Sylhet Today 24 PRINT

বিয়ের চুক্তিপত্র নেই বিল-মেলিন্ডা গেটসের

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৪ মে, ২০২১

প্রায় তিন দশকের দাম্পত্য সম্পর্কে ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছেন বিল ও মেলিন্ডা গেটস। বিয়েবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছে এই দম্পতি।

তবে এই আবেদনের নথিতে বিল-মেলিন্ডার বিয়ের নথি (প্রিনাপশাল এগ্রিমেন্ট) যুক্ত না করায় ‘বিয়ে-বিচ্ছেদ’ এর আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। এই দম্পতির বিয়ের কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তিপত্র নেই বলেও জানিয়েছে বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম।

বিল ও মেলিন্ডা সোমবার যৌথ বিবৃতিতে ২৭ বছরের বৈবাহিক সম্পর্ক অবসানের ঘোষণা দেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে পোস্ট করা যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অনেক ভেবে-চিন্তে এবং আমাদের সম্পর্কের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় খতিয়ে দেখে আমরা বৈবাহিক জীবনের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা দুর্দান্ত তিন সন্তানকে বড় করেছি এবং একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছি যা বিশ্বব্যাপী সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে স্বাস্থ্যকর, কর্মক্ষম জীবনযাপনে সক্ষম করে তুলতে কাজ করছে।’

মাইক্রোসফট করপোরেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ৬৫ বছর বয়সী বিল গেটস বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী। অন্যদিকে, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার ৫৬ বছর বয়সী মেলিন্ডা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ইস্যু ও নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার।

আগামীতেও দুজন ‘দ্য বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে’ এক সঙ্গে কাজ করবেন জানালেও বিল ও মেলিন্ডার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের জীবনের সামনের দিনে আমরা জুটিবদ্ধ হয়ে থাকতে পারব বলে আর মনে করছি না।’

আলাদা থাকার আবেদন জানিয়ে সোমবার সিয়াটেলের কিং কাউন্টি সুপিরিয়র কোর্টে একটি আবেদনও করেন বিল ও মেলিন্ডা। তবে এই আবেদনের সঙ্গে বিয়ের চুক্তিপত্র যুক্ত করা হয়নি।

‘অপ্রতিরোধ্যভাবে দুজনের বৈবাহিক সম্পর্ক ভেঙে গেছে’ উল্লেখ করে ওই আবেদনে বলা হয়, ‘আদালতকে আমরা আমাদের বিয়ে বিলোপ করতে এবং আলাদা থাকার আবেদনের তারিখ থেকেই সেটি কার্যকর বলে গণ্য করার আবেদন করছি।’

এই আবেদনের সঙ্গে বিয়ের কোনো নথি যুক্ত না করায় ‘বিয়েবিচ্ছেদের লিখিত আবেদনটিই বিল ও মেলিন্ডার বিয়ের একমাত্র দলিল’ বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্টসহ বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম।

মেলিন্ডা আদালতে করা আবেদনে বিল গেটসের কাছ থেকে আগামীতে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা চাননি। আবেদনে ২০২২ সালে আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদের চূড়ান্ত শুনানির অনুরোধ করেছেন তিনি। তবে মনে করা হচ্ছে, এর আগেই আদালতের বাইরে বিয়েবিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুর সুরাহা হয়ে যাবে।

দ্য ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই জুটির বিয়ের কোনো চুক্তি না থাকলেও আদালতে বিয়েবিচ্ছেদের আবেদনে দুজনেই সই করেছেন। ফলে এর ভিত্তিতেই তাদের বিপুল সম্পদের বণ্টন হতে পারে। এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে, পাঁচটি রাজ্যে বিপুল সম্পত্তি, একটি ব্যক্তিগত জেট, চমকপ্রদ শিল্প সংগ্রহ এবং বিলাসবহুল গাড়ির একটি বহর।

যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের সময়ে দম্পতির মধ্যে একটি লিখিত আইনি চুক্তির বিধান রয়েছে, যেটি প্রিনাপশাল (সংক্ষেপে প্রিনাপ) এগ্রিমেন্ট হিসেবে পরিচিত। এই চুক্তির ফলে দাম্পত্য জীবন, এমনকি বিয়েবিচ্ছেদের সময় সম্পত্তিতে স্বামী-স্ত্রীর অধিকার নির্ধারিত হয়।

বিল গেটসের সঙ্গে মেলিন্ডার ‘বিবাহিত’ জীবনের শুরু ১৯৯৪ সালে। এর আগে ১৯৮৭ সালে মেলিন্ডা মাইক্রোসফটে প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করলে বিল গেটসের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়।

নেটফ্লিক্সে প্রচারিত তিন পর্বের প্রামাণ্যচিত্র ‘ইনসাইড বিলস ব্রেইন: ডিকোডিং বিল’ প্রামাণ্যচিত্রে বিল-মেলিন্ডা জুটিকে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে।

সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই প্রামাণ্যচিত্রের পরিচালক গুগেনহাইমকে বিল গেটস বলেছিলেন, তিনি খুব ভাগ্যবান যে মেলিন্ডার ভালোবাসা পেয়েছেন। ১৯৮৭ সালে মেলিন্ডা মাইক্রোসফটে প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরুর ছয় মাস পর নিউ ইয়র্ক সিটিতে একটি নৈশভোজে তার পাশাপাশি বসেছিলেন বিল।

তবে দুজনের চেনাজানার প্রথম দিকগুলো ছিল একেবারে সাধারণ। প্রামাণ্যচিত্রে বিল গেটসকে বলতে শোনা যায়, ‘তার (মেলিন্ডা) বয়ফ্রেন্ড ছিল এবং আমার ছিল মাইক্রোসফট। আমরা আমাদের মতো ছিলাম, আমরা একে অপরের প্রতি সিরিয়াস ছিলাম না? আমরা একে অন্যের জন্য সময় দাবি করব না।’

অন্যদিকে, মেলিন্ডা বলেন, ‘আমি তখন মাইক্রোসফটে নতুন। সেখানে আরও অনেক পুরুষ ছিলেন এবং …তুমি এখনও আমার চারপাশেই আছো। এক বছর পর খুব অল্প সময়েই অবাক করার বিষয় ছিল, অবাক করার মতো বিষয় ছিল যে, আমরা বলেছিলাম, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’

গেটস বলেন, ‘সে বলে, সেও আমাকে ভালোবাসে এবং তেমনটাই হয়েছিল। সামনে কী হতে যাচ্ছে?’

গেটস বলেন, ‘আমরা একে অপরের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল ছিলাম এবং দুটি সম্ভাবনার কথা তখন বলেছিলাম। একটি, হয় এখন আমাদের ব্রেকআপ করতে হবে, নয়ত আমরা বিয়ে করতে যাচ্ছি।’

মেলিন্ডা গেটস ২০১৯ সালে একটি বই লেখেন। দ্য মোমেন্ট অফ লিফট: হাউ এমপাওয়ারিং ওমেন চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড নামের বইটির কথাও উঠে আসে প্রামাণ্যচিত্রে।

মেলিন্ডা বলেন, ‘তাকে (বিল) সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। বিয়ে করলে কী কী উপকারিতা, তার একটি তালিকা সে তার শয়নকক্ষে রাখা হোয়াইটবোর্ডে করেছিল। তা দেখে আমি হাসি আটকে রাখতে পারছিলাম না।’

অন্যদিকে, বিল বলেন, ‘যদিও এটি মেলিন্ডা গেটসের জন্য ছিল একটি মজার অভিজ্ঞতা। তবে আমি বিয়ে বিষয়টিকে খুব সিরিয়াসলি নিয়েছিলাম।’

মেলিন্ডা বলেন, ‘গেটস বিয়ে করতে চাচ্ছিল, কিন্তু সে জানত না তাকে আসলে কী প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং সে মাইক্রোসফট চালাতে পারবে কি না।’

এক বছরের প্রেম শেষে যখন গেটসের বয়স ৩৮ এবং মেলিন্ডার ২৯ সে সময় তারা হাওয়াইয়ের লানাই গিয়ে গাঁটছড়া বাঁধেন।

বিল গেটস বিলিয়ন ডলার আয় করলেও তারা চেয়েছিলেন নিজেদের সন্তানকে একেবারে সাধারণভাবে বড় করতে। বিল ও মেলিন্ডা চেয়েছিলেন তাদের সন্তানরা একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাবে। প্রত্যেকে মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলার করে।

গেটস টেড টকে বলেছিলেন, ‘আমরা একটি ভারসাম্য রেখে সন্তানদের বড় করার চেষ্টা করেছি। আমরা তাদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছি। তার মানে এই নয় যে, তারা বাইরে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে অর্থ খরচ করবে।’

বিল ও মেলিন্ডার তিন ছেলে-মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে জেনিফারের বয়স এখন ২৫ বছর, ছেলে ররির বয়স ২১ আর ছোট মেয়ে ফিবিয়ের বয়স ১৮ বছর।
সূত্র: নিউজবাংলা

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.