Sylhet Today 24 PRINT

বর্ণিল আয়োজনে চার্লসের রাজ্যাভিষেক

জুয়েল রাজ, লন্ডন  |  ০৬ মে, ২০২৩

সারা পৃথিবীর দৃষ্টি আজ ব্রিটেনের দিকে। অনন্য এক ইতিহাসের স্বাক্ষী হচ্ছে আজ ব্রিটেন। ৭০ বছর পর রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হলো পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ। বর্ণিল আয়োজনে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হলে যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক।  

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু শোক কাটিয়ে রাজপথে নেমে এসেছেন মানুষ।রাজপথ জুড়ে চলছে  আনন্দ উৎসব, তিন চারদিন থেকে হাজার হাজার মানুষ তাবু টানিয়েছেন রাজপথে,রাজার রাজ্যাভিষেকের স্বাক্ষী হতে।  রাজার অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে দেশটিতে ঘোষণা করে হয়েছে সাধারণ  ছুটি।

মূল রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে ২০৩ দেশের ২২০০ অতিথি সরাসরি অংশ নিয়েছেন।

লন্ডন সময় সকাল ১১ টায় রাজপ্রাসাদ ব্যাকিংহাম প্যালেস থেকে ঘোড়ার গাড়িতে করে ওয়েস্টমিনস্টা আব্যেতে পৌঁছান নতুন রাজা ও রানি।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর গ্রেট ব্রিটেনের রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসলেন তার ছেলে রাজা তৃতীয় চার্লস অর্থ্যাৎ প্রিন্স চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ। ১৯৫৩ সালে নিজের রাজ্যাভিষেকে সেইন্ট এডওয়ার্ড মুকুটটি পরেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এবার ৭০ বছর পর তার ছেলে চার্লস নিজের রাজ্যাভিষেকে মুকুটটি পরলেন।

হাজার বছরের পুরোনো রীতি অনুযায়ী ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের আনুষ্ঠানিক রাজ্যাভিষেক আজ। তবে পুরোনো রীতিতে হলেও এ অনুষ্ঠানে একবিংশ শতাব্দীর আধুনিকতার ছোঁয়াও থাকছে। ১৯৫৩ সালের পর এটি যুক্তরাজ্যে প্রথম এবং ১৮৩৮ সাল থেকে পঞ্চম রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান।

দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে ক্যানটারবেরির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি তাকে শপথ পড়ান। তিনি রাজাকে আশ্বস্ত করতে বলেন যে চার্লস তার শাসনামলে চার্চ অব ইংল্যান্ডের আইন সমুন্নত রাখবেন। এরপর বাইবেলে হাত রেখে রাজা শপথ করেন। রাজার অভিষেক অনুষ্ঠান  প্রায় দুই ঘন্টা ধরে অনুষ্ঠিত হয়। পরে

গোল্ড স্টেট কোচ নামের স্বর্ণখচিত ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে এক মাইল দীর্ঘ শোভাযাত্রায় অংশ নেন রাজা।  এই শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বাকিংহাম প্যালেসে ফিরেন  রাজা চার্লস এবং ক্যামিলা। এরপর তাঁরা বাকিংহাম প্যালেসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে উদ্‌যাপনমূলক ফ্লাই পাস্ট (বিমানের কুচকাওয়াজ) উপভোগ করেন।

রাজপ্রথা অনুযায়ী শুধু ইংল্যান্ডের ক্যান্টরবুরির আর্চবিশপই ব্রিটেনের রাজা বা রানির অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার অধিকার রাখেন। সে অনুযায়ী বর্তমান আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি এ আনুষ্ঠানিকতা পরিচালনা করেন। সোনার চাঁদরে মুড়িয়ে রাজাকে পবিত্র তেল মেখে দেয়ার মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা।


রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি উপকরণ– যেমন রাজমুকুট, রাজ গোলক, রাজদণ্ড, আংটি ও অন্যান্য পবিত্র ও প্রতিকী অলংকারে রাজাকে ভূষিত করা হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণটি হচ্ছে সেইন্ট এডওয়ার্ডের রাজমুকুট। এটা অভিষেকের কেন্দ্রীয় ভূমিকায় থাকে, কারণ অভিষেকের মুহূর্তে এই রাজমুকুটটি পরিয়ে দেওয়া হয়।১৬৬১ সালে রাজা দ্বিতীয় চার্লসের অভিষেক উপলক্ষে এ মুকুটটি গড়া হয়। ধারণা করা হয়, ১১ শতকের ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ড দ্য কনফেসরের শাসনামলে বানানো হয়েছিল এ মুকুট, যা ১৬৪৯ সালে গলিয়ে ফেলা হয়েছিল।

সোনায় গড়া এই রাজমুকুট বেগুনি মখমলের টুপি ও আরমাইন ব্যান্ডে দিয়ে সজ্জিত। তাতে খচিত আছে ৪৪৪টি মূল্যবান পাথর, যার মধ্যে আছে পান্না, নীলা, নীলকান্ত মনির মত রত্ন।ঐতিহাসিকভাবে, এই রাজমুকুট ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতেই রক্ষিত থাকে, তাই দ্বিতীয় একটি রাজমুকুট গড়া হয় যা রাজা অ্যাবির বাইরে পরতে পারেন।

ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে শোভাযাত্রা নিয়ে রাজা প্রবেশ করার পর ব্রিটেনের রাজা যে ১৫টি ভূখণ্ডের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে গণ্য, তাদের প্রতিনিধিরা প্রবেশ করেন । প্রতিটি অঞ্চলের পতাকাধারীর সঙ্গে ওই ভূখণ্ডের গভর্নর ও প্রধানমন্ত্রীরা ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।।

প্রিন্স হ্যারি নিশ্চিত করেছেন, তিনি তার বাবার সবচেয়ে ঐতিহাসিক দিনটিতে উপস্থিত থাকবেন। তবে তিনি একাই আসছেন। তার স্ত্রী মেগান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় তাদের দুই সন্তান- প্রিন্স আর্চি ও প্রিন্সেস লিলিবেটের দেখভালের জন্য থেকে যাচ্ছেন।

ধর্মীয় এই আচার-অনুষ্ঠান কয়েকটি ধাপে বিভক্ত, যার মধ্যে আছে স্বীকৃতি, শপথ, পবিত্র তেলে সিক্ত করা, সিংহাসনে আরোহন, রাজমুকুট পরিয়ে দেওয়া ও সংবর্ধনা বা রাজার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন। ব্যাতিক্রমি ভাবে এবারই  প্রথম প্রটেস্ট্যান্ট নন এমন বিশ্বাসীদের রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠানে ভূমিকা রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।  

এবার শুধু প্রিন্স উইলিয়ামই একমাত্র রয়্যাল ডিউক হিসেবে হাঁটু গেড়ে সম্মান প্রদর্শন করবেন।রাজার মাথার উপরে মুকুটটি রাখা অবস্থায় প্রিন্স হ্যারি তৃতীয় সারিতে তার আসন থেকে গভীরভাবে দেখেছিলেন। মনে করা হয় যে তার বিতর্কিত স্মৃতিকথা, স্পেয়ার বের হওয়ার পর এই প্রথম তিনি তার পরিবারকে দেখেছেন।

তিনি  গতকাল শুক্রবার লন্ডনে পৌঁছেছেন, তবে তার ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য ৭০ বছর সিংহাসনে থাকা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তার ছেলে চার্লস রাজা হন। যুক্তরাজ্য ছাড়াও তিনি আরো ১৪টি দেশে তাকে রাজা হিসেবে মান্য করা হয়।

১০৬৬ সালে উইলিয়াম নরম্যান্ডি এই রাজবংশের পথচলা শুরু হয়েছে। এর আগে ইংল্যান্ড সাতটি রাজ্যে ভিবক্ত ছিল। যুক্তরাজ্যের রাজতন্ত্রের ৪০তম সিংহাসন আরোহী হিসেবে শপথ নেন চার্লস। ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, রাজ্যাভিষেক শপথের আইনি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।এ ছাড়া একজন ‘একনিষ্ঠ প্রোটেস্ট্যান্ট’ হিসেবে দ্বিতীয় শপথও নেন রাজা তৃতীয় চার্লস।

জানা গেছে, ১৯৫৩ সালে আট হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যার জন্য অ্যাবিতে আলাদা করে অতিথিদের বসার জায়গা বানাতে হয়েছিল। আর এবার অতিথির সংখ্যা সীমিত করে  দুই হাজার দুইশতে নামিয়ে আনা হয়েছে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথর রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয় নি। এই প্রথম সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেক  অনুষ্ঠানটি সরাসরি উপভোগ করেন। টেলিভিশনের পাশাপাশি  যুক্তরাজ্যের  বিভিন্ন শহরে ৫৬ টি স্থানে বড় পর্দায় ও দেখানো হয় পুরো অনুষ্ঠান।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.