আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ২৩ মে, ২০২২
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ‘ডজনস ডেড, মিলিয়নস স্ট্রেন্ডেড অ্যাস ফ্লাডস রেভেজ বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ শিরোনামে গতকাল রোববার বড় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। অবশ্য তারা সংবাদের উৎস উল্লেখ করে আরেকটি গণমাধ্যমে নিউজ এজেন্সি এএফপির নাম।
গার্ডিয়ানের অনলাইন সংস্করণে শিরোনামের পরই বড় হরফে শুধু বাংলাদেশের পরিস্থিতি উল্লেখ করে বলেছে, দুই দশকের মধ্যে বাংলাদেশের ভয়াবহ বন্যা, বৃষ্টিতে ডুবে গেছে বাংলাদেশের হাজার হাজার গ্রাম, ভূমিধসে বিপর্যস্ত জনপদ। বড় এই প্রতিবেদনটির শিরোনামে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কথা উল্লেখ করলেও তিনটি ছবি ব্যবহার করে, সেসবের প্রত্যেকটি বাংলাদেশের সিলেটের বন্যার পরিস্থিতির।
বাংলাদেশের বন্যায় কারও মৃত্যু না হলেও গার্ডিয়ান সংবাদের শুরু বাংলাদেশ ও ভারতে বন্যায় অর্ধশতাধিক মৃত্যুর তথ্য দিয়ে। গার্ডিয়ান বলছে, ভারী বৃষ্টি বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু কিছু অংশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করেছে, এতে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫৭ জনের।
এরপরেই প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের বন্যার চালচিত্র তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী বন্যায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। সিলেট এলাকার একজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান লিখেছে, বরাক নদীর একটি বড় বাঁধ ভেঙে আসামের বন্যার ঢল এসে সিলেটের জকিগঞ্জের কমপক্ষে ১০০ গ্রাম ডুবে যায়।
মোশাররফ হোসেন গত শনিবার আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশের অনেক এলাকা এবং পাশের ভারতের অঞ্চলগুলো বন্যাপ্রবণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তন এখানকার মতো সারা বিশ্বে চরম আবহাওয়ার নানা দুর্যোগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বন্যার সময় অনেক মানুষ নিহত হয়েছে ভূমিধস ও বজ্রপাতে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের আসামে বন্যা ও ভ‚মিধসে ১৪ জন নিহত হয়েছেন।
আসাম কর্তৃপক্ষ শনিবার জানায়, ৩২০০ গ্রামের সাড়ে আট লাখেরও বেশি মানুষ বন্যার কবলে পড়েছে। মূলত মৌসুমি বায়ু কারণে অতিবৃষ্টিতে ডুবে গেছে চাষের জমি, হাজার হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেশিরভাগ জেলার অনেক এলাকা ডুবে যাওয়ায় প্রায় ৯০ হাজার মানুষ সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, বাংলাদেশের জকিগঞ্জে দেখা যায় লোকজন রাস্তায় মাছ ধরছে এবং স্থানীয়দের অনেকেই তাদের গবাদিপশু আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে। জকিগঞ্জের একজন বাসচালক শামিম আহমেদ বলেন, আমার ঘর কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে। কোনো খাওয়ার পানি নেই। আমরা বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখছি। বৃষ্টি একই সঙ্গে আমাদের জন্য অভিশাপ, আশীর্বাদও।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনটিতে স্থানীয় আরেক নারী লায়লা বেগমের দুর্দশার কথা উল্লেখ করা হয়, বিধবা লায়লা বেগমের সব আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, খাদ্যের ঘাটতি রয়েছে, আমি এবং আমার মেয়ে একজনের খাবার ভাগ করে খাচ্ছি, দিনে একবারই খাবার জুটছে আমার।
সিলেট নগরের অনেক অংশে পানি ঢুকেছে। আরেকজন সরকারি কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অর্ধলক্ষ পরিবার দিনের পর দিন বিদ্যুৎ ছাড়া চলছে। সিলেটের সরকারি শীর্ষ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, বৃষ্টি এবং আসাম থেকে আসা ঢলের পানির কারণেই বন্যা হয়েছে। কিন্তু কর্মকর্তা জানিয়েছেন জকিগঞ্জ সীমান্তে বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হবে শুধু পানি সরে যাওয়ার পর।