Sylhet Today 24 PRINT

ব্রাজিলে এখন ধনী, শ্বেতাঙ্গ ও পুরুষদের সরকার

সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক |  ১৫ মে, ২০১৬

আইনভঙ্গ ও দুর্নীতিতে সহযোগিতার অভিযোগে দিলমা রুসেফ বিদায় নেওয়ার পর ব্রাজিলে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট মাইকেল তেমারের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে নতুন মন্ত্রিসভা।

গত বৃহস্পতিবার দায়িত্ব নেওয়ার পরের দিন শুক্রবার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে বসার পরপরই জাতিকে তাঁর ওপর আস্থা রাখতে অনুরোধ জানিয়েছেন নতুন এই প্রেসিডেন্ট।

কিন্তু যে দুর্নীতির অভিযোগে রুসেফের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন তেমার, তা থেকে তিনি নিজেই মুক্ত নন। তেল কোম্পানি পেট্রোব্রাসের কেলেঙ্কারিতে তাঁর জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তেমারের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত না চললেও তাঁর মন্ত্রিসভার অনেকের বিরুদ্ধে তা চলছে।

এ ছাড়া মন্ত্রিসভার দুই ডজন সদস্যের মধ্যে রয়েছে কয়েকটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য। যেমন তাঁরা সবাই শ্বেতাঙ্গ, পুরুষ, রক্ষণশীল, ধনাঢ্য ব্যক্তি ও নানা আইনি সমস্যার সম্মুখীন।

গত বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের সিনেট বামপন্থী প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফকে বরখাস্ত করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরুর পক্ষে ভোট দেয়। এতে রুসেফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রচারণা চালানো মাইকেল তেমারের পক্ষে নির্বাচন না করেই ক্ষমতায় বসার সুযোগ হয়। প্রশ্ন উঠেছে, তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা এই যে অভিন্ন ‘গুণাবলির’ অধিকারী তা কি দেশটির প্রায় ২০ কোটি ৪০ লাখ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে?

পার্লামেন্ট দিলমা রুসেফকে বরখাস্ত করার ২৪ ঘণ্টা পর অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট তেমার নয়া মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক ডাকেন শুক্রবার। এরপর তেমার সরকার রুসেফ যুগের কালো অধ্যায় রাতারাতি মুছে ফেলার অঙ্গীকার করে বলেছে, গত বছরজুড়ে রুসেফবিরোধীরা রাস্তায় আন্দোলন করে দুর্নীতি, রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও অর্থনৈতিক মন্দা অবসানের দাবি জানিয়েছেন।

ব্রাজিলের চিফ অব স্টাফ এলিসিউ পাদিলহা বলেন, ‘দুটি দাবি আদায়ে জনগণ রাস্তায় নেমেছিল। তাদের দাবি ছিল একটি দুর্নীতিমুক্ত ও কার্যকর রাষ্ট্র। তাই দুর্নীত উচ্ছেদ করে সেখানে দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রবেশ ঘটানো হবে।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, তেমারের ব্যবসাবান্ধব নতুন সরকার দক্ষতা-যোগ্যতার কথা বলতে পারে; কিন্তু তারা দুর্নীতি উচ্ছেদের মডেল হতে পারে না। কেননা, রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোব্রাসের অর্থ আত্মসাৎ ও ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় নতুন মন্ত্রিসভার অন্তত তিনজন সদস্যের বিরুদ্ধে বড় ধরনের তদন্ত চলছে। সম্ভবত এটিই দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্নীতির কেলেঙ্কারির ঘটনা। এই তিনজনের একজন হলেন সরকারের অন্যতম ক্রীড়নক, পরিকল্পনামন্ত্রী ও তেমারের দল পিএমডিবির প্রধান রোমেরো জুকা।

আইনপ্রণেতাদের আইনি সংকট নজরদারি করে এমন একটি বিশেষায়িত ওয়েবসাইট কংগ্রেসো এম ফকো শুক্রবার বলেছে, ব্রাজিলের নতুন সরকারের আরও তিন মন্ত্রী ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে তদন্তের সম্মুখীন। আর দুই মন্ত্রী এমন দুই রাজনীতিবিদের সন্তান যাঁদের বিরুদ্ধে পেট্রোব্রাসের ঘটনায় তদন্ত চলছে।

ব্রাজিলের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফের বিদায়ের পর গঠিত এই সরকারের মন্ত্রিসভায় কোনো নারীর স্থান হয়নি। নেই কোনো কৃষ্ণবর্ণের মানুষও। দেশে তীব্র ধনবৈষম্যের শিকার হয়ে যাঁরা দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করছেন, তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করেন এমন কোনো ব্যক্তিরও ঠাঁই হয়নি নতুন মন্ত্রিসভায়।

এর আগে রুসেফের মন্ত্রিসভায় নারী ও কৃষ্ণাঙ্গদের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্ব ছিল। যেমন তাঁর মন্ত্রিসভায় দুই মেয়াদে ১৫ জন নারী দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের একজন নারী, মানবাধিকার ও বর্ণসমতাবিষয়ক মন্ত্রী নিলমা লিনো গোমেজ। এখন তেমারের মন্ত্রিসভায় এই পদটি ছেঁটে ফেলা হয়েছে।

মন্ত্রিসভায় তেমারের পছন্দের ব্যক্তিদের আরেকটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য সম্ভবত রক্ষণশীল মূল্যবোধের বিষয়টি। ধনাঢ্য কৃষিমন্ত্রী ব্লেইরো ম্যাগি ‘সয়াবিন রাজা’ বলে খ্যাত। তাঁর পরিবেশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ব্রাজিলের আমাজন রেইনফরেস্ট ধ্বংসের জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম।

আবার বিচারমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি মোরায়েস সাওপাওলো শহরের নিরাপত্তা প্রধানেরও দায়িত্বপ্রাপ্ত। শহরের যে পুলিশ বাহিনীর তদারক তিনি করে থাকেন, সেটির বিরুদ্ধে রয়েছে হরহামেশা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.