Sylhet Today 24 PRINT

করোনাভাইরাস: আতঙ্ক নয়, দায়িত্বশীল হোন

ডা. জাহিদুর রহমান |  ০৮ মার্চ, ২০২০

যারা বাংলাদেশে ৩ জন নভেল করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাওয়া নিয়ে বিমানবন্দরের দুর্বল স্ক্রিনিং পদ্ধতিকে দায়ী করছেন তাদের উদ্দেশ্যে পুরনো কিছু কথা আবার নতুন করে বলার প্রয়োজনবোধ করছি।

থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে ভাইরাস সনাক্ত করা যায় না। এটি থাকলে ভালো, না থাকলেও ডিজিটাল বা এনালগ থার্মোমিটার দিয়ে এটির কাজ চালিয়ে নেয়া যায়। এই দুটো যন্ত্রের কাজই হল শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করা। সুতরাং থার্মাল স্ক্যানার না থাকা বা নষ্ট থাকার কারণে ভাইরাস সনাক্ত করা যায়নি, কথাটা শতভাগ ভুল। বিশ্বের সবচে উন্নত রাষ্ট্রেও বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস সনাক্ত করার কোন পরীক্ষা করা হয় না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো থেকে কেউ দেশে প্রবেশ করলে (যার ভিতরে ইতালিও আছে), যদি তার কোন শারীরিক লক্ষণ থাকে তখন তাকে আইসোলেশন করা হয় এবং লক্ষণ না থাকলে তাকে কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারাইন্টাইন করে রাখা হয়। উল্লেখিত দুজন ব্যক্তির যেহেতু কোন শারীরিক লক্ষণ ছিল না, সেহেতু তাকে আইসোলেশন নয়, কোয়ারাইন্টাইন করার কথা। এই কোয়ারাইন্টাইন আবার দুই ধরণের, একটা জোর করে, সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কোন স্থানে করা হয়। আরেকটা স্বেচ্ছায়, অর্থাৎ সন্দেহভাজন ব্যক্তি নিজ উদ্যোগেই নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় একেক দেশে একেক ধরণের কোয়ারাইন্টাইন করা হচ্ছে।

আইইডিসিআর-এর বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে উল্লেখিত দুজন সেলফ কোয়ারাইন্টাইনে ছিলেন। শরীরে লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে তারা আইইডিসিআর-এ যোগাযোগ করেন। আইইডিসিআর সাথে সাথে তাদের সাথে যোগাযোগ করে, নমুনা সংগ্রহ করে, পরীক্ষা করে এবং SARS CoV-2 সংক্রমণের প্রমাণ পায়। পরবর্তীতে রোগীদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্থাপিত আইসোলেশন সেন্টারে স্থানান্তরিত করা হয়। এই ধরণের রোগী পাওয়া গেলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম এবং সবচে জরুরি কাজই হল এই আইসোলেশন।

পরবর্তী জরুরি কাজ হল, 'কন্টাক্ট ট্রেসিং'। অর্থাৎ ইতালি ত্যাগের পর থেকে (যে ফ্লাইটে এসেছে সেটিসহ) এই দুজন রোগী এখন পর্যন্ত যতজন মানুষের ক্লোজড কন্টাক্টে এসেছে তাদের খুঁজে বের করা। তারপর তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলক কোয়ারাইন্টাইন করা হবে এবং তাদের মধ্য থেকে কারো লক্ষণ প্রকাশ পেলে আইসোলেশন করা হবে। তারপর আবার সেই আইসোলেশন করে রাখা রোগীর কন্টাক্ট ট্রেসিং শুরু হবে। কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাথে সরাসরি কথা বলে জানতে পারলাম আইডিসিআর খুব গুরুত্বের সাথে কাজটি শুরু করেছে।

নভেল করোনাভাইরাস এখন পর্যন্ত যে কয়টি দেশে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যেমন চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, জাপান, ইরান, এদের অধিকাংশ উন্নত আয়ের দেশ। আমাদের থেকে তারা জিডিপি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, নাগরিক সচেতনতা, সবদিক থেকেই এগিয়ে। তারপরও কিন্তু তারা নভেল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ একটাই, শত্রু অচেনা, লক্ষণগুলো সাধারণ সর্দি কাশির মত। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তাই সব দেশেই কম ছিল। ভাইরাস সনাক্ত হওয়ার আগেই অনেকের মধ্যে সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে।

প্রতিটি জীবনই মূল্যবান। কেউ মারা গেল না, অথচ আমার অসতর্কতা কিংবা সচেতনতার অভাবে আমার বুড়ো বাপটা মরে গেল, আমার কিন্তু সবই গেল। তখন কিন্তু কোন পরিসংখ্যান আমাকে সান্ত্বনা দিতে পারবে না। সুতরাং সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার পাশাপাশি নিজের দায়িত্বটুকুও পালন করুন। এই মুহূর্তে এটি খুবই জরুরি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সিডিসি এবং বাংলাদেশের আইইডিসিআর এর ওয়েবসাইটে গেলে এই বিষয়ে সব ধরণের নির্দেশনা পাবেন। সবার পরে আক্রান্ত হওয়ার কারণে আমরা কিন্তু প্রস্তুতি নেয়ার অনেক সুযোগ পেয়েছি। আসুন সবাই মিলে সেই সুযোগটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করি।

ডা. জাহিদুর রহমান: ভাইরোলজিস্ট, সহকারী অধ্যাপক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.