Sylhet Today 24 PRINT

মহামারী করোনাভাইরাসের মধ্যেই কঙ্গোতে নতুন করে ইবোলার হানা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক |  ০২ জুন, ২০২০

নভেল করোনাভাইরাস সৃষ্ট কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেই কঙ্গোতে নতুন করে হানা দিল ইবোলা ভাইরাস। সোমবার ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর সরকার ঘোষণা দিয়েছে, ইকুয়াতিউর প্রদেশের এমবানদাকার ওয়ানগাতা হেলথ জোনে নতুন করে ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে।

কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে ইবোলার প্রাদুর্ভাবের ইতিহাস বেশ পুরনো। সেই ১৯৭৬ সাল থেকে এ ভাইরাসের সঙ্গে লড়ছে এই অঞ্চলের মানুষ। তবে এবারের লড়াইটা তাদের জন্য একটু ভিন্ন। কেননা বিশ্বের ইতিহাসে ভয়ংকরতম ভাইরাসবাহী রোগ কভিড-১৯ নিয়ে লড়াইয়ের মধ্যেই ইবোলার হানা পড়লো। এছাড়া হামের সঙ্গে দেশটির চলমান লড়াইও বিশ্বের মধ্যে দীর্ঘতম। তবে ধারণা করা হচ্ছে, কঙ্গোয় এটাই ইবোলার চূড়ান্ত প্রাদুর্ভাব।

কঙ্গোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, ওয়ানগাতায় ছয় ব্যক্তি ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে চারজন মারা গেছেন ও দুজনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ছয়জনের মধ্যে তিনজনের দেহে ইবোলার উপস্থিতি ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় নিশ্চিত করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখানে আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত, তাই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রোস অ্যাডহানোম গেব্রেইসাস বলেন, ‘এটা আমাদের মনে করিয়ে দিল যে, কভিড-১৯ একমাত্র স্বাস্থ্য ঝুঁকি নয় যা এ মুহূর্তে মানুষ মোকাবেলা করছে। যদিও এ মুহূর্তে আমাদের বেশিরভাগ দৃষ্টিই কভিড-১৯ মহামারীর দিকে, তবে আমরা স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ অন্যদিকেও নজর রাখছি।’

ওয়াল্ডওমিটারের দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কঙ্গোতে গতকালও শতাধিক করোনারোগী শনাক্ত হয়েছে। মার্চের ১০ তারিখে প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৩২৬ জন করোনারোগী শনাক্ত হয়েছেন। ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৭২ জন। এরই মধ্যে কঙ্গো রিপাবলিকে ১১তম বারের মতো ইবোলার প্রাদুর্ভাব হলো। যা কিনা চলছে ১৯৭৬ সাল থেকে। এমবানদাকা ও এর আশেপাশের অঞ্চলে ২০১৮ সালে কঙ্গোর নবম ইবোলা প্রাদুর্ভাব ঘটে, যা মে ও জুলাই মাসে হানা দেয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকা অঞ্চলের ডিরেক্টর মাৎশিদিও মোয়েতি বলেন, ‘খুবই সংকটাপন্ন এক সময়ে এটি ঘটল, কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কঙ্গোর স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, আফ্রিকান সিডিসি ও অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে গত দুই বছর কাজ করেছে, যাতে ইবোলার বিপক্ষে এই অঞ্চলের মানুষের লড়াই করার সক্ষমতা তৈরি হয়। ইবোলা মোকাবেলায় যাতে স্থানীয় নেতৃত্ব তৈরি হয় সেটা নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেখানে একটি দল পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। ব্যস্ত সড়কের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল হওয়ায় এবং আশেপাশে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থাকায় আমাদের খুব তাড়াতাড়ি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

১৯৭৬ সালে প্রথমবার ইবোলার দেখা দিলে যুগপৎ দুটি প্রাদুর্ভাব ঘটে: একটি এনজারায় (যা এখন দক্ষিণ সুদানের শহর) ও অন্যটি কঙ্গোর ইয়ামবুকু গ্রামে। এই গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইবোলা নদীর নামেই রোগটির নামকরণ করা হয়।

সাব-সাহারা অঞ্চলে থেমে থেমে ইবোলার প্রাদুর্ভাব ঘটছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১৯৭৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ২৪টি প্রাদুর্ভাব ঘটে, যাতে ২ হাজার ৩৮৭ জন আক্রান্ত হন, মারা যান ১ হাজার ৫৯০ জন। এখন পর্যন্ত এই মহামারীর সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাবটি ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত হয়েছে পশ্চিম আফ্রিকায়। তখন ২৮ হাজার ৬৪৬ জন আক্রান্ত শনাক্ত হন, মৃত্যুবরণ করেন ১১ হাজার ৩২৩ জন।

২০১৬ সালে জরুরি অবস্থার অবসান ঘোষণা করলেও ২০১৭ সালে এটি ফিরে আসে। পরপর দুই বছর হানা দেয় কঙ্গোতে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে কঙ্গোর ইবোলা প্রাদুর্ভাবকে বিশ্বের জন্য ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এটি আরেকবার আঘাত হানল আফ্রিকার দেশটিতে।

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.