Sylhet Today 24 PRINT

বয়ঃসন্ধিতেই বখে গিয়েছিলেন ‘রমণীবিলাসী’ ট্রাম্প

সিলটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক  |  ১৭ মে, ২০১৬

ছোট থেকেই একটু দুষ্টু ছিলেন ট্রাম্প। বয়ঃসন্ধিকালেই সুদর্শনা-সঙ্গ উপভোগ করতে শুরু করেন। পৈতৃকসূত্রের ব্যবসা এবং নিয়মিত অভিসার- সমানতালেই চলতে থাকে দুটি। উভয়ক্ষেত্রেই সফল তিনি।

মদ, অর্থ এবং নারী- জীবনে কোনোটাইরই অভাব বোধ করেননি। আর এ নিয়ে কারও কাছে কখনও জবাবদিহিতাও করতে হয়নি। তবে এই প্রথমবারের মতো বেকায়দায় পড়ছেন- কারণ এটা রাজনীতি! এক সময়ের টিভি উপস্থাপক তার চটুল কথায় মাত করেছেন নির্বাচনী মিছিল।

ক্যাসিনো ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিতে এসে সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভালোই লড়ছেন তিনি। জনপ্রিয়তায় হিলারিকেও ছুঁইছুঁই। টানটান উত্তেজনার এমন সময়ে রোববার ট্রাম্পের অতীত কীর্তিকলাপ নিয়ে বোমা ফাটিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

ভোটের বাজারের জনদরদী ট্রাম্প নাকি বরাবরই ‘নারী ছুকছুকে’ প্রকৃতির। ব্যক্তি ট্রাম্পের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণে

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। ৬ সপ্তাহ ধরে প্রায় ৫০ জনের সাক্ষাৎকার নেয়ার পর প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে ট্রাম্পকে একজন নারীলোলুপ ও বিকৃত মানুষ হিসেবেই তুলে ধরা হয়েছে। যেন তিনি এক আত্মম্ভরী ব্যবসায়ী আর ‘ট্রাম্পরাজ্যে’ তাবৎ নারীরা তার দাসী!

স্কুলজীবনেই ‘রমণীমোহন’ উপাধি : ১৯৬৪ সালে নিউইয়র্কের মিলিটারি একাডেমিতে অধ্যয়নকালে সুযোগ পেলেই রূপসী ললনাদের সঙ্গ নিতেন তিনি।

তার স্কুলবন্ধু জর্জ হোয়াইট জানান, ‘স্কুলজীবন শেষ হওয়ার আগেই পুরো একাডেমিতে সবাই তাকে প্লেবয় বলে ডাকতে শুরু করে। যদিও বালক বিদ্যালয়টিতে মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ। তবু ট্রাম্প বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে মেয়ে নিয়ে আসত। ট্রাম্পের প্রতিটি সঙ্গিনীই ছিল লাস্যময়ী।

ট্রাম্পের আরেকটি বিস্ময়কর দিক হল- কোনো মেয়ের সঙ্গেই তাকে দ্বিতীয়বার দেখা যায়নি।’ নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী দুষ্টু ট্রাম্প নষ্ট হতে শুরু করেন সেই আবাসিক স্কুলেই! 

প্রথম দর্শনেই ‘বিকিনি’ গিফট : ১৯৯০ সালে ফ্লোরিডার পুলবিচে এক মারাত্মক ঘটনার জন্ম দেন তিনি। প্রথম দর্শনেই অভিভূত করে ফেললেন মডেল রোয়ান ব্রিয়ান লেনকে। রূপের গুণকীর্তন করতে করতে ধরলেন হাত। নিয়ে গেলেন রুমে। ড্রয়ার খুলে পছন্দমতো বেছে নিতে বললেন বিকিনি। তারপর নতুন পোশাক পরিয়ে মডেলকে পাশে নিয়ে বীরদর্পে ঘুরে বেড়ালেন সুইমিংপুলের পার্টিতে।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, এই প্রিয়দর্শনীর সঙ্গে পরবর্তী ৩ মাস উড়ন্ত প্রেম করেছেন ট্রাম্প। এছাড়াও ১৯৯৭ সালের মিস ইউএসএ টেম্পল তাগার্ত বলেন, ‘এক অনুষ্ঠানে সে হুট করেই আমার কাছে এলো এবং জড়িয়ে ধরে চুমু খেল। ভয়াবহ অভিজ্ঞতা- প্রথম দর্শনেই!’

নারী স্বাস্থ্যে তীক্ষ্ণ চোখ : নিজ প্রতিষ্ঠান ট্রাম্প হাউসে বসে অফিসের নারী কর্মকর্তাদের চেহারা ও স্বাস্থ্য নিয়ে মাঝে মাঝেই বেঢপ মন্তব্য করতে অভ্যস্ত তিনি। তার কোম্পানির এক্সিকিউটিভ বারবারা রেস এবং লুই সানশাইনকে তাদের মুটিয়ে যাওয়া নিয়ে তাচ্ছিল্য করতেন ট্রাম্প। 

এমনকি বিনোদন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে এক প্রতিযোগীকে তিনি মুখের বদলে পায়ের ছবি জমা দিতে বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘তোমার মুখ খুব কুৎসিত’। সাবেক প্রেমিকা বিয়ার লেন বলেন, ‘প্রেমিকা মারলা ও স্ত্রী ইভানা সৌন্দর্যে ১০ এ কত পাবে সেই নাম্বার জানতে চাইতো ট্রাম্প। একটু ছেলেমানুষি করা তার অভ্যাস।’

বউ পেটানোতেও ওস্তাদ : ট্রাম্পের সাবেক স্ত্রী ইভানা ১৯৯৩ সালে তার বিরুদ্ধে দাম্পত্য সম্পর্ককালীন ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। এছাড়াও বর্তমান স্ত্রী ম্যালোনিয়াকেও শুধু রান্না আর ঘর গোছানোর বাইরে অন্য কিছুতে জড়াতে দিতে নারাজ তিনি। বার্ষিক একটানা বেতনে প্রথম বউকে ক্যাসিনোর দায়িত্ব দেয়া সম্পর্কে ট্রাম্প তার বই ‘দ্য আর্ট অব দ্য কামব্যাক’-এ বলেন, ‘আর কখনোই কোনো বউয়ের ওপর ব্যবসার দায়িত্ব দেব না। ব্যবসার আলাপ নয়, চার দেয়ালের মাঝে খুনসুটি করতেই পছন্দ করি আমি।’

পর প্রেমিকায় আসক্তি : ১৯৯০ সালে আটলান্টায় ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যবসায়িক আলোচনার জন্য এসেছিলেন তরুণ উদ্যোক্তা জুটি জিল হার্থ এবং জর্জ হার্নি। তখন প্রাণবন্ত তরুণী জিল হার্থের দিকে চোখ পড়ে ট্রাম্পের। প্রেমিক জর্জ জিলের সঙ্গে তার সম্পর্কের ব্যাপারটি ট্রাম্পকে বারবার নিশ্চিত করার পরেও জিলকে একান্ত সান্নিধ্য পাওয়ার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করেন তিনি। ট্রাম্পটাচে মিস ইউনিভার্স ‘উন্মাদিনী’: ১৯৯৬ সালের মিস ইউনিভার্স এলিসিয়া মাসাদো। ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে এসেছিলেন উন্নত ভবিষ্যতের আশায়। কিন্তু ট্রাম্পের উপর্যুপরি ‘অপমানজনক বিশেষণের’ হামলায় শেষ পর্যন্ত পাগলিতে পরিণত হন তিনি। এলিসিয়া বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে ৯০টি ক্যামেরার সামনে ট্রাম্প আমার স্বাস্থ্য নিয়ে কটূ কথা বললেন। এরপর পাঁচ বছর মানসিক ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়েছি আমি।’

নারীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য-জ্ঞান : ট্রাম্প টাওয়ারের বাইরে শীর্ষ প্রভাবশালী পদে থাকা রাজ্যের ডেপুটি মেয়রদের সঙ্গেও বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন ট্রাম্প। এলিয়েন এ টাউনসেলের সঙ্গে বৈঠকে তাকে ‘প্রিয়তমা’ বলে ডাকতে শুরু করেন তিনি। যা তার কাছে অপমানজনক হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাবেক এ নারী ডেপুটি মেয়র। আরেক ডেপুটি বারবারা ফাইক বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা নেই। তারপরও আমি তাকে থামাতে পারিনি। রাতভর এক নতুন সুপার মডেলের সঙ্গে আনন্দ যাপনের কথা বলেই যাচ্ছিলেন তিনি।’

প্রেমিকার পাশে বসে ‘প্রেসিডেন্ট স্বপ্ন’ : প্রথম স্ত্রী ইভানার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২৬ বছর বয়সী ব্রিয়ার লেনের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করেন ট্রাম্প। সেই প্রণয়সঙ্গিনী গত ফেব্রুয়ারিতে ‘ইনসাইড এডিশন’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘২৫ বছর আগেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ট্রাম্প। আমরা যখন একান্তে সময় কাটাতাম তখনই তাকে এ বিষয়ে বলতে শুনেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনসম্মুখে ট্রাম্প যতটা উদ্ধত, নিরালায় সে ততটাই শান্ত।’ অতীত অস্বীকারের

ভুলোমনা স্বভাব : ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘নারীদের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারটি নিয়ে পুরো বিশ্ব আমাকে ভুল বুঝছে। নারীদের প্রতি আমার সম্মানের কোনো ঘাটতি নেই। আমি একজন নারী উন্নয়ন কর্মী।’ এ সময় নারীদের প্রতি নিজের অটুট আস্থা ও শ্রদ্ধার কথাও জানান তিনি।

ট্রাম্প হাউসের কানাঘুষা : ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীদের অনেকেই ট্রাম্পকে উদার ও উৎসাহদানকারী ব্যক্তি হিসেবেই মনে করেন। তার ম্যানহাটন অফিসের কয়েকজন নারী কর্মকর্তা বলেন, ‘ট্রাম্প কখনও হঠাৎ করেই একটু খোলামেলা কথা বলেন, তবে পরক্ষণেই আবার ভদ্র আচরণ করেন।’ তিনি অনেক মেয়ের ক্যারিয়ার গড়ে দিয়েছেন তবে শারীরিক গড়ন নিয়ে মজা করাটা তার অভ্যাস। ট্রাম্প হাউসের প্রধান নির্বাহী বারবারা রেস বলেন, ‘অন্য কোনো গ্রুপের সঙ্গে মিটিংয়ের সময় অফিসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েদের নিজের সঙ্গে নিতেন তিনি। আমাকেও মোটা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সচেতন করে দিতেন।’ 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.