Sylhet Today 24 PRINT

স্মার্টফোনে বড় ঝুঁকি!

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৭ অক্টোবর, ২০১৫

স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে নিয়ে এলেন  যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির (এনএসএ) সাবেক এজেন্ট এডওয়ার্ড স্নোডেন।

কতখানি সুরক্ষিত আপনার স্মার্টফোন? অপারেটর বা ফোন তৈরিকারী কোম্পানিগুলো তথ্যের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আসলে কতটা দিচ্ছে? অথবা যে রাউটারে সংযুক্ত হচ্ছে, সেই কোম্পানিই বা কতটা নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে?

সারাবিশ্বে আলোচিত এডওয়ার্ড স্নোডেনের দাবি, ছোট্ট একটি টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে যে কারও স্মার্টফোনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারার সক্ষমতা রয়েছে যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দাদের।

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে থেকে বিবিসি প্যানারোমাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,  যুক্তরাজ্যের ‘দ্য গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশন হেডকোয়াটার্স (জিসিএইচকিউ)’ যে কোনো স্মার্টফোন হ্যাক করতে পারে তার মালিককে না জানিয়েই।

জিসিএইচকিউ হল ব্রিটেনের গুপ্তচরবৃত্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান। যার কাজ সরকারকে ও সামরিক বাহিনীকে সব গুপ্ত তথ্য সরবরাহ করা ও নিরাপত্তা সতর্কতা সংকেত দেওয়া।  

স্নোডেন বলেন, “এর নাম দিয়েছে এক্সপ্লইট, এটা একটা বিশেষভাবে বানানো মেসেজ, যা আপনার ফোনে অন্যসব ম্যাসেজের মতোই আসবে। তবে আপনি মেসেজটা দেখতে পারবেন না বা জানবেনও না। টাকাটা যাচ্ছে আপনার, তবে ফোনটা হয়ে যাবে তার, যার হাতে থাকবে এর সফ্টওয়্যারটার নিয়ন্ত্রণ।”

নীল রঙের বেলজিয়ান কার্টুন চরিত্র ‘স্মার্ফ’ এর নামে ‘এক্সপ্লইটের’ বেশ কয়েকটি প্রকল্প জিসিএইচকিউয়ের রয়েছে বলে বিবিসিকে জানান স্নোডেন। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুরো প্যাকেজকে জিসিএইচকিউ বলে ‘স্মার্ফ স্যুট’। এর আবার বেশ কয়েকটি ভাগও রয়েছে।

একটি হল ‘ড্রিমি স্মার্ফ’। এটি মূলত একটি ফোনের পাওয়ার সাপ্লাই নিয়ে কাজ করে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে না জানিয়ে ফোনটি অন বা অফ করতে পারে গুপ্তচররা।

রয়েছে ‘নয়জি স্মার্ফ’; স্নোডেনের মতে এটি ‘হট মাইক ট্যুল’। এর মাধ্যমে গুপ্তচররা যে কোনো সময় ফোনের মাইক্রোফোন অন করতে পারে। এমনকি ফোন বন্ধ থাকলেও তারা মাইক্রোফোনটি অন করতে পারে।

আরকেটির নাম ‘ট্র্যাকার স্মার্ফ’। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে স্মার্টফোনটির অবস্থান শনাক্ত এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি করা যায়। ফোনের মালিক ভাবতেই পারবেন না স্বাভাবিক ফোন টাওয়ারের ত্রিমাত্রিক জিও-ট্যাগিং বা লোকেশন সার্ভিসের চেয়ে এটা কতটা বেশি নিখুঁত।

আরেকটি বিশেষ টুলের কথা জানান স্নোডেন। যার নাম, তার ভাষ্যমতে ‘প্যারানয়েড স্মার্ফ’। এটি একটা অদ্ভুত প্রোগ্রাম। ব্যবহারকারী যদি মনে করেন যে তার ফোনে কোনো সমস্যা হচ্ছে এবং তিনি যদি ফোনটি কোনো টেকনিশিয়ানের কাছে সারতে দেন, তাতেও কিছু হবে না। কেননা টেকনিশিয়ান বুঝবেনই না সমস্যাটা কী।

“তারা জানবে আপনি কাকে কল করেছেন, কী বলেছেন, কী মেসেজ পাঠিয়েছেন, কাকে পাঠিয়েছেন, কী কী ব্রাউজ করেছেন। আপানার কন্ট্যাক্ট লিস্ট, কোথায় কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে কথা বলছেন, কোন ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হচ্ছেন। সবকিছু,” বলেন স্নোডেন।

“এবং আপনি ভাবতেও পারবেন না তারা কী কী পারে। আপনার অজান্তে আপনার ছবিও তুলতে পারে।”

ফোন হ্যাক করার প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিশাল অঙ্কের অর্থও ঢালছে বলেও জানান স্নোডেন।  

“তারা আপনার বদলে চায় আপনার ফোনের মালিকানা।”

নাসারও এই ধরনের প্রযুক্তি আছে বলেও জানান স্নোডেন। যদিও নাসা বা জিসিএইচকিউ সবার তথ্যে আগ্রহী তা তিনি বলছেন না, তবে তথ্য খুঁজতে গেলে গেলে কেউ আসলে বাদ পড়ে না।

“যদিও তারা বলছেন, আর বেশিরভাত ক্ষেত্রে তা সত্যও, যে তারা আপনার ই-মেইল পড়ছে না, কিন্তু যদি পড়ে আপনি জানবেনও না।”

তারা আসলে সেসব লোকদের টার্গেট করে যারা নাশকতা বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত, বলেন স্নোডেন।

তবে এদেরকে খুঁজতে গেলে আসলে বিশাল আকারের ডেটা নিয়ে কাজ করতে হয় বলে সবাই এর ভিতরে পড়ছেন বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।  

স্নোডেনের এই দাবির বিষয়ে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বিষয় বলে কোনো মম্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।

তবে এক বিবৃতিতে জিসিএইচকিউ বলেছে, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সক্ষমতার ক্ষেত্রে স্নোডেন অনেক বড় একটা ক্ষতি করে দিলেন।

২০১৩ সালে এনএসএ'র গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনা ফাঁস করে দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার স্নোডেনের উপর ক্ষুব্ধ হয়।ওই বছরের মে মাসে তিনি পালিয়ে রাশিয়ায় যান এবং বর্তমানে সে দেশে সাময়িক আশ্রয়ে আছেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.