Sylhet Today 24 PRINT

আইএসের বিরুদ্ধে কুর্দি নারীদের দুঃসাহসী লড়াই

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১১ এপ্রিল, ২০১৬

‘ইয়াজিদি নারীদের ধর্ষণ করা আইএসের পরিকল্পনারই অংশ। তবে নারীদের ধ্বংস করার মানে সংস্কৃতি ধ্বংস করা।’ সামনের রাস্তায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে কথাগুলো বলেছিলেন কুর্দি যোদ্ধা হাভিন। আইএসের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধ করছেন তারা। তাদের দাবি, আইএস তাদের ভয় পায়। তারা মনে করেন, গোটা বিশ্বের সব নারীর জন্য তারা লড়াই করছেন।

সিরিয়ার কুর্দিশ ডেমোক্র্যাটিক ইউনিট পার্টির (পিওয়াইডি) প্যারামিলিটারি শাখা পিপলস প্রটেকশন ইউনিট-ওয়াইপিজি। ওয়াইপিজি আইএসের বিরুদ্ধে সাফল্যের সঙ্গে যুদ্ধ করা ছাড়াও ইয়াজিদি নারীদের প্রশিক্ষিত করছে। ওই ওয়াইপিজির একটি অংশ হলো ওয়াইবিএস। কুর্দিশ সিভিল ডিফেন্স মিলিশিয়া বাহিনী ওয়াইবিএসের যোদ্ধা শাখার সদস্য হিসেবে হাভিন ও তার সহযোদ্ধা ডেভিসের দায়িত্ব চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখা। কুর্দিশ সশস্ত্র বাহিনীর পুরুষ সদস্যদের মতো করেই সবুজ গেরিলা পোশাক পরেন তারা।

হাভিনদের দলটি হলো ‘জিন’। এর মানে দলটি কেবল নারীদের। এই দলের সদস্যরা প্রধানত বাস করে সিনজার পর্বতের পাদদেশে কানাশোর গ্রামে। তুরস্ক ও সিরিয়া থেকে আসা এই নারীরা প্রধানত ইয়াজিদি ও কুর্দ বংশোদ্ভূত।

চোখের পাশে একটি ক্ষত দেখিয়ে বাইশ বছরের হাভিন বলেন, ‘আমি অনেকদিন ধরে এখানে যুদ্ধ করছি। সম্মুখযুদ্ধেই ছিলাম কিন্তু আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) দিয়ে আহত হই।’

৩০ বছর বয়সী আরেক শক্তসমর্থ নারী যোদ্ধা ডেনিস জানান, ২০১৪ সালের আগস্টে সিনজার গ্রামে পৌঁছায় আইএস। ইরাকের উত্তর-পশ্চিমের সেই গ্রাম থেকে হাজার হাজার নারীকে বন্দি করে আইএস। বিশেষত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচার করা হয়। আইএস সদস্যরা অল্পবয়সী নারী ও শিশুদের বন্দি করে ও পুরুষ ও বয়স্ক নারীদের হত্যা করে। যারা পালাতে পারেননি তাদের হত্যা করে গণকবরে শুইয়ে দেওয়া হয়। ডেভিস বলেন, ‘ইয়াজিদি নারীদের সাথে যা ঘটেছে তারপর সব নারীর সংগঠিত হওয়ার অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে।’

ডেনিস বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এই নারীদের সমর্থন করা উচিত ও তাদের আত্মরক্ষায় সাহায্য করা উচিত। আইএস এই নারী-শিশুদের নিয়ে যায় তাদের সম্মান নষ্ট করতে। আমরা ইয়াজিদি নারীদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেই যেন তারা নিজেরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।’

নারী ও পুরুষ যোদ্ধারা আলাদা আলাদা বাস করেন, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। হাভিন বলেন, ‘আমরা আলাদা থাকি এইটুকুই, নইলে সম্মুখসমরে আমরা সবাই সমান।’


নারীদের ঘাঁটি নারী শহিদদের ছবি ও রঙ্গিন কার্পেট দিয়ে সুসজ্জিত। ইয়াজিদি গ্রামে প্রবেশ করতে হলে প্রত্যেক গাড়ীকেই এই নারী যোদ্ধাদের কড়া নজরদারির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নারী যোদ্ধাদের সাফল্য কেমন- এই প্রশ্ন করলে ডেনিস হাসিতে ফেটে পড়েন। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের ভীষণ ভয় করে। আমরা যদি তাদের হত্যা করি তাহলে তারা আর বেহেশতে যেতে পারবে না। আমাদের হাসি পায়, আমরা উচ্চস্বরে ঘোষণা দিই যে আমরা আসছি। তারা ভীত হয়ে পড়ে।’

উল্লেখ্য ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী কোনও নারীর হাতে নিহত পুরুষ স্বর্গবাসী হওয়ার অধিকার হারায়। এটা ভেবে কুর্দি নারী যোদ্ধাদের খুব আনন্দ হয়।

হাভিন বলেন, ‘এই নিয়মটা আমার পছন্দ। আমরা তাদের হত্যা করলে তারা আর বেহেশতে যেতে পারে না। আমি জানি না ঠিক কয়জনকে হত্যা করেছি, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। তাদের সবাইকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি খুশী নই।’

দুই সপ্তাহ আগে সিরিয়া সীমান্ত থেকে তিন ঘণ্টা দূরত্বের একটি আরব গ্রাম দখল করেছিল আইএস। কুরদিশ যোদ্ধারা সেটি পুনরুদ্ধার করেছে। দিলসান নামের এক নারী গেরিলা বলেন, ‘আমরা সপ্তাহখানেক একটা পাহাড়ে লুকিয়ে ছিলাম, আমাদের ১৫ জন যোদ্ধাকে হারাতে হয়েছে, এদের ১৪ জন পুরুষ ও একজন নারী।’

চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিলেন রোজালিন নামের ১৮ বছরের এক তরুণী। তিনি এখন যোদ্ধা। রোজালিন বলেন, ‘আমি এই ভূখণ্ড থেকে আইএস তাড়াতে যুদ্ধে এসেছি। আমি এসেছি ইয়াজিদি নারীদের জন্য। আমি দেখেছি কিভাবে আইএস সদস্যরা নারীদের মাথা কেটে ফেলে দেয়। আমি আরও ভয়ঙ্কর সব জিনিস দেখেছি। এসব আর দেখতে চাই না বলেই যুদ্ধে এসেছি।’


তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে সম্প্রতি যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন রোজালিন। তিনি বলেন, ‘আমাকে অবশ্যই ওই পশুদের হাত থেকে ইয়াজিদি নারীদের রক্ষা করতে হবে। আমি তাদের অত্যন্ত ঘৃণা করি কিন্তু মোটেই ভয় পাই না। আমরা যখন যুদ্ধে যাই কুর্দি নারীরা তখন যুদ্ধের গান করেন।’

আইএস যোদ্ধাদের দুই আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী এক গাড়ীভর্তি বিস্ফোরক নিয়ে এই ঘাঁটিতে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আগেভাগেই টের পেয়ে তাদের প্রতিহত করেন নারী যোদ্ধারা।

যুদ্ধ করে জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়ে ফেলা ডেনিস জানান, ইয়াজিদি নারীদের রক্ষা করা বৈশ্বিকভাবে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপমাত্র। তিনি বলেন, ‘আপনি আর আমি, আমরা স্বাধীন। আপনি সাংবাদিক, আমি যোদ্ধা। কিন্তু বিশ্বজুড়ে আমাদের বোনেরা পুরুষের ক্ষমতার অধীনে মহা দুর্দশায় আছেন। আফ্রিকা, এশিয়া এমনকি ইউরোপ আমেরিকাতেও নারীরা পুরুষের অন্যায় শোষণের শিকার। আমাদের নারীদের যুদ্ধ পৃথিবীর সব নারীর জন্য।’

সূত্রঃ দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.