Sylhet Today 24 PRINT

গাজার হাসপাতাল যেন মৃত্যুপুরী, রোগী ছাড়া কিছুই নেই

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৫ নভেম্বর, ২০২৩

বাতাসে উটকো এক গন্ধ, সেই সঙ্গে ভাসছে স্বজনদের আহাজারি, রোগীদের সামাল দিতে চিকিৎসাকর্মীদের দৌড়াদৌড়ি আর চিৎকারের শব্দ — এভাবেই অবরুদ্ধ গাজার নাসের হাসপাতালের পরিস্থিতির বর্ণনা দিচ্ছিলেন এক ব্যক্তি।

ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় প্রতিদিন শত শত মানুষকে হাসপাতালে আনা হচ্ছে। রোগীদের ভিড়ে হাসপাতালের কোথাও ঠাঁই নেই। এ অবস্থাতেও কোনোরকমে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালটি।

হাসপাতালে আনা রোগীদের লাল, হলুদ ও সবুজ এই তিনটি পর্যায়ে চিহ্নিত করে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। লাল প্রতীকের অর্থ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্য দুটি প্রতীকের অর্থ রোগীর অবস্থা তুলনামূলক ভাল।

হাসপাতালের চিত্রের বর্ণনা দেওয়া ওই ব্যক্তি জানায়, তিনি যখন হাসপাতালটিতে ছিলেন তখন ইসরায়েলি হামলায় আহত এক রোগীকে আনা হয়। তার জায়গা হয়েছিল হাসপাতালের মেঝেতে।

সে সময় তিনি আহত ব্যক্তির ছবি তোলেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি এমন ছিল যে আমি যার ছবি তুলেছিলাম তার সম্পর্কে বেশিকিছু জানা খুবই কঠিন ছিল। হাসপাতালের কাগজপত্রে লেখা ছিল তাকে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে টেনে বের করা হয়েছে। তার নামই বা কী, তিনি বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন — আমি তাও জানি না।

তবে আহত ব্যক্তির অবস্থা তুলনামূলক ভালো বলে মনে হয়েছিল। কারণ তাকে সবুজ প্রতীকে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

ওই ব্যক্তির ভাষ্য: নাসের হাসপাতালে ভয়াবহতার যে চিত্র তা বোঝানো কঠিন। সবকিছুই ঝাপসা। মানুষ দৌড়াচ্ছে, চিৎকার করছে। রোগী থেকে রোগীর দিকে ছুটছেন চিকিৎসক ও নার্সেরা। পরিবারের সদস্যরা মরিয়া হয়ে নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজছেন।

হাসপাতালে গন্ধও খুব কঠিন। এটি পোড়া চামড়ার মতো, অথবা সম্ভবত রক্ত এবং মাংসের গন্ধে মিশ্রিত পোড়া টায়ারের মতো। খুব অদ্ভুত এক গন্ধ।

যুদ্ধের আগেও হাসপাতালে রোগী ছিল। তবে তখন যে পরিস্থিতি ছিল সেটি সামাল দেওয়ার মতো। এরপর ইসরায়েলি বাহিনী স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিলে এবং উত্তর গাজা থেকে বেসামরিক নাগরিকদের দক্ষিণ গাজার দিকে সরে যেতে বললে বাস্তুচ্যূত বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি হাসপাতালে আশ্রয় নিতে শুরু করে।

এক চিকিৎসক বলছিলেন, যুদ্ধের আগে হাসপাতালে দৈনিক রোগী ভর্তির গড় সংখ্যা ছিল ৭০০। এখন প্রতিদিন নিয়মিত দুই হাজারেরও বেশি রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে।

গাজার অনেক হাসপাতালের মতোই নাসের হাসপাতালেও জ্বালানি সংকটের কারণে চিকিৎসা সরঞ্জাম চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অঞ্চলে সীমিত ত্রাণ সহায়তা পৌঁছালেও হাসপাতালের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেন, 'আমরা কিছুই পাইনি।'

 চিকিৎসার আশায় জ্বরে কাঁপতে থাকা শিশুদের হাসপাতালে আনা হচ্ছে। কিন্তু ওদের জন্য পর্যাপ্ত এসিটামিনোফেনের (প্যারাসিটামল) ব্যবস্থাটুকুও নেই।
ছবি তোলা সেই ব্যক্তি বলছিলেন, তিনি প্রায়ই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের পাশ দিয়ে যান। এটি সবসময়ই রোগীতে ভর্তি থাকে।

টানা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এ হামলায় গাজার ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে ২১টি বন্ধ হয়ে গেছে আগেই। বাকি হাসপাতালগুলোও জ্বালানি সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.