Sylhet Today 24 PRINT

বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গোটাতে চায় এয়ারটেল

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ৩১ আগস্ট, ২০১৫

বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে ভারতী এয়ারটেল। কার্যক্রম শুরুর পর গত কয়েক বছর প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়ায় বাংলাদেশের পাশাপাশি শ্রীলংকার ব্যবসাও ছেড়ে দিতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য ব্যাংকারও নিয়োগ দিয়েছে ভারতী এয়ারটেল। ভারতের ব্যবসায় সংবাদভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল মানি কন্ট্রোল ডটকম ও সিএনবিসি টিভি ১৮ এ খবর জানিয়েছে।

তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি আরো শক্তিশালী করতে তুলনামূলক দুর্বল ও অলাভজনক ব্যবসায় ইউনিট বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতী এয়ারটেল। এরই অংশ হিসেবে এয়ারটেল বাংলাদেশ ও ভারতী এয়ারটেল লংকা বিক্রি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে আরব আমিরাতভিত্তিক ইতিসালাত ও ফ্রান্সভিত্তিক অরেঞ্জের নাম আলোচনায় এসেছে।

বাংলাদেশে চার হাজার ও শ্রীলংকায় আড়াই হাজার টাওয়ারের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে ভারতী এয়ারটেল। এগুলোও বিক্রি করে দেয়ার কথা ভাবছে অপারেটরটি। এর আগে ২০১২ সালে একই ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলেও তাতে সফল হয়নি ভারতী এয়ারটেল।

এ বিষয়ে জানতে ভারতী এয়ারটেলের প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হয়। পরে এয়ারটেল বাংলাদেশের মুখপাত্র বলেন, এটা নিতান্তই গুজব। প্রতিষ্ঠানের নীতি অনুযায়ী এ ধরনের গুজবের বিষয়ে মন্তব্য করে না এয়ারটেল।

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সেলফোন অপারেটর ভারতী এয়ারটেল বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে ২০১০ সালে। সে সময় ওয়ারিদ টেলিকমের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে প্রতিষ্ঠা করা হয় এয়ারটেল বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে ওয়ারিদের কাছে থাকা বাকি ৩০ শতাংশ শেয়ারও কিনে নেয় সিঙ্গাপুরে ভারতী এয়ারটেলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ভারতী এয়ারটেল হোল্ডিংস লিমিটেড। এয়ারটেলের বিনিয়োগে বাংলাদেশের টেলিকম খাতে সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক গ্রাহক আকর্ষণে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হয়। যদিও গত পাঁচ বছরে আয় ও গ্রাহক সংখ্যায় প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে অপারেটরটি।

বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরুর পর ইতিবাচক গ্রাহক প্রবৃদ্ধি হলেও গত বছর তা নেতিবাচক হয়ে যায়। তবে চলতি বছর আবারো ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসে এয়ারটেল বাংলাদেশ। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক প্রবৃদ্ধি ছিল ১০২ শতাংশ, ২০১১ সালে ৫২, ২০১২ সালে ১৭ ও ২০১৩ সালে দশমিক ২৭ শতাংশ। আর ২০১৪ সালে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ গ্রাহক কমে যায় প্রতিষ্ঠানটির। তবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এয়ারটেল বাংলাদেশের গ্রাহক বেড়েছে ১৬ শতাংশের বেশি।

বর্তমানে দেশের ছয় সেলফোন অপারেটরের মধ্যে গ্রাহক সংখ্যার ভিত্তিতে এয়ারটেল বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে এয়ারটেল বাংলাদেশের সংযোগ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭ লাখ ৪৩ হাজার।

২০১৪ সালে মার্কেট শেয়ারও কমে আসে অপারেটরটির। ২০১০ সালে কার্যক্রম শুরুর পর প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট শেয়ার ছিল ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পরের বছরই বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে। ২০১২ সালে ৭ দশমিক ২৬ ও ২০১৩ সালে ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ মার্কেট শেয়ার অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে পরের বছর এটি কমে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর চলতি বছরের জুন শেষে এয়ারটেল বাংলাদেশের মার্কেট শেয়ার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

ভারতী এয়ারটেলের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে এয়ারটেল বাংলাদেশ ও এয়ারটেল লংকা আয় করেছে প্রায় ৩৮০ কোটি রুপি। আগের বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠান দুটির আয় ছিল প্রায় ৪৩০ কোটি রুপি। প্রান্তিকটিতে এ দুটি দেশের ব্যবসা থেকে আয় কমেছে ১১ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ও শ্রীলংকায় মূলধনি ব্যয়ও কমিয়ে আনছে ভারতী এয়ারটেল।

এশিয়ায় ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশ ছাড়াও আফ্রিকার ১৭টি দেশে টেলিযোগাযোগ সেবা দিচ্ছে গ্রাহক সংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান ভারতী এয়ারটেল। ভারতে টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি সেবার পাশাপাশি রয়েছে এম-কমার্স, ফিক্সড লাইন, দ্রুতগতির ডিএসএল ব্রডব্যান্ড, আইপিটিভি, ডিটিএইচ ও লং ডিস্ট্যান্স এন্টারপ্রাইজ সেবা চালু রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। তবে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে এয়ারটেল শুধু টুজি, থ্রিজি ও এম-কমার্স সেবা প্রদান করছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে বিশ্বব্যাপী ভারতী এয়ারটেলের গ্রাহক সংখ্যা ৩২ কোটি ৪৩ লাখ ছাড়িয়েছে।

সম্প্রতি আফ্রিকার বারকিনা ফাসো, শাদ, কঙ্গো ও সিয়েরা লিওনের ব্যবসা বিক্রি করে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় ভারতী এয়ারটেল। এ চারটি ইউনিট বিক্রির বিষয়ে ফ্রান্সের টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান অরেঞ্জের সঙ্গে আলোচনাও করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১০ সালে আফ্রিকার বাজারে প্রবেশ করে ভারতী এয়ারটেল। তবে শুরু থেকেই এ অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

ভারতের বাইরে চালু থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে গত বছর উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতী এয়ারটেল। আর এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশে তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এয়ারটেল বাংলাদেশ। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে গ্রাহক হারানোর পাশাপাশি ভারতী এয়ারটেলের সামগ্রিক লোকসানের বোঝা বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতী এয়ারটেলের আর্থিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৩ সালে ভারতী এয়ারটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারত) হিসেবে গোপাল ভিত্তাল দায়িত্ব নেয়ার পর মুনাফার ধারায় ফিরে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে ভারতের এ ব্যবসায়িক সাফল্যের ধারায় ভারতী এয়ারটেলের আফ্রিকা, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিয়ে আসতে বিশেষ পদক্ষেপের প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র : বণিক বার্তা

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.