Sylhet Today 24 PRINT

শান্তালয় : পরিবেশবান্ধব এক শৈল্পিক বাড়ি

শাবুল আহমেদ, বিয়ানীবাজার |  ২১ আগস্ট, ২০১৫

প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য নান্দনিক ঘর বাড়ি। প্রকৃতির নয়নাভিরাম পরিবেশে নির্মিত এসব ঘর-বাড়ির লোকজন বেশীরভাগ ইউরোপ-আমেরিকায় বসবাস করে থাকেন। স্থাপত্যশৈলীর নান্দনিকতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এ ঘর-বাড়িগুলোর দিকে তাঁকালে সৌখিনতার পাশাপাশি অর্থ-বৈভবের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে।

বিয়ানীবাজার পৌরশহরের খাসা গ্রামে তেমনি একটি বাড়ি ‘শান্তালয়’। পৌরশহর থেকে দু’ কিলোমিটার উত্তরে ঐতিহ্যবাহী বারপালের দীঘিঘেষা ইমামবাড়ি রোড সংলগ্ন সড়কে এ বাড়ির অবস্থান। দেখতে খানিকটা আমেরিকান দুতাবাসের আদলে হওয়ায় অনেকে বাড়িটিকে ‘আমেরিকান দুতাবাস’ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। সম্পূর্ণ সিরামিক ইট দিয়ে তৈরী বাড়িটির মূল নকশা প্রণয়ন করেছেন স্থপতি আহসানুল হক রুবেল ও নিজাম উদ্দিন ঠাকুর। প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুট জায়গায় অবস্থিত বাড়িটির বৈশিষ্ট্যের অন্যতম বিশেষত্ব হলো- দু’স্থর বিশিষ্ট দেয়াল এবং ন্যাচারাল এয়ারসারকোলেট ব্যবস্থা। যার ফলে আলো-বাতাসের লুকোচুরি খেলা অনুভব করা যায়।

২০০৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে খাসাগ্রামের বাসিন্দা শায়েস্তা মিয়ার পুত্র যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আজিজুর রহমান, যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুজিবুর রহমান কুনু, মুহিবুর রহমান মুহিব ও হাসান শাহরিয়ার বাড়িটি তৈরীর উদ্যোগ নেন। ফলশ্রুতিতে ২০০৫ সালের শেষের দিকে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। দু’ বিঘা জায়গার মধ্যে আড়াই হাজার বর্গফুটের ওপর গড়ে তোলা এ বাড়িটিতে রয়েছে ৩টি বেড রুম, ১টি সিটিং রুম, ৪ টি বাথরুমসহ ডাইনিং, কিচেন ও রিডিং রুম। শান্ত্যালয়ের আশে-পাশে রয়েছে নানা প্রজাতির ফুল, বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছ। বিশেষ করে বকুল, শিউলি, কামিনী, টগর, চেরী, বেলীফুল ও আম, কাঁঠাল, কামরাঙাসহ রয়েছে বিভিন্ন ঔষধিগাছ। এবং বাড়ির ছাদে রয়েছে সাতকরা, বাউকুল, জাম্বুরা। এছাড়া ছাদের মধ্যে বিভিন্ন রকমের মৌসুমী সবজির চাষও করা হয়।

শান্তালয়ের পুরো ইন্টেরিয়র জুড়ে রয়েছে নজরকাড়া ডিজাইন। ইন্টেরিয়রের ডিজাইনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির অভিরুচির পাশাপাশি ঘটানো হয়েছে বৈচিত্রের নানা বহিঃপ্রকাশ। আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে সিটিংরুমে ব্যবহার করা হয়েছে গরুর গাড়ির চাকা দিয়ে তৈরী টেবিল এবং হুইল দিয়ে তৈরী আসন (চেয়ার)। দেয়াল জুড়ে টানানো হয়েছে জলরঙ এবং তেল রঙের বিভিন্ন রকমের পেইন্টিং।

‘বাড়ির লোকজন বেশীরভাগ প্রবাসে থাকার কারনে বসবাসের জন্য রুমের চাহিদা না থাকায় উপর তলার কাজ করা হয়নি’ উল্লেখ করে বাড়ির স্বত্বাধিকারী সাংবাদিক ও সংগঠক হাসান শাহরিয়ার বলেন, ‘মূলত একটি সুন্দর বাড়ির স্বপ্ন নিয়ে শান্তালয় তৈরীর উদ্যোগ; এক পর্যায় ঢাকায় বসবাসরত মামাতো ভাই স্থপতি রুবেলের কাছে আমাদের চিন্তা-চেতনাগুলো তুলে ধরি। পরবর্তীতে তিনি এবং তাঁর সহকর্মী স্থপতি নিজাম উদ্দিন ঠাকুর এ বাড়িটির নকশা প্রণয়ন করে দেন।’

স্থপতি আহসানুল হক রুবেল বলেন, ‘আমাদের ৩ হাজার বছরের ঐতিহ্য ধারণ করতে গিয়ে ব্রিক দিয়ে বাড়িটি নির্মাণের পরিকল্পনা নিই এবং প্রথাগত বাড়ির আদলে উঠান নির্ভর এই আধুনিক বাড়ির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করি। বিশেষ করে বাংলাদেশ ট্রপিক্যাল ক্লাইমেট জোনের আওতায় থাকায় বৃষ্টি, আলো-বাতাস সবকিছুর কথা মাথায় রেখে মূল নকশা তৈরী করা হয়।’

তিনি জানান, দু’স্থর বিশিষ্ট দেয়াল এ বাড়িতে ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে গ্রীষ্মকালীন গরম আবহাওয়ায় ভিতরে বসবাস আরামদায়ক। বাহিরের তাপমাত্রা থেকে ভেতরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি কম থাকে। আবার শীতকালে বাহিরের তাপমাত্রা থেকে ভেতরের তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি বেশী থাকে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.