Sylhet Today 24 PRINT

শেখ মুজিবের ভাস্কর্য সরানোর দাবি বেকার হোস্টেলের মুসলিম ছাত্রদের

সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক |  ২১ মার্চ, ২০১৭

কলকাতার বেকার হোস্টেলে স্থাপন করা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যটিকে ‘মূর্তি’ আখ্যা দিয়ে তা সড়ানোর দাবি তুলেছে হোস্টেলের বাসিন্দা মুসলিম ছাত্রদের একাংশ।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) এই দাবি নিয়ে তারা কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশি বাধায় তা সফল হয়নি।

পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানান, উপ-দূতাবাসে পৌঁছানোর আগেই পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। তাদের দাবি সনদও জমা নিতে চায়নি উপ-দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। পরে স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেটি গ্রহণ করেন।

সরকারি ছাত্রাবাস বেকার হোস্টেল মুসলমান ছাত্রদের আবাস। শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রজীবনে হোস্টেলটির যে কক্ষে থাকতেন সেখানে একটি সংগ্রহশালা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে। ওই সংগ্রহশালাতেই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতির ভাস্কর্য স্থাপন করেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।

বর্তমানে হোস্টেলে বসবাসকারী ছাত্রদের মধ্যে যারা ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার দাবি করছেন তারা বলছেন, গোটা হোস্টেল চত্বরে ইসলামিক পরিমণ্ডল রয়েছে। সেখানে একটি মসজিদও আছে। তার মধ্যে কোনো ব্যক্তির ভাস্কর্য রাখাকে ইসলাম বিরোধী হিসেবে বর্ণনা করছে দাবি উত্থাপনকারী ছাত্ররা। তবে সেখানে যে সংগ্রহশালা রয়েছে, সে ব্যাপারে তাদের আপত্তি নেই।

শিক্ষার্থী সাহেব আলি শেখ বলেন, “এই হোস্টেলে যারা থাকি, সকলেই মুসলমান। এটা একটা ধর্মীয় স্থানও, মসজিদ আছে। ইসলাম ধর্মে মূর্তি পূজা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই আমাদের হোস্টেলের পরিবেশে কোনো ব্যক্তির মূর্তি রাখা আমরা মেনে নিতে পারছি না।”

এমএর শিক্ষার্থী নাজমুল আরেফিন বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। আমাদের হোস্টেলেরই প্রাক্তন আবাসিক। কোনো অসম্মান হোক তার, সেটা আমরা চাই না। কিন্তু একই সঙ্গে এটা একটা ধর্মীয় প্রাঙ্গণ। সেখানে কোনো ব্যক্তির মূর্তি থাকা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। সংগ্রহশালা করা হোক, লাইব্রেরি করা হোক, কিন্তু মূর্তিটা সরানোর দাবি করছি আমরা।”

আরেক আবাসিক ছাত্র মুহম্মদ গোলাম মাসুদ মোল্লা বলেন, “ওই মূর্তিটা সংগ্রহশালার ঘরে লাগানো কাঁচের দরজার বাইরে থেকেই দেখা যায়। সেখানে অনেক ফুলও দেয়া হয়েছে সম্প্রতি। একটা ইসলামিক পরিবেশে মূর্তি থাকাটা হারাম। তাই সেটিকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হোক।”

ছাত্রাবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান বেকার হোস্টেলের বাসিন্দা হয়ে পড়াশোনা করতেন তখনকার ইসলামিয়া কলেজে। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ। সেখানে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অনার্স পড়ছেন ঋতিক হাসান। বেকার হোস্টেলের এই বাসিন্দা কলেজে যাওয়ার পথে বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে আমরা সকলেই অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মূর্তি রাখা অনুচিত। তাই সেটিকে সরিয়ে দেয়া হোক।”

পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেকার হোস্টেল পরিচালনা করলেও তিনতলার যে ঘরে শেখ মুজিব থাকতেন, সেখানে তৈরি হওয়া সংগ্রহশালাটি তাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস দেখাশুনা করে। ঘরের মূল চাবিটিও থাকে উপ-দূতাবাসেই। অন্য চাবিটি থাকে হোস্টেলের সুপারিন্টেনডেন্ট ও মাওলানা আজাদ কলেজের অধ্যাপক দবীর আহমেদের কাছে।

দবীর আহমেদের কাছে অবশ্য আবাসিক ছাত্ররা শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি সরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কোনো আবেদন জানাননি।

সম্প্রতি ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে ওই সংগ্রহশালায় রাখা ভাস্কর্যে ফুলের স্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় উপ-দূতাবাসসহ নানা সংগঠনের পক্ষ থেকে। সেদিন থেকেই ভাস্কর্যটি সরানোর ব্যাপারে সরব হয় বর্তমান আবাসিকরা।

বেকার হোস্টেলের প্রাক্তন আবাসিক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের কোনো সিলেবাসে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর সম্পর্কে পড়ানো হয় না। তাই সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে এটা জানা সম্ভব নয় বঙ্গবন্ধুর জীবন, বাংলা ভাষা, বাঙালী জাতির জন্য তার লড়াই সংগ্রাম কী ছিল। সেজন্যই সংগ্রহশালা হচ্ছে না মূর্তি বসানো হচ্ছে, তা নিয়ে এতদিন ওই হোস্টেলের আবাসিকদের আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ১৭ মার্চের অনুষ্ঠানের পরে ছাত্রদের মধ্যে একটা তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ওই মূর্তি মুসলিম ছাত্রাবাসে রাখা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কলকাতার যে কোনো জায়গায় সম্মানের সঙ্গে ওই মূর্তি স্থাপন করা হোক।”

বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের সূত্র বলছে, তাদের কাছেও শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে বেকার হোস্টেলের ছাত্রদের এই প্রতিক্রিয়ার খবর পৌঁছেছে। বিষয়টি তারা পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং ভারত সরকারের কাছে জানিয়েছেন। কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারছেন না যে সংগ্রহশালায় ভাস্কর্য বসানোর এতদিন পরে হঠাৎ করে কেন ছাত্রদের মধ্যে এই প্রতিক্রিয়া তৈরি হলো।

খবর : বিবিসি বাংলা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.