Sylhet Today 24 PRINT

পাশাপাশি মন্দির-মসজিদ, সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

রিপন দে, মৌলভীবাজার  |  ১৫ মার্চ, ২০২০

বিশ্বব্যাপী একটি অস্থির সময় কাটছে। সাম্প্রদায়িক হানাহানি লেগে আছে দুনিয়াজুড়ে। এই অস্থিরতার মধ্যে দৃষ্টান্ত হয়ে মসজিদের মিনার আর মন্দিরের চুড়া এক সাথে মিশে আছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ভৈরবগঞ্জ বাজারে। ৭৩ বছর ধরে একে অপরের গা ঘেঁষে দাঁড়ীয়ে আছে ভৈরবগঞ্জ বাজারের ভৈরব মন্দির আর মাজদিহি জামে মসজিদ। যা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন। যা এই এলাকার মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সৃষ্টি করেছে।

এই মন্দির ও মসজিদে শান্তিপূর্ণভাবেই দুই ধর্মের মানুষ এখানে যার যার ধর্মকর্ম পালন করে আসছেন। এখানে পাশাপাশি মন্দির মসজিদ থাকায় দুই ধর্মের মানুষই একে অন্যের ধর্মীয় আচার সম্পর্কে জানতে পারছেন। যা সমাজে বিভেদহীন চলাফেরার সহায়ক বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুইশত বছর আগে এখানে মন্দির স্থাপিত হয় এবং প্রায় ৭৩ বছর বছর আগে মসজিদ। গত ৭৩ বছরে দেশে অনেক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস-সংঘাতের ঘটনা ঘটলেও তার প্রভাব এখানে পড়েনি। দুই প্রতিষ্ঠান একসাথে প্রায় ২০ গজের ব্যবধানে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানে রয়েছে। প্রথমে দুই স্থাপনার মধ্যে কোন দেয়াল বা স্থাপনা ছিল না তবে বর্তমানে দেয়াল উঠেছে।

স্থানীয় কালাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মজুল জানান, এই মন্দিরের পাশেই একসময় বাজার গড়ে উঠে যা এখনো ভৈরব বাজার নামে পরিচিত। লোকমুখে প্রচলিত তথ্য মতে, প্রায় দুইশত বছর পূর্বে পুণ্যদত্তের পরিবার ভৈরব মন্দির স্থাপন করেছিলেন। এর পর এখানে মসজিদ স্থাপন করা হয় ১৯৪৭ সালের দিকে।

এলাকাবাসী ও মাজদিহি চা বাগানের কর্তৃপক্ষ নিজেদের অর্থায়নে মসজিদটি স্থাপন করেন। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই দুই ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে ধর্মকর্ম পালন করে যাচ্ছেন।

মসজিদের ইমাম মৌলানা জাফর আহমদ জানান, ১৫ বছর ধরে এখানে খতিবের দায়িত্ব পালন করছি। প্রায় ৭৩ বছরের ইতিহাসে এখানে দুই ধর্মের মধ্যে কোন তিক্ততার ঘটনা নেই। এই সময়ে কোনদিনও তাদের মধ্যে মনঃক্ষুণ্ণতা সৃষ্টি হওয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি।

তিনি জানান, নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর প্রায়ই ভৈরব মন্দিরের পুরোহিত জন্মজয় ভট্টাচার্যের সাথে দেখা হয়। তখন তারা সেখানে কুশল বিনিময় করেন।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই এভাবে দেখে আসছি। নিজেও ৪০ বছর ধরে এই মসজিদে নামাজ পড়ছি। আমরা বরং একে অপরের সমস্যায় এগিয়ে আসি। আমাদের কোন সমস্যা নেই।

এই এলাকার কবি শেখ শাহ্‌ জামাল আহমদ জানান, দুই ধর্মের মানুষ কাছাকাছি দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন। এখানে কোন ধরণের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনা ঘটেনি বা সমস্যা হয়নি। মন্দিরে প্রায়ই অনেক রাত পর্যন্ত পূজা ও কীর্তন হয়। এতে কারো কোন সমস্যা হয় না বরং দুই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেই প্রতিদিন এলাকার মুসল্লি ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা আসেন। এটি অন্যরকম ভাল লাগে।

স্থানীয় চাতালী চা বাগান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয় নুনিয়া জানান, নতুন প্রজন্ম পাশাপাশি এই মন্দির এবং মসজিদ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

মন্দিরের পুরোহিত জন্মজয় ভট্টাচার্য জানান, এখানে উভয় ধর্মের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজমান রয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের নিমন্ত্রণ দিলে তারাও আসেন অনুষ্ঠানে। আমরা অনেক রাত পর্যন্ত মাঝে মাঝে কীর্তন করি শুধু নামাজের সময়ে আমাদের বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ নিয়ন্ত্রণে রাখি যেনও তাদের সমস্যা না হয়। পূজার্চনায় মুসল্লিভাইয়েরা সহায়তাও করেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.