Sylhet Today 24 PRINT

৭১-এ বাংলাদেশের সঙ্গে ন্যায়বিচার হয়নি: ইমরান খান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক |  ০৫ নভেম্বর, ২০২২

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান ইমরান খান বলেছেন ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান) অন্যায় অবিচার করেছে। আর এজন্যই বৃহত্তর পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙ্গে গিয়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার লং মার্চে বন্দুক হামলার পর গতকাল শুক্রবার তার ওপর হামলার বিষয়ে জানাতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টানলেন তিনি। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ইউটিউব চ্যানেল থেকে ইমরান খানের ওই বক্তব্য সরাসরি প্রচার করা হয়।

তার ওপর সঙ্গে অন্যায়-অবিচার করা হচ্ছে বলতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রসঙ্গও টানেন ইমরান খান। তার দলের সঙ্গে জুলুম হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে কী হয়েছিল? সবচেয়ে বড় যে রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জিতেছিল, তাদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছিল সামরিক বাহিনী। তাদের যে অধিকার ছিল, তা দেওয়া হয়নি।

ইমরান বলেন, ‘১৮ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ১৯৭১ সালে খেলতে গিয়েছিলাম পূর্ব পাকিস্তানে। পাকিস্তানের গণমাধ্যমের ওপর তখন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। আমার জানা ছিল না, সেখানকার মানুষের ভেতরে কী পরিমাণ ঘৃণা জমেছিল। কেন ঘৃণা জমেছিল? তারা নির্বাচনে জিতেছিল আর আমরা তাদের সেই অধিকার দিচ্ছিলাম না। প্রধানমন্ত্রী তাদের হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা এখানে (পশ্চিম পাকিস্তানে) বসে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা তাদের প্রধানমন্ত্রী হতে দেব না।’

ইমরান খান বলেন, পশ্চিম পাকিস্তান অন্যায় অবিচার না করলে বৃহত্তর পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙ্গে যেতো না। ইমরান খানের দাবি ৮০-র দশকে যখন তিনি বাংলাদেশে খেলতে এসেছিলেন তখন স্টেডিয়ামের ভিতরে এবং বাইরে অনেক বাংলাদেশিকে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে শুনেছিলেন। এ থেকে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানিরা বৃহত্তর পাকিস্তান রাষ্ট্র ভাঙ্গার জন্য দায়ী নয় বরং পশ্চিম পাকিস্তানিদের অন্যায় অবিচারের কারণেই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ স্বাধীন হতে চেয়েছে।

ইমরানের কথায়, ‘(বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের) ১৮ বছর পর পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশে ভারতের বিরুদ্ধে দুটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলাম। দুই ম্যাচের সিরিজ আমরা জিতে গিয়েছিলাম। আমরা পশ্চিম পাকিস্তানিরা তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়ায় ও ন্যায়বিচার না করায় যে দেশে ১৯৭১ সালে আমাদের বিরুদ্ধে এত ঘৃণা ছিল, সেখানের স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৫০,০০০ মানুষ একটাই স্লোগান দিচ্ছিলেন - পাকিস্তান জিন্দাবাদ, পাকিস্তান জিন্দাবাদ।’

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘(সেই প্রদর্শনী ম্যাচ যেখানে খেলা হয়েছিল, সেই) স্টেডিয়াম থেকে হোটেল পর্যন্ত রাস্তার দুধারে প্রচুর মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন। পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান উঠছিল। তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমরা ওদের উপর কতটা অবিচার করেছি। ওরা আমাদের ছেড়ে দিতে চাইতেন না। কিন্তু আমরা ওদের সঙ্গে ন্যায় বিচার করিনি।’

বৃহস্পতিবার গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর শুক্রবার প্রথমবার জনসমক্ষে আসেন ইমরান। লাহোরের হাসপাতালে হুইলচেয়ারে বসেই প্রায় এক ঘণ্টা ভাষণ দেন ইমরান। তার বাঁ পায়ে মোটা করে ব্যান্ডেজ দেখা গিয়েছে। সেই পা তুলে রেখে ভাষণের সময় পাকিস্তানি সরকারকে তুমুল আক্রমণ শানান ইমরান। তার নিশানায় ছিলেন মূলত পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।

পাকিস্তানের ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক অভিযোগ করেন, তাকে খুনের চেষ্টা করেছিলেন পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তাকে গুলি করার যে চক্রান্ত করা হয়েছিল, সেই ষড়যন্ত্রের ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিলেন মন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং সেনাবাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কমান্ডার। ইমরানের কথায়, ‘তারা আমাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।’ যদিও পাকিস্তান সরকারের দাবি, ইমরানের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় তাদের কোনও হাত নেই।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, ধর্মীয় ভাবাবেগকে হাতিয়ার করে তাকে খুনের ছক তৈরি করা হয়েছিল। তিনি ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ এবং হযরত মোহাম্মদের অবমাননা করেছেন বলে ছড়িয়ে দেওয়া হত। তারপর তাকে খুন করিয়ে বলা হত যে, কোনও ধর্মীয় উগ্রপন্থী সেই ঘটনায় জড়িত আছে।

ইমরান খান তার ওপর হামলার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ ও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ে কর্মরত মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসিরকে দায়ী করেছেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.