Sylhet Today 24 PRINT

দেশীয় ফলের গুরুত্ব ও সংরক্ষণের প্রাকৃতিক উপায়

বিজিত কুমার আচার্য্য |  ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

আমাদের দেশ আজ যেভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে সেভাবে আমাদের উচিত ফল চাষেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। আমাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার অথচ আমরা প্রতিদিন গড়ে ২০ গ্রামের নিচে ফল গ্রহণ করে থাকি। যা আমাদের দেহের জন্য মোটেও কাম্য নয়। এই ফলের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে আমাদেরকে দেশীয় ফলের আবাদ বৃদ্ধি করা দরকার। নতুবা দেহের পুষ্টি সাধনে ব্যর্থ হব।

শর্করা আমাদের দেহের তাপ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। খাদ্য প্রাণ দেহকে রাখে সুস্থ, সবল, রোগমুক্ত এবং সুগঠিত। আমাদের দেহের জন্য যে কয়টি খাদ্য উপাদানের দরকার তার প্রায় সব কয়টি উপাদানই আমরা ফল থেকে পেতে পারি। কেননা ফলে খাদ্যের ছয়টি উপাদানই বিদ্যমান। তাই আমাদের উচিত ফলদ বৃক্ষ রোপণ করে তা থেকে নিরাপদ বিষমুক্ত ফল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা।

দেশীয় ফল উৎপাদনের ফলে আমাদের দেশীয় ফলের প্রসার ঘটবে বেশি করে উৎপাদন করলে বিদেশ রপ্তানিও করা যাবে। তাজা ফল পাওয়া যাবে। আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায় বেশি বেশি ফলন হবে। বিদেশ হতে ফল আমদানি কম হবে এতে আমাদের আর্থিক সাশ্রয় ঘটবে। দেশীয় প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বাড়বে। দেশীয় ফল গ্রহণের দ্বারা আমরা সহজেই অপুষ্টি দ্রুত দূর করা সম্ভব।

দেশী ফল গাছ লাগানোর জন্য উঁচু বন্যা মুক্ত স্থান নির্বাচন করা উচিত। উক্ত স্থানটিতে ১মিঃ দৈর্ঘ্য, ১মি. প্রস্থ এবং ১ মি. গভীরতা করে মার্চ-এপ্রিল মাসে ১০ কেজি পচা গোবর, ৫০০ গ্রাম করে এমওপি, জিপসাম ও টিএসপি সার, ৫০ গ্রাম বোরন সার দিয়ে গর্তের মাটি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। জুন-জুলাই মাসে গর্তের চারপাশের আবর্জনা পরিস্কার করে ভাল জাতের মাতৃগুণ সম্পন্ন ফলের চারা রোপণ করতে হবে।

ছাদ/ টবেও দেশী ফল চাষ করা যায়। গাছ লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়ায় পানি জমা না থাকে এবং প্রতিটি গাছের দূরত্ব কমপক্ষে যেন ৫ মি. হয়। গাছ লাগানোর পর নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, পানি দেওয়া, বছরে দুইবার সার প্রয়োগ করা উচিত।

সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে কলম করা চারা গাছে দুই-আড়াই বছরে এবং বীজের গাছ হতে ফল ভেদে ৩-৬ বছরে ভাল ফলন পেতে পারি। এছাড়া গাছ কিংবা ফল রোগাক্রান্ত হলে নিকটস্থ ইউনিয়ন, সিটি করর্পোরেশনের কৃষি পরামর্শ কেন্দ্র হতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার নিকট হতে বিনামূল্যে সেবা গ্রহণ করা যেতে পারে।

বছরব্যাপী আমাদের ফলের চাহিদা থাকে কিন্তু ফল উৎপাদন সম্ভব নয়। তাই দেশীয় উপায়ে আমরা নানাভাবে ফল সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে পারি। যার মাধ্যমে ফলের পুষ্টি ও গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রেখে উপযুক্ত পরিবেশে ভবিষ্যতে ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় দেখা যায় যে, তাজা ফল, ফ্রোজেন এবং প্রক্রিয়াজাত করণ যে অবস্থায়ই খাওয়া হোক না কেন তার বর্ণ, গন্ধ, গ্রহণ যোগ্যতা এবং পুষ্টিমানের দিক দিয়ে একই রকম।

প্রক্রিয়াজাত করণে আমাদের প্রথমেই ফল বাছাই, ধৌতকরণ, খোসা ছাড়ানো এবং ফলগুলোকে সুন্দর করে টুকরো টুকরো করার পর তা সিদ্ধকরণ করে ফ্রিজিং, ক্যানিং, হলুদের ও মরিচের গুড়া তেল দিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। লবণ কিংবা চিনির সিরা তৈরি করে তাতে ফল প্রক্রিয়াজাত করা যায়। জ্যাম, জেলি তৈরি করেও ফল সংরক্ষণ করা যায়। আবার কিছু কিছু ফল রৌদ্রে শুকিয়েও সংরক্ষণ করে সারা বছর ব্যবহার করতে পারি। যেমন আম, বড়ই, তেঁতুল ইত্যাদি।

  • বিজিত কুমার আচার্য্য: কৃষিবিদ; উপ-সহকারী কৃষি অফিসার, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.