Sylhet Today 24 PRINT

বিশ্বখ্যাত প্রাণিবিদ, শিম্পাঞ্জি বিশেষজ্ঞ ডেম জেন গুডঅলের মৃত্যু

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০২ অক্টোবর, ২০২৫

বিশ্বখ্যাত প্রাণিবিদ, প্রাইমেট বিশেষজ্ঞ, নৃতত্ত্ববিদ ও সংরক্ষণবিদ ডেম জেন গুডঅল মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।

বিবিসি লিখেছে, তার পর্যবেক্ষণ মানুষ ও শিম্পাঞ্জির মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উন্মোচনে সহায়তা করেছে। তিনি বিশ্বজুড়ে প্রকৃতি সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন।

জেন গুডঅল ইনস্টিটিউট এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ক্যালিফোর্নিয়ায় তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়।

“তার আবিষ্কার বিজ্ঞানে বিপ্লব এনেছে এবং তিনি আমাদের প্রাকৃতিক জগতের সুরক্ষা ও পুনরুদ্ধারে একজন নিরলস কর্মী ছিলেন।”

১৯৩৪ সালে লন্ডনে জন্ম নেওয়া গুডঅল শৈশবে ডক্টর ডলিটল ও টারজানের মত বই পড়ে প্রাণির প্রতি গভীর আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

তার বয়স যখন প্রায় ২৫ বছর, তখন কেনিয়ায় এক বন্ধুর খামারে থাকাকালে প্রখ্যাত প্রাণিবিদ লুইস লিকির সঙ্গে দেখা করেন। প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা না থাকলেও গুডঅলের মধ্যে সম্ভাবনা দেখে তানজানিয়ার জঙ্গলে তার প্রথম গবেষণা সফরের ব্যবস্থা করেন লিকি।

সেই বছর গুডঅলই প্রথম কোনো প্রাণিকে যন্ত্র ব্যবহার করতে দেখেন। একটি পুরুষ শিম্পাঞ্জি লাঠি দিয়ে মাটির ঢিবি থেকে পোকা বের করছিল। প্রাণিটিকে ডেভিড গ্রেবিয়ার্ড নামে ডাকতেন গুডঅল।

তার আগ পর্যন্ত ধারণা ছিল, যন্ত্র ব্যবহারের মত যথেষ্ট বুদ্ধি কেবল মানুষেরই আছে। তার নতুন পর্যবেক্ষণ প্রচলিত বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং বিবর্তন বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ গঠনে ভূমিকা রাখে।

তার গবেষণা শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয় এবং ১৯৬৫ সালে তিনি ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর প্রচ্ছদে উঠে আসেন। সেখানে তিনি শিম্পাঞ্জিদের আবেগ ও সামাজিক জীবনের দিকগুলো তুলে ধরেন।

গুডঅল দেখান, এই প্রাণিরা শক্তিশালী পারিবারিক বন্ধন গড়ে তোলে এবং অঞ্চল দখল ঘিরে যুদ্ধেও লিপ্ত হয়।

তিনি একটি তথ্যচিত্রে অংশ নেন, যাতে বিখ্যাত অভিনেতা ও পরিচালক অরসন ওয়েলস ধারাভাষ্য দেন। সেখানে গুডঅলকে শিশু শিম্পাঞ্জিদের সঙ্গে খেলতে ও কুস্তি করতে দেখা যায়।

যে পদ্ধতিতে গুডঅল কাজ করতেন, প্রাণিদের খুব ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন, তাদের নাম দিতেন এবং ‘আমার বন্ধু’ বলে ডাকতেন– সে সময়ের অনেকের কাছেই, বিশেষ করে পুরুষ বিজ্ঞানীদের কাছে এ পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য ছিল না।

গুডঅলের কোনো স্নাতক ডিগ্রি না থাকলেও নিজের গবেষণার ওপর ভর করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

অভিজ্ঞতা অর্জনের পর চিড়িয়াখানা বা গবেষণাগারে বন্দি শিম্পাঞ্জিদের মুক্তির আন্দোলনে নামেন গুডঅল। পরে জলবায়ু পরিবর্তন ও বন ধ্বংসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সোচ্চার হন।

ড. গুডঅল ২০২৪ সালে বিবিসিকে বলেছিলেন, “আমরা ষষ্ঠ মহাবিলুপ্তির পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি... আমরা প্রকৃতি পুনরুদ্ধার এবং বিদ্যমান বন রক্ষায় যত বেশি কাজ করতে পারব, ততই ভালো।”

জীবনের শেষ ভাগে কী তাকে প্রেরণা যুগিয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে গুডঅল বলেন, “নিশ্চয় মানুষ তাদের সন্তানদের জন্য একটি ভবিষ্যৎ চায়।”

তার জেন গুডঅল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭৭ সালে, যা শিম্পাঞ্জিদের সুরক্ষায় কাজ করে। পাশাপাশি প্রাণি ও পরিবেশের কল্যাণে কাজ করা প্রকল্পকে সহায়তা করে। তিনি ২০০৩ সালে ডেম উপাধি পান এবং ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টিয়াল ফ্রিডম মেডাল লাভ করেন।

ড. গুডঅলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে জাতিসংঘ বলেছে, “তিনি আমাদের গ্রহ ও তার সমস্ত প্রাণির জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন এবং মানবতা ও প্রকৃতির জন্য এক অসাধারণ উত্তরাধিকার রেখে গেছেন।”

গ্রিনপিস ইউকের সহ-নির্বাহী পরিচালক উইল ম্যাককালাম বলেন, “ড. গুডঅলের উত্তরাধিকার কেবল বিজ্ঞানে নয়, প্রকৃতি রক্ষা এবং একটি উন্নত বিশ্ব গঠনে যে আশা জাগানিয়া বৈশ্বিক আন্দোলন সৃষ্টিতে সহায়তা করেছেন, তাতেও বিরাজমান।”

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
✉ sylhettoday24@gmail.com ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.