Sylhet Today 24 PRINT

বহিরাগতদের আটকে এখনও করোনামুক্ত ভারতের যে দ্বীপ

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৭ জুলাই, ২০২০

Getty Images

৩৬টি দ্বীপকে নিয়ে গঠিত আরব সাগরের যে দ্বীপপুঞ্জটি ভারতের একমাত্র অঞ্চল, সেটি হচ্ছে লাক্ষাদ্বীপ। করোনাভাইরাস সংক্রমণে ভারত যখন অন্যতম 'গ্লোবাল হটস্পট' হয়ে উঠতে চলেছে, তখন সে দেশেই কোভিড মোকাবিলায় এক বিরল নজির তৈরি করেছে লাক্ষাদ্বীপ। যেখানে আজ পর্যন্ত একটিও পজিটিভ কেস শনাক্ত হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাকি দেশের তুলনায় অনেক আগে থেকে যাতায়াতে কড়াকড়ি আরোপ করা-সহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ার ফলেই প্রত্যন্ত লাক্ষাদ্বীপ ভাইরাস ঠেকানোয় এই বিরল সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু ভারতের মুসলিম-প্রধান এই দ্বীপপুঞ্জ কীভাবে এতদিন কোভিডমুক্ত থাকতে পারল?

ভারতে শনাক্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা যখন দশ লক্ষ ছাড়াতে যাচ্ছে, তখন দেশের মাত্র একটি অঞ্চলই ভাইরাসের হানা থেকে বাঁচতে পেরেছে - আর সেটি হল লাক্ষাদ্বীপ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত কোভিড বুলেটিনে রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর তালিকায় শুধু এই একটি অঞ্চলের নামই আজ পর্যন্ত আসেনি - কারণ সেখানে কোনও পজিটিভ কেসই মেলেনি। এমনকি সম্প্রতি লাক্ষাদ্বীপের প্রশাসন সেখানে ফের স্কুল খোলার জন্যও কেন্দ্রের অনুমতি চেয়েছে, বাকি দেশ যে পদক্ষেপের কথা এখনও ভাবতেই পারছে না।

লাক্ষাদ্বীপের প্রায় ৭০ হাজার জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশই মুসলিম, আর ওই অঞ্চলের একমাত্র এমপি মহম্মদ ফয়জল বলছেন, দ্বীপে বহিরাগতদের প্রবেশ আটকেই তাদের এই সাফল্য!

ফয়জল বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "যখন জানুয়ারির শেষে কেরালায় প্রথম কোভিড রোগীর সন্ধান মেলে, আমরা প্রথমেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আসা বন্ধ করে দিই। এমনকি এন্ট্রি পারমিট নিয়ে যারা এখানে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতে আসেন তাদের জন্যও লাক্ষাদ্বীপের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, পুলিশ এখানে কারফিউ বা ১৪৪ ধারাও খুব কঠোরভাবে বলবত করেছে, লোকজনও অযথা বাড়ির বাইরে । যাদের জরুরি চিকিৎসা বা বিশেষ প্রয়োজনে মূল ভূখণ্ডে যেতে হয়েছে তাদের জন্য কোচিতে আমরা দুটো কোয়ারেন্টিন সেন্টারও চালু করেছি - সেখান সাতদিন কোয়ারেন্টিনে থেকে টেস্টে নেগেটিভ হলে তবেই তারা ফেরত আসার অনুমতি পেয়েছেন।"

"আর দুবাই বা গালফ কান্ট্রিগুলো থেকে লাক্ষাদ্বীপের যে স্থানীয়রা ফিরে এসেছেন তাদেরও কোচিতে দুসপ্তাহ ও দ্বীপে ফিরেও আরও দুসপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে", বলছিলেন মি ফয়জল।

লাক্ষাদ্বীপ কীভাবে প্রায় গত ছ'মাস ধরে কোভিডমুক্ত থাকতে পারল তা নিয়ে বিস্তারিত স্টাডি করেছেন ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দিল্লির সাংবাদিক অবন্তিকা ঘোষ। তিনিও মনে করেন, আগেভাগে ব্যবস্থা নেওয়ারই সুফল পেয়েছে তারা।

অবন্তিকা ঘোষ বিবিসিকে বলেন, "লাক্ষাদ্বীপ আসলে খুব ভাল করেই নিজেদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন ছিল, আর সে কারণে অনেক আগে থেকে ভাইরাস ঠেকাতে আটঘাট বেঁধে নেমেছিল তারা।"

"তারা যখন থেকে ডোমেস্টিক স্ক্রিনিং শুরু করে, তখন কিন্তু বাকি দেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র চীন, হংকং, সিঙ্গাপুর থেকে আসা যাত্রীদেরই শুধু স্ক্রিন করছিল। অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের স্ক্রিন করার কথা তখনও কেউ ভাবেইনি।"

"তা ছাড়া লাক্ষাদ্বীপের বাড়তি সুবিধা ছিল এটা একটা প্রত্যন্ত ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপপুঞ্জ, জনসংখ্যাও খুব কম - সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখার তেমন দরকার পড়েনি।"

"ওখানে মোট ৩৬টা দ্বীপের মধ্যে মাত্র দশটায় লোকজন থাকে, আর আমরা জানিই 'ভাইরাস লাভস ক্রাউডস' - মানে এই ভাইরাসটা ভিড় ভালবাসে!"

যেহেতু লাক্ষাদ্বীপে সেই 'ক্রাউড' বা ভিড়ের অস্তিত্ব নেই, ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সেটাও ভীষণ সাহায্য করেছে বলে বলছেন অবন্তিকা ঘোষ।

বাকি ভারতে যেখানে লকডাউন তেমন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা যায়নি, লাক্ষাদ্বীপ কিন্তু সেখানেও থেকে গেছে ব্যতিক্রম।

মিস ঘোষ বলেন, "আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রচণ্ড কড়াকড়ি রেখেছে ওরা। লাক্ষাদ্বীপের বাসিন্দা হলেও সাত দিন বা চোদ্দ দিনের কোয়ারেন্টিনের শর্ত মেনেই তবে দ্বীপে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে।"

"লাক্ষাদ্বীপের আর একটা অসুবিধা হল ওদের নিজস্ব প্রায় কিছুই নেই, সব কাজেই প্রায় কোচিতে আসতে হয়। কিন্তু সেই কোচিতে আসার জন্যও কঠোর এক্সিট কন্ট্রোল চালু করেছে তারা।"

"আর একটা বিশেষত্ব হল, বাকি দেশে যখন কোয়ারেন্টিনে থাকার খরচ নিজেদেরই দিতে হচ্ছে - লাক্ষাদ্বীপের ক্ষেত্রে সরকারই সেটা দিচ্ছে - আর লোকজনও তাই থাকতে কোনও আপত্তি করছেন না", বলছিলেন অবন্তিকা ঘোষ।

দ্বীপের বাসিন্দাদের কোয়ারেন্টিন সেন্টার বা হোটেলে থাকার খরচ প্রশাসন বহন করলেও নানা কড়াকড়ির কারণে পর্যটন-নির্ভর এই দ্বীপটির অর্থনীতি যে বিরাট ধাক্কা খেয়েছে এমপি মহম্মদ ফয়জল অবশ্য তা অস্বীকার করছেন না।

বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, "লাক্ষাদ্বীপের উপার্জনে অবশ্যই বিরাট টান পড়েছে - সেই মার্চ থেকে আমাদের পর্যটন ব্যবসাও পুরোপুরি বন্ধ।"

"তবে অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে আমরা এখন স্থানীয় শিল্পগুলোর ওপরেই জোর দিচ্ছি। এখানকার দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নির্মাণ শিল্প বা মাছ ধরতে যাওয়া - এগুলোর ওপর আর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।"

লাক্ষাদ্বীপের সঙ্গে বাকি দেশের সংযোগের সূত্র হল কোচি থেকে বিমান পরিষেবা আর মোট সাতটি যাত্রীবাহী জাহাজের সার্ভিস।

সেই যোগাযোগে অনেক আগে থেকে বিপুল কড়াকড়ি আরোপ করেই লাক্ষাদ্বীপ আজ পর্যন্ত কোভিডমুক্ত - তবে তার জন্য অর্থনীতিতে চড়া দামও দিতে হচ্ছে তাদের।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.