Sylhet Today 24 PRINT

‘আতঙ্কে নিজের বাচ্চাদের ছুড়ে ফেলেন এক যুবক’

ইসমালি খালিদি |  ১৫ জুলাই, ২০১৬

আমি জীবনে কখনও এই রকম উন্মত্ততা, এমন ত্রাস, এমন চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখিনি।

বোনের সঙ্গে দেখা করতে নিসে এসেছি। হোটেল নেগ্রেস্কোতে উঠেছি। নিসে বাস্তিল ডে সেলিব্রেশন যে খুব বড় করে হয়, তা অনেক দিন ধরেই জানি। হোটেল থেকেই দেখছিলাম সেই উৎসব। বহু মানুষ রাস্তায়। আতসবাজির রোশনাই চলছিল। আচমকা দেখলাম প্রমনাদ দে আঁগলে-র দিক থেকে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ উদভ্রান্তের মতো ছুটতে ছুটতে আসছেন। পদপিষ্ট হওয়ার জোগাড়।

কেন ছুটছেন, কোথায় যাবেন, কী হয়েছে, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না হোটেল থেকে। শুধু দেখছি উদভ্রান্ত মানুষের দৌড় আর শেষ হচ্ছে না। লোকজন ছুটছে তো ছুটছেই। দেখে মনে হচ্ছিল, যে যার পরিবারকে আগলে নিয়ে পালিয়ে যেতে চাইছে জায়গাটা থেকে। শ’য়ে শ’য়ে, শ’য়ে শ’য়ে, শ’য়ে শ’য়ে...।

কিছু ক্ষণ পর দেখলাম ঠিক উল্টো দিক থেকে আবার বহু মানুষ দৌড়ে আসছেন। এই রকম চূড়ান্ত বিভ্রান্তি জীবনে কখনও সত্যিই দেখিনি। কেউ কিছুই জানে না। কী হচ্ছে, কারও কাছে তার সঠিক খবর নেই। শুধু দেখতে পাচ্ছি মানুষ যেন প্রাণ বাঁচানোর জন্য আকুল হয়ে পালাচ্ছেন।

ভূমধ্যসাগরের তীর বরাবর প্রমনাদ দে আঁগলে-তে বহু মানুষ বৃহস্পতিবার রাতে জড়ো হয়েছিলেন। বাস্তিল ডে উদযাপন করতে। আমার হোটেল থেকে মাত্র ৮০০ মিটার দূরে ওই জায়গাটা। কিন্তু কী কারণে ওই রকম সন্ত্রস্ত হয়ে গেলেন মানুষ, বুঝতে পারছিলাম না। পরে জানতে পারলাম, এক আততায়ী ট্রাক নিয়ে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে লোকজনকে পিষে পিষে মেরেছে। উন্মত্ত ট্রাকটা নাকি খেলনা পুতুলের মতো ছিটকে ছিটকে দিচ্ছিল মানুষকে।

সে সব অবশ্য জানতে পেরেছি অনেক পরে। দৌড়োদৌড়ি দেখে নীচে নেমে এসেছিলাম। যাঁরা হোটেলের দিকে দৌড়ে আসছিলেন বা আমাদের সামনে দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছিলেন অন্য কোনও দিকে, তাঁদের থেকে জানার চেষ্টা করছিলাম, কী হয়েছে? দেখলাম তাঁরাও ঠিকঠাক জানেন না। পুলিশ তাঁদের শুধু বলেছে, বাঁচতে হলে সবাই পালান, পালিয়ে যান। তাই কিছু না জেনেই সবাই প্রাণভয়ে দৌড়ে পালাচ্ছেন। যে যে দিকে পারছেন পালাচ্ছেন। কোন পথে গেলে বাঁচতে পারবেন, কারও কাছে স্পষ্ট নয়। বিপদটা ঠিক কী, কেউ জানেন না। যে দিকে দৌড়চ্ছেন, সেই দিক থেকে বিপদ আসতে পারে কি না, তা নিয়েও সংশয়! তবু চলছিল আতঙ্কের সেই দৌড়।

এক যুবককে দেখলাম, আতঙ্কে নিজের বাচ্চাদের ছুড়ে ফেলছে। দৌড়ঝাঁপের মধ্যে পদপিষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তাই সম্ভবত বিকল্প রাস্তা খুঁজছিল সে। নিজের সন্তানদের সে একটা বেড়ার অন্য পাশে ছুড়ে দিল। তার পর নিজেও বেড়া ডিঙিয়ে ওই দিকে ঝাঁপ দিল। ফের বাচ্চাদের নিয়ে শুরু হল দৌড়।

পুলিশের ভুলেই ওই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কাউকে কিছু না জানিয়ে শুধু পালাতে বলায়, ওই রকম বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। আমি রাস্তায় নামার সাহস পাইনি। পাশ কাটিয়ে কোনওমতে বেরিয়ে এসেছি। পদপিষ্ট হয়ে যেতে পারতাম। আরও অনেক মানুষের ক্ষতি হয়ে যেতে পারত।


(ইসমালি খালিদি ফিলিস্তিনীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন লেখক। নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা তিনি ‘দ্য গার্ডিয়ান’কে দিয়েছেন। তা থেকে অনুবাদ করে ছেপেছে আনন্দবাজার)

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.