Sylhet Today 24 PRINT

শিমুলবনে বসন্ত

দেবাশীষ রনি |  ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

বৃক্ষপ্রেমী জয়নাল আবেদীনের শিমুল বাগানে বসন্ত আসার আগেই ফাগুনের আগুন লেগেছে। সহস্র রক্তিম লাল শিমুল দেখে যেন মনে হয়, বসন্ত এসে গেছে। প্রকৃতি আর মানব কল্পনার এক অপরূপ মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে এই শিমুল বাগানে।

তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট (উত্তর) ইউনিয়নের সুদৃশ্য জাদুকাটা নদীর তীর ঘেঁষেই মানিগাঁও গ্রাম। এ গ্রামে জয়নাল আবেদীনের ২ হাজার ৪০০ শতক জমি। সে জমিতে প্রায় তিন হাজার শিমুলগাছ।

গাছে গাছে টকটকে লাল শিমুল ফুল যেমন আছে, তেমনি হালকা কমলা রঙের ফুলও আছে। বিশাল সে শিমুল বাগানের এক প্রান্তে দাঁড়ালে অন্য প্রান্ত দেখা যায় না। বাগানের মাঝখানে লাগানো লেবুর গাছগুলো বাগানকে দুইটি ভাগে বিভক্ত করেছে।

সারিবদ্ধভাবে সুন্দর পরিকল্পনা করে বাগানটি তৈরি করা হয়েছে। বাগানের ভেতর যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই শিমুলগাছের সারির সৌন্দর্য। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এতো বিশাল শিমুল বাগান দেশের আর কোথাও নেই।

শিমুলের রক্তরাঙা সৌন্দর্য দেখতে ৬ ফেব্রুয়ারি কাকডাকা ভোরে সিলেট নগরীর কুমারগাঁও থেকে বাসে করে যাত্রা শুরু। ঘোরাঘুরির সঙ্গী যথারীতি বন্ধু বিশ্বজিৎ সূত্রধর ও তাপস সূত্রধর। সুনামগঞ্জ পৌঁছে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আবদুজ জহুর সেতু থেকে মোটরবাইকে করে গ্রামের ধূলিময় পথ ধরে দুপুর বেলা পৌঁছাই শিমুলবাগানে।

অনেকটা ক্লান্তি নিয়ে পৌঁছে সহস্র রক্তিম লাল শিমুল দেখে মন জুড়িয়ে যায়। বাগানের ভিতরে যেদিকে তাকাই শুধু লাল আর লাল। গাছে গাছে লাল ফুল। আবার গাছের নিচে মাটিতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ফুল। গাছ থেকে ফুল মাটিতে পড়ছে, থপ করে শব্দ হচ্ছে। ধূলিমাখা মাটিতেও যেন ফুলে ফুলে সাজানো লাল গালিচা। এ যেন সত্যিই রূপকথার এক রাজ্য।

এমন দৃশ্য দেখে মন-শরীরের সকল ক্লান্তি তখন দূর হয়ে যায়। বসন্ত আসার আগেই অজস্র ফুটন্ত শিমুল ফুল যেন বলে দিচ্ছে, বসন্ত এসে গেছে।

যেভাবে যাবেন: সিলেট শহরের কুমারগাঁও বাস স্ট্যান্ড হতে সরাসরি সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কপথে বাসে করে সুনামগঞ্জ। বাস ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১০০ টাকা। সুনামগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন আবদুজ জহুর সেতু থেকে মোটরবাইকে করে যেতে হবে শিমুল বাগানে। প্রতিটি মোটরবাইক ভাড়া নিবে আসা-যাওয়ার জন্য ৬০০-৮০০ টাকা। চাইলে প্রাইভেট গাড়িতে করেও যেতে পারবেন। গাড়িতে করে জাদুকাটা নদীরপাড়ে লাউয়ের গড় বাজার পর্যন্ত যাওয়া যায়। নৌকায় নদী পার হয়ে টিলার রাস্তা ধরে কিছুটা ওপরে উঠলেই একটি ছোট বাজার। বাজারের বাম দিকে কাঁচা রাস্তা ধরে কিছুক্ষণ হাটলেই পৌঁছে যাবেন শিমুল বাগানে।

সচেতনতা: একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে পরিবেশ হুমকিতে পড়ে এমন কিছু অবশ্যই করা চলবে না। পলিথিন বা প্লাস্টিকের বোতলসহ পরিবেশ বিপন্ন হয় তেমন কিছু মনের অজান্তেও ফেলে আসবেন না শিমুল বাগানে। খাবারের প্যাকেট যেখানে-সেখানে ফেলে আসবেন না। প্রকৃতিকে বেঁচে থাকতে দিন তার নিজের মতো করে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.