Sylhet Today 24 PRINT

ভারতে নতুন কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা মোদির

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২০ নভেম্বর, ২০২১

ভারতের কৃষকরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিতর্কিত নতুন ৩ কৃষি আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছিলেন। আইনগুলো বাতিল করা হবে বলে গতকাল শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হঠাৎ করেই জানালেন।

মোদির এ ঘোষণাকে কৃষকদের কঠোর লড়াইয়ের বিজয় বলে অভিহিত করা হচ্ছে। কৃষি প্রধান রাজ্যগুলোর আসন্ন রাজ্যসভা নির্বাচনে এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন ৩ কৃষি আইন করা হয়। আইন অনুযায়ী সরকার-নিয়ন্ত্রিত পাইকারি বাজারের বাইরে কৃষকরা ফসল বিক্রি করতে পারবেন এবং সেখানে ফসলের ন্যূনতম দামের আশ্বাস দেওয়া হয়।

তবে এতে ফসলের ন্যায্য দাম কমে যাবে এই ভয়ে কৃষকরা এই আইন বাতিলের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু করে। জলবায়ু আন্দোলন কর্মী গ্রেটা থানবার্গ এবং পপ গায়িকা রিহানাসহ ভারত ও ভারতের বাইরের অনেক সেলিব্রিটিরা এতে সংহতি প্রকাশ করেন।

শুক্রবার জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে মোদি বলেন, 'আজ আমি আপনাদের এবং সারা দেশকে বলছি যে আমরা ৩টি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

তিনি বলেন, 'আমি ভারতবাসীর কাছে পবিত্র মনে ক্ষমা চাইছি। আমরা কৃষকদের (৩টি কৃষি আইন সম্পর্কে) বোঝাতে পারিনি। আমি কৃষকদের তাদের বাড়িতে, তাদের জমিতে, তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি এবং আমি তাদের সব কিছু নতুন করে শুরু করতে অনুরোধ করছি।'

এ মাসে সংসদের নতুন অধিবেশনে সরকার আইনগুলো বাতিল করবে বলে জানান তিনি।

শস্যের অপচয় রোধে আইনগুলোকে প্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করেছিল দেশটির সরকার। তবে ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশ, রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ উত্তর ভারতের বৃহৎ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আরও ২টি রাজ্য পাঞ্জাব ও হরিয়ানার নির্বাচনের কথা ভেবে সরকার তার চিন্তা থেকে সরে এলো।

মোদির এমন আত্মসমর্পণে কৃষি ভর্তুকি এবং মূল্য সমন্বয়ের মতো বিষয়গুলো অমীমাংসিত রয়ে গেল বলে সমালোচকরা উল্লেখ করেছেন।

রাজনৈতিক চাপ অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে দেখে হয়তো বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ঝুঁকি আছে বলে প্রশ্ন তুলতে পারেন।

দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লির চারপাশের সড়কে ক্যাম্পে করে অবস্থান করা বিক্ষোভকারী কৃষকরা মোদির এই পিছু হটার ঘটনা উদযাপন করছেন।

উত্তর প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদ স্থান গাজিপুরের কৃষক রঞ্জিত কুমার (৩৬) বলেন, 'অনেক অসুবিধার পরও আমরা প্রায় এক বছর ধরে এখানে রয়েছি। আজ আমাদের এ ত্যাগ ফলপ্রসূ হলো।'

উচ্ছ্বসিত কৃষকরা মিষ্টি বিতরণ করেছেন এবং 'কৃষকের জয় হোক' এবং 'কৃষক আন্দোলন দীর্ঘজীবী হোক' স্লোগান দিয়েছেন।

তবে কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইত বলেছেন, সংসদে আইন বাতিল করলেই কেবল বিক্ষোভ প্রত্যাহার করা হবে।

আইনগুলো বাতিল করার কোনও প্রশ্নই আসে না বলে বিজেপি সরকার গত বছর জানিয়েছিল। বিক্ষোভ ঠেকাতে দীর্ঘ আলোচনাও ব্যর্থ হয়।

পরে চলতি বছর ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। কৃষকরা পুলিশকে তোয়াক্কা না করে ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে এবং রাস্তার অবরোধ করে। কৃষকরা ট্রাক্টর নিয়ে নয়াদিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লায় পৌঁছে যায়।

সেখানে একজন বিক্ষোভকারী নিহত হন এবং কয়েক হাজার কৃষক ও পুলিশ আহত হয়।

কৃষকরা বলেন, আইনের পরিবর্তনের ফলে তারা বড় বড় ব্যবসায়ীদের তুলনায় বাজারে দুর্বল হয়ে যাবেন এবং শেষ পর্যন্ত গম ও চালের মতো প্রধান শস্যের ন্যায্যমূল্য নাও পেতে পারেন।

আর সরকার বলেছিল যে কৃষি খাতের সংস্কার কৃষকদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং ভাল দাম পেতে সাহায্য করবে।

শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে আজ মোদি আইন বাতিলের ঘোষণা দেন। আর আন্দোলনকারী কৃষকদের মধ্যে অনেকেই শিখ।

সরকার কৃষকদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মোদি স্বীকার করেন।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মোদির অবস্থানের এ পরিবর্তন দুর্ভাগ্যজনক কারণ আইনের সংস্কারের ফলে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।

এছাড়া কৃষক ও মোদির দল বিজেপির মধ্যে এ বিরোধের সুযোগ নেবে বিরোধী দল।

প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী ইতোমধ্যে বলেছেন যে 'উদ্ধত' সরকার হার মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেস পার্টির সংসদ সদস্য এবং মোদির কট্টর সমালোচকদের একজন মহুয়া মৈত্র টুইটারে বলেছেন, 'এটা জনগণের কণ্ঠস্বরের আরও অনেক অনেক জয়ের কেবল সূচনা করে দিল।'

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.