Sylhet Today 24 PRINT

লকডাউনের ঘোষণায় পশ্চিমবঙ্গে মদের দোকানে দীর্ঘ লাইন

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৬ মে, ২০২১

গতবারের লকডাউন ‘শিক্ষা’ দিয়েছে সুরাপ্রেমীদের। তাই রবিবার থেকে টানা ১৫ দিন পশ্চিমবঙ্গে কার্যত লকডাউনের ঘোষণা হতেই সেই ‘শিক্ষা’র হাতেকলমে প্রয়োগ ঘটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো তারা। বিকাল ৫টা বাজার আগেই কলকাতা থেকে কোচবিহার, সর্বত্র মদের দোকানের সামনে লাইন দিতে দেখা যায় সুরাপ্রেমীদের। তাদের প্রায় কারও মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা দেখা যায়নি।

বেশকিছু ক্ষেত্রে ছাড়-সহ এই লকডাউন ঘোষণার পর শনিবার বিকালে মাছ-মাংস, শাক-সবজি, মুদিখানা এবং ওষুধের দোকানে লাইন দিতে দেখা গিয়েছে সাধারণ মানুষকে। কিন্তু মদের দোকানের লাইন যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে।

অতি উৎসাহের জেরে কোথাও কোথাও বিশৃঙ্খলাও তৈরি হয়। তা সামাল দিতে নামতে হয় পুলিশকেও। অনেকেই বাড়ি ফেরেন মুখে বিজয়ীর হাসি নিয়ে। কেউ কেউ অবশ্য নিষ্ফল-হতাশের দলেই।

‘দাদা, আমাকে চারটে হাফ, চারপাশে ঘিরে থাকা অনন্ত মাথার মধ্যে থেকেই মুঠোয় ধরা নোটগুলো দোকানের ঘুলঘুলির মধ্যে চালান করে দিয়ে বলে উঠলেন এক মধ্যবয়সী। তার আশপাশে তখন ঘোরাফোরা করছে অসংখ্য হাত। প্রত্যেকেই তাড়া দিচ্ছেন একে অপরকে। শনিবার বিকেলে এই চিত্রই দেখা গেছে ধর্মতলা চত্বরের একটি মদের দোকানে।

রবিবার থেকে রাজ্যে ১৫ দিনের জন্য কার্যত লকডাউন। সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বাজার খোলা থাকবে বটে। কিন্তু সেই তালিকায় মদের দোকান খোলার কোনও উল্লেখ নেই। ফলে শনিবার ঘোষণা শোনার পর থেকেই আচমকা সরবরাহ বন্ধের আশঙ্কায় পড়েন সুরাপ্রেমীরা। তৈরি হয় উৎকণ্ঠাও, ঠিক আগের বছরের লকডাউনের মতো। তাই সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ এসপ্ল্যানেডের একটি মদের দোকানের ফটক বন্ধ হতে দেখে এক ষাটোর্ধ্ব এক সুরাপ্রেমী আক্ষেপের সুরে বলেই ফেললেন, ‘কে জানে আবার কবে পাওয়া যাবে!’ তবে বিজয়ীর ভঙ্গিমায় তিনি এটাও শুনিয়ে দিলেন, ‘আপাতত স্টক পূর্ণ।’

এ দৃশ্য শুধু কলকাতার নয়। গোটা পশ্চিমবঙ্গেই একাধিক মদের দোকানে দেখা গেছে এমন ছবি। হাওড়ার শিবপুরে একটি মদের দোকানের সামনে স্বাস্থ্যবিধি ভুলেই জড়ো হন সুরাপ্রেমীরা। কার আগে কে দোকানের জানালার সামনে পৌঁছাবেন তা নিয়ে হুড়োহুড়ি বেধে যায়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, লাঠিচার্জ পর্যন্ত করতে হয় পুলিশকে।

একই ছবি ধরা পড়েছে হুগলির ব্যান্ডেল, চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর-সহ বিভিন্ন এলাকার মদের দোকানগুলোতে। আশা-আশঙ্কার দোলাচলেই বিকেল ৫টা হাজার আগে থেকেই মদের দোকানে ভিড় জমিয়েছেন বহু মানুষ।

পশ্চিম বর্ধমান জেলায় বিভিন্ন মদের দোকানে দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। ভিড় নজরে এসেছে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলেও। সর্বত্রই দেখা গিয়েছে হুড়োহুড়ির ছবি।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, সাগর, রায়দিঘি, ডায়মন্ড হারবার, বারুইপুর, বজবজ, মহেশতলা-সহ বিভিন্ন এলাকার মদের দোকানে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে শনিবার বিকাল থেকে। রাজ্যে কার্যত লকডাউন ঘোষণার পর মদ মজুত করে রাখতে তৎপর হয় সুরাপ্রেমীরা। পরিস্থিতি এমন হয় যে সন্ধ্যা ৭টার পরেও দোকান খোলা রাখতে হয় অনেক ব্যবসায়ীকে।

পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলার মদের দোকানগুলোতেও ছিল একই ছবি। বিকাল থেকে কোনও দোকানের সামনেই তিল ধারণের পরিস্থিতি ছিল না।

উত্তর ২৪ পরগনার বহু মদের দোকানে একই দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে শনিবার। মদ কিনতে ভিড় জমায় স্থানীয়রা।

দক্ষিণের চিত্রটা দেখা গেছে উত্তরবঙ্গেও। জলপাইগুঁড়ি জেলার প্রায় সব মদের দোকানেই ভিড় ছিল যথেষ্ট। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই ক্রেতাদের ভিড় দেখা গিয়েছে কোচবিহারেও। শহরের একটি মদের দোকানের সামনে জটলার মধ্যে থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা বললেন, ‘আগের বছর খুব অসুবিধা হয়েছিল। লকডাউনের জন্য মদের দোকান বন্ধ ছিল। তাই ব্ল্যাকে বাড়তি টাকা দিয়ে মদ কিনতে হয়েছিল। অনেক টাকা খরচও হয়েছিল। এবার তাই আর কোনও ঝুঁকি নিলাম না। বাড়তি মদ কিনে রেখেছি।’

লম্বা লাইন থাকা সত্ত্বেও বহু জায়গাতেই ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা ৭টা ছুঁতেই মদের দোকান বন্ধ করতে নামতে হয়েছে পুলিশকে। লক্ষ্যের এতটা কাছে এসেও তার নাগাল না পাওয়ায় বহু সুরাপ্রেমীর গলাতেই শোনা গেছে আক্ষেপের সুর। কেউ বা পুলিশকর্মীদের কাতর অনুরোধ করেছেন, ‘স্যার, আর ১৫ মিনিট দিন!’

সুরাপ্রেমীদের কষ্টসহিষ্ণুতা দেখে তাদের ‘সুরাসাধক’ আখ্যা দিয়েছেন রসিকজন। কারও আবার সরস মন্তব্য, ‘এ-ও তো আসলে সাধনাই!’ সূত্র: আনন্দবাজার।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.