকে। কমিকসে তার ক্যারিয়ার শুরু হয় টাইমলি পাবলিকেশনের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটি ছিল তার এক আত্মীয়ের। কমিক চরিত্র তৈরির অসাধারণ পারদর্শিতার কারণে মাত্র ১৮ বছর বয়সে "সম্পাদকের" পদ লাভ করেন তিনি।

তার নাম মূলত স্ট্যান লিবারম্যান হলেও তিনি পরবর্তীতে "লি" হিসেবে নিজের পরিচয় সৃষ্টি করেন।

তরুণ বয়সীদের আকৃষ্ট করতে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্ভেলে ক্রাইম, হরর এবং ওয়েস্টার্ন কমিক স্টোরি নিয়ে কাজ করেন স্ট্যান লি। সে সময় তার কমিকস ভীষণ জনপ্রিয় হলেও লি যেন আরও ভিন্ন কিছু করার চেষ্টায় ছিলেন। পরে ৪০ বছর বয়সে তিনি কমিকস দুনিয়াকে বিদায় জানাতে চাইলেও তার স্ত্রী জোয়ান তাকে উৎসাহ দেন নিজের সেই চরিত্রগুলো নিয়ে লিখতে যেটা লি সব সময় চেয়েছিলেন।

১৯৬১ সালে লি এবং শিল্পী জ্যাক কারবি দুজন মিলে ফ্যান্টাসটিক ফোর তৈরি করেন। যেখানকার চারটি চরিত্রের রয়েছে চার ধরণের বৈশিষ্ট্য। এরা জীবন ঘনিষ্ঠ সমস্যার সমাধান করে থাকে। এই ফ্যান্টাসটিক ফোর শুধু লি এর জীবন নয় বরং বদলে দেয় গোটা কমিকস ইন্ডাস্ট্রিকে। এ সময় টাইমলি পাবলিকেশনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মারভেল। যা শুরু করে কমিক বুকের সোনালী যুগের।

মার্ভেলের বহু চরিত্র সে সময় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যায়। বছরে মার্ভেলের ৫ কোটি কপি বিক্রি হওয়া সেটারই জানান দেয়। কেননা প্রতিটি চরিত্রের সঙ্গে লি সংমিশ্রণ করেছেন সে সব বৈশিষ্ট্যের যেগুলো প্রতিটি ছেলে মেয়ে তাদের কিশোর বয়সে মুখোমুখি হয়েছিল।

যেমন ব্রন হওয়া, খুশকির সমস্যা, হাত পায়ের নখ বাড়তে থাকা ইত্যাদি।

তার "ব্ল্যাক প্যানথার" ইতিহাসের প্রথম কোন কমিক সুপারহিরো যার গায়ের রং কালো। এছাড়া অন্ধ সুপারহিরো ডেয়ারডেভিল এবং মানবতার প্রতিমূর্তি সিলভার সার্ফার যোগ করেছিল নতুন মাত্রা। প্রতিটি কমিক চরিত্রের আঁকিয়েদের কৃতিত্ব দিতেও ভুলতেন না লি। এ কারণে তার নামের সঙ্গে সঙ্গে কমিস পাগলদের কাছে প্রিয় নাম হয়ে ওঠে কারবি, ফ্র্যাঙ্ক মিলার, জন রমিটান্ডসহ আরও অনেক শিল্পী।

১৯৭১ সালে মারভেল থেকে অবসর নেন লি। তবে কমিকস জগত থেকে তখনও তিনি বিদায় জানান নি। ২০০১ সালে তিনি পারভিওর অফ ওয়ান্ডার- পিওডব্লিউ নামে নতুন একটি এন্টারটেইনমেন্ট প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এর কাজ কমিকস চরিত্রগুলোকে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন প্রোগ্রামে নিয়ে আসা।

অর্ধশত বছরের পুরনো চরিত্রগুলোকে নতুন আদল দিতেই লি নতুন এই পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামেন। যার সফলতা প্রচার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

এক্স মেন, স্পাইডারম্যান, আয়রন ম্যান ফ্যান্টাসটিক ফোর, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, হাল্ক, ডেয়ারডেভিল এবং অ্যাভেঞ্জার্সকে নিয়ে হলিউড চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে যার বেশিরভাগের খ্যাতি ছিল আকাশচুম্বী। এরমধ্যে স্পাইডারম্যানকে ঘিরে দুটো ছবি আয় করেছে ১৬০ কোটি ইউএস ডলার

এছাড়া ক্রিস ইভানসের রূপ দেয়া ক্যাপ্টেন আমেরিকার তিনটি চলচ্চিত্র আয় করেছে ২২৪ কোটি ইউএস ডলার। রবার্ট ডাউনির আয়রন ম্যান একটি সিনেমা থেকে আয় করে ২৪০ কোটি ইউএস ডলার।

লি এরপর তার কাজ শুরু করেন ডিজিটাল গ্রাফিক নভেল নিয়ে। ২০১৬ সালের কমিক-কনে তার "স্ট্যান লি'স গড ওয়ক" এর প্রিন্ট ভার্শন ২০১৭ সালের ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাবলিশার বুক অ্যাওয়ার্ডসের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভয়েজ পুরস্কার অর্জন করে।

পরে লি এর দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে শুরু করেন। কমিক বই লেখা বা পড়ার মতো অবস্থাও তার ছিল না।

২০১৬ সালে এক রেডিও সাক্ষাতকারে লি জানান যে তিনি পড়ার ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন।

"লি" ছিলেন একজন ভাগ্যে বিশ্বাসী মানুষ। যখনই তাকে তার কোন ভক্ত জানতে চান যে সবচেয়ে বড় সুপার পাওয়ার কি। তিনি একটাই উত্তর দেন। আর সেটা হল "ভাগ্য"।

স্ট্যান লি এর মতে সৌভাগ্য থাকলে সবকিছুই সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.