Sylhet Today 24 PRINT

জিপি-রবির ব্যান্ডউইথ: হুঁশিয়ারি দিয়ে পিছু হটল বিটিআরসি

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৮ জুলাই, ২০১৯

নিরীক্ষা আপত্তির ‘পাওনা’ টাকা নিয়ে টানাপড়েনের জেরে গ্রামীণফোন ও রবির ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়ার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, ‘গ্রাহকের সমস্যা হওয়ায়’ ১৩ দিনের মাথায় তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

তবে টাকা আদায়ের জন্য বিটিআরসি ওই দুই অপারেটরের যাবতীয় কাজের ‘এনওসি’ বন্ধের মত কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে বলে কমিশনের চেয়ারম্যান জহুরুল হক জানিয়েছেন।

গ্রামীণফোন ও রবির নিরীক্ষা আপত্তির বিষয়টি তুলে ধরে বুধবার বিটিআরসি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ওই নিরীক্ষা করা হয়েছিল হাই কোর্টের নির্দেশে। পাওনা আদায়ে একাধিকবার চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাড়া মেলেনি।

“রাষ্ট্রীয় টাকা আদায়ে ব্যান্ডউইথ বন্ধ করে দিলাম। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাথে গতকাল বৈঠক হয়েছে, তিনি এটি প্রত্যাহার করতে বলেছেন। ব্যান্ডউইথ বন্ধ করায় সাধারণ লোকের সমস্যা হয়েছে। ব্যান্ডউইথ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।“

বিটিআরসি প্রধানের ওই সংবাদ সম্মেলনের পর বিকালে কমিশনের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট গেইটেওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে আগের নির্দেশনা প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়।

বিটিআরসির দাবি, গ্রামীণ ফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং আরেক মোবাইল ফোন অপারেটর রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের।

তাগাদা দেওয়ার পরও ওই টাকা পরিশোধ না করার যুক্তি দেখিয়ে গত ৪ জুলাই গ্রামীণফোনের ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি ৩০ শতাংশ এবং রবির ১৫ শতাংশ সীমিত করতে আইআইজিগুলোকে নির্দেশ দেয় বিটিআরসি।

ওই পদক্ষেপকে ‘নজিরবিহীন’ হিসেবে বর্ণনা করে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি তখন বলেছিল, ব্যান্ডউইথ সীমিত করা হলে তাতে সাধারণ গ্রাহকই সমস্যার মুখে পড়বে।

একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আরেক অপারেটর গ্রামীণফোন বিটিআরসির সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল।

দুই কোম্পানিই নিরীক্ষা আপত্তির বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তাতে তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাড়া পায়নি।  
 
এ বিষয়ে বিটিআরসি প্রধান বলেন, “আইন অনুযায়ী টাকা তোলার চেষ্টা করা হবে। আমাদের আইনে সালিশের বিধান নাই, তারা আবার কোর্টে গেলে দেরি হয়ে যাবে। বিটিআরসির আইন অনুযায়ী টাকা দিতে হবে। এজন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি কারণ এটি রাষ্ট্রের টাকা।”

টাকা আদায়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে বিটিআরসি প্রধান বলেন, “তাদের এনওসি বন্ধ করা যায়। তার পরের স্টেপ দেখা যায় কি হয়। প্রশাসক নিয়োগের বিধানও রয়েছে। অতিসত্বর এনওসি বন্ধ করে দেব। যখন আর পারবে না তখন দেবে।”

মোবাইল ফোন সেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিটিআরসির অনাপত্তিপত্র বা ‘এনওসি’ দরকার হয় অপারেটরগুলোর। বিটিআরসি চেয়ারম্যান সেই ‘এনওসি’ দেওয়া বন্ধ করার কথা বললেও নির্দিষ্ট কোনো দিন তারিখ বলেননি।   

ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত ‘ভুল ছিল না’ দাবি করে তিনি বলেন, “কোনো ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না। এর চেয়ে বড় ধরনের উগ্যেগে যাচ্ছি।”

দুই অপারেটরের ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি ১৩ দিন সীমিত রাখায় সরকারের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে জহুরুল হক বলেন, এরকম কোনো হিসাব বিটিআরসির কাছে নেই।

বিটিআরসি ‘এনওসি’ বন্ধ করে দিলে মোবাইল ফোন অপারেটর নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ বা বিটিএস স্থাপন করতে পারবে না, যন্ত্রাংশ আমদানিরও অনুমতি পাবে না। নতুন কোনো প্যাকেজ তারা বাজারে ছাড়তে পারবে না, বর্তমান প্যাকেজে কোনো পরিবর্তনও আনতে পারবে না।

তাতে গ্রাহক নতুন করে ভোগান্তিতে পড়বে কিনা- এ প্রশ্নে জহুরুল হক বলেন, “বৃহৎ কল্যাণে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি (গ্রহকদের) মেনে নিতে হবে।”

দেশে গ্রাহকের হাতে থাকা ১৬ কোটি ৮২ হাজার নিবন্ধিত মোবাইল সিমের মধ্যে ৭ কোটি ৪৭ লাখ সিম গ্রামীণফোনের। আর রবির ৪ কোটি ৭৬ লাখ সিম রয়েছে গ্র্হাকের হাতে।

এই হিসাবে মোট গ্রাহকের ৪৬.৪৯ শতাংশ গ্রামীণফোন এবং ২৯.৬৫ শতাংশ রবির সেবা নিয়ে থাকেন।

দেশের ৯ কোটি ৪৪ লাখ ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে ৮ কোটি ৮৬ লাখই মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যা মোট গ্রাহকের ৯৩.৮৭ শতাশংশ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.