Sylhet Today 24 PRINT

আইএস-এর অর্থের উৎস কি

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক |  ১৯ নভেম্বর, ২০১৫

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে গত শুক্রবারের আক্রমণ আবার জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট-এর দিকে বিশ্বের নজর ফিরিয়েছে।

আই এস প্যারিস হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে, যে হামলায় অন্তত ১২৯জন মানুষ নিহত এবং তিন শতাধিক আহত হয়েছেন। ইসলামিক স্টেট কে বিশ্বের সব চেয়ে ধনী জঙ্গি গোষ্ঠী মনে করা হয়।

আই এস দাবী করে, তারা ইরাক এবং সিরিয়ায় দখল করা জমি দিয়ে একটি ‘খেলাফত’ সৃষ্টি করেছে, যার আয়তন যুক্তরাজ্যের সমান।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, আই এস কীভাবে তাদের কার্যক্রম অর্থায়ন করে? তাদের অর্থের উৎস কী? বিবিসি এক প্রতিবেদনে আইএস-এর অর্থের উৎসগুলো উল্লেখ করেছে।

অনুদান
প্রথম দিকে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা এবং ধনী ব্যক্তি আই এসকে অর্থায়ন করতেন।

এই দাতাগুলো ছিল মূলত সুন্নি সম্প্রদায়ের এবং তারা সিরিয়ার সংখ্যালঘু আলাউয়ি সম্প্রদায়ের রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আই এসকে অর্থ যোগান দিতেন।

এসব উৎস থেকে পাওয়া অর্থ ব্যবহার করা বিদেশী যোদ্ধাদের সিরিয়া এবং ইরাকে নিয়ে যাওয়া হলেও, আই এস এখন মোটামুটি স্বয়ং সম্পন্ন হয়ে উঠেছে।

তেল
আমেরিকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে, আই এস ২০১৪ সালে তেল বিক্রি করে ১০ কোটি ডলার আয় করেছে। তারা অশোধিত তেল এবং তেল-ভিত্তিক সামগ্রী দালালদের কাছে বিক্রি করে, যারা সেগুলো তুরস্ক এবং ইরানে চোরাচালান করে – বা সিরিয়ার সরকারের কাছে বিক্রি করে।

কিন্তু সম্প্রতি আই এস-এর তেল স্থাপনাগুলোর উপর বিমান হামলার ফলে তাদের অর্থের এই উৎস কমে গেছে।

অপহরণ
অপহরণ এই গোষ্ঠীর আয়ের একটি বড় উৎস। আই এস ২০১৪ সালে মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমে অন্ততপক্ষে দুই কোটি ডলার আয় করে।

আই এস থেকে পক্ষ ত্যাগ করে বেরিয়ে আসা একজন বলেছেন, অপহরণ অভিযান চালানোর জন্য সংগঠনটির একটি স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে, যার নাম ‘ইন্টেলিজেন্স এ্যাপারেটাস’। অপহরণকে আই এস তাদের পরিচিতি প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করে।

চুরি-ডাকাতি, লুট আর চাঁদাবাজি
মার্কিন অর্থ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, আই এস তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার জনগণকে জোরপূর্বক চাঁদা দিতে বাধ্য করিয়ে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ ডলার আয় করে।

যারা তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা দিয়ে যাতায়াত করে, বা সেখানে ব্যবসা করে বা শুধু বসবাস করে, তাদের কাছ থেকে ‘নিরাপত্তা’ দেবার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে চাঁদা আদায় করা হয়।

আই এস ব্যাংক লুট করে, গবাদিপশু চুরি করে এবং পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করে অর্থ উপার্জন করে। সিরিয়ার বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন চুরি করে বিক্রি করাও আই এস-এর অর্থের একটি উৎস।

ধর্মী সংখ্যালঘুদের উপর কর
আই এস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ধর্মী সংখ্যালঘুদের ‘যিযিয়া’ নামে একটি বিশেষ কর দিতে হয়।

গত বছর ইরাকের মোসুল শহরে মসজিদগুলোতে একটি ঘোষণা পড়া হয়, যেখানে ক্রিশ্চানদের বলা হয় মুসলমান হয়ে যেতে, নয় ‘যিযিয়া’ দিতে। শহর ছেড়ে না চলে গেলে তাদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়।

“তাদের আমরা তিনটি পথ দিয়েছি। হয় ইসলাম গ্রহণ করো, নয় যিযিয়া করসহ ধিমা চুক্তি। তারা যদি প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে তাদের জন্য তলোয়ার ছাড়া আর কিছুই থাকবে না”, আই এস বিবৃতিতে বলা হয়।

দাসত্ব
আই এস অপহরণকৃত মেয়েদের যৌন দাস হিসেবে বিক্রি করে অর্থ আয় করেছে।

স্থানীয় ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষের তথ্য অনুযায়ী, যখন আই এস ইরাকের উত্তরে সিনজার শহর দখল করে, তখন তারা হাজার হাজার ইয়াজিদি নারী এবং যুবতী মেয়েকে বন্দী করে, এবং তাদের অনেককে যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে।

হান্নান নামের একজন ইয়াজিদি নারী বলেন তিনি আই এস-এর হাত থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

তিনি বিবিসিকে বলেন, তাকে আরো ২০০ নারী ও মেয়ের সাথে একটি ক্রীতদাসীদের হাট-এ নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে আই এস যোদ্ধারা এসে নিজের পছন্দ মত মেয়ে নিয়ে যেত।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.