Sylhet Today 24 PRINT

করোনার নতুন ধরন প্রতিরোধে কার্যকর ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিন: গবেষণা

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৬ মে, ২০২১

করোনাভাইরাসের দুটি বিপজ্জনক ধরন (ভ্যারিয়েন্ট) দ্বারা সৃষ্ট গুরুতর রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন অনেক বেশি কার্যকর।  বুধবার প্রকাশিত দুটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের।

গবেষণার ফলাফল কাতার এবং ইসরায়েলে ভ্যাকসিনটির প্রয়োগ বা সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে প্রকৃত ব্যবহারের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে; এতে বলা হয়েছে এ ভ্যাকসিন  করোনা ভাইরাসের দুটি বিপজ্জনক ভ্যারিয়েন্ট কর্তৃক সৃষ্ট গুরুতর নিউমোনিয়া কমাতে পারে, এমনকি মৃত্যুহার হ্রাসে ভূমিকা রাখে।

উল্লেখিত ভ্যারিয়েন্ট দুটো হলো, যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত হওয়া  B.1.1.7 এবং দক্ষিন আফ্রিকার B.1.351 ভ্যারিয়েন্ট।

লন্ডন স্কুল হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের সংক্রামক রোগ গবেষক ডা. অ্যানেলিজ ওয়াইল্ডার-স্মিথ বলেন, "এটি সত্যিই সুখবর। বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের উদ্বেগজনক উপস্থিতির পরেও আমরা এটি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি যে, এখন এই ভ্যাকসিনটি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে"।

এর আগে যে গবেষণা প্রকাশ পায় সেখানে বলা হয়েছিল,  B.1.1.7 ধরনটি তুলনামূলকভাবে বেশি সংক্রামক এবং মারাত্মক, তবে এর বিরুদ্ধে ফাইজারের ভ্যাকসিন কার্যকর। তবে অপর ধরনটির ( B.1.351) বিপক্ষে ভ্যাকসিনটি ততটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেনি।

এরপর ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ হতে মার্চের ৩১ তারিখ পর্যন্ত কাতারের জাতীয় কোভিড-১৯ ডাটাবেস থেকে প্রাপ্ত ২ লাখ লোকের করোনা সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে একটি গবেষণা প্রকাশ করে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন।

২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের ১৮ তারিখ পর্যন্ত শনাক্তকৃত ভাইরাসের সিকোয়েন্সিং থেকে জানা যায় যে,  সে সময় অর্ধেকের কাছাকাছি সংক্রমণের জন্য দায়ী ছিল B.1.351 ভ্যারিয়েন্ট, বাকি ৪৪.৫ শতাংশ সংক্রমণ ঘটিয়েছে B.1.1.7 ভ্যারিয়েন্ট।

একাধিক বিশ্লেষণে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে, ভ্যাকসিনটির দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে  ৮৭ থেকে শতকরা ৮৯.৫ শতাংশ মানুষ B.1.1.7  এর সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে।  B.1.351 এর ক্ষেত্রে এই হার ৭২.১ হতে শতকরা ৭৫ ভাগ।

গবেষণার অন্যতম লেখক, ওয়েইল কর্নেল মেডিসিন-কাতারের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ লাইত আবু-রাদ্দাদ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, 'আমরা এমন একটি ধরনের কথা বলছি যা সম্ভবত সবচেয়ে নিকৃষ্টতম। এমন নয় যে, আমরা এ পরীক্ষায় ৯৫ ভাগ সাফল্যের আশা করছিলাম, তবে যে ৭৫ শতাংশ সাফল্য আমাদের হাতে এসেছে, তা দারুণ"।

সর্বোপরি, এ ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের যে কোন ধরন থেকে সৃষ্ট গুরুতর এবং মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে ৯৭.৪  শতাংশ কার্যকর এবং B.1.1.7 বা B.1.351 দ্বারা সৃষ্ট গুরুতর রোগ প্রতিরোধে শতভাগ কার্যকর।

দ্বিতীয় গবেষণাটি চিকিৎসা বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত হয়; এটি ইসরায়েলের  স্বাস্থ্য ও ফাইজার মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত হয়। এটি জানুয়ারি ২৪ থেকে এপ্রিলের ৩ তারিখ পর্যন্ত সংক্রমিত প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার করোনা সংক্রমণের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত। তখন B.1.1.7 ধরনটি ৯৫ ভাগ সংক্রমণের জন্য দায়ী ছিল।

উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে দেশটির অর্ধেকের বেশি নাগরিককে টিকা দেয়া হয়েছে।

গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে যারা সম্পূর্ণ টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ, হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুঝুঁকির বিরুদ্ধে সুরক্ষায় এই ভ্যাকসিন ৯৫ শতাংশেরও বেশি কার্যকর ছিল। এটি বয়স্কদের ক্ষেত্রেও ভাল কাজ করেছে। ৮৫ বছর বা তার ঊর্ধ্বে ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের সংক্রমণ, হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে ৯৪ শতাংশের বেশি কার্যকর ছিল ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিন।

উভয় গবেষণায় আরও জানানো হয়েছে যে, ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ একটি ডোজের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি সুরক্ষা সরবরাহ দিয়েছে। ইসরায়েলের গবেষণাটিতেই দেখা যায়, ভ্যাকসিনের একটি ডোজ মৃত্যুঝুঁকি কমায় ৭৭ শতাংশ, অন্যদিকে দুটি ডোজ এক্ষেত্রে ৯৬.৭  শতাংশ কার্যকর ছিল।

ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড স্কুল অফ মেডিসিনের সেন্টার ফর ভ্যাকসিন ডেভলপমেন্ট এন্ড গ্লোবাল হেলথের পরিচালক বলেন, "এসব গবেষণা থেকে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজের গুরুত্ব আরেকবার সামনে এল"।

এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মত, করোনার নতুন নতুন ধরনের আবির্ভাব ঘটলেও ভ্যাকসিন এখনও মহামারী কাটিয়ে ওঠার একটি প্রশস্ত পথ নির্মাণ করে রেখেছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.