Sylhet Today 24 PRINT

মানবপাচারের অভিযোগে থাই জেনারেলের দণ্ড

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২০ জুলাই, ২০১৭

থাইল্যান্ডে মানবপাচার চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশটির সেনাবাহিনীর এক জেনারেলসহ ৬২ জন দণ্ডিত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন রাজনীতিক ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। দেশটির সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল মানাস কংপেনকে ২৭ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত।

বুধবার বিবিসির খবরে বলা হয়, দোষীদের মধ্যে রাজনীতিক ও পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। অন্য এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে ৭৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের পাচার এবং মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় জেনারেল মানাসকে ওই দণ্ড দেওয়া হয়।

মানবপাচার, অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে আরো শতাধিক আসামির বিচার চলছে বলে বিবিসির খবরে বলা হয়।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০১৫ সালের জুনে জেনারেল মানাস কংপেন গ্রেফতার হওয়ার পর থাইল্যান্ড দিয়ে মানবপাচার বন্ধ হয়ে যায়। আদালতের বিচারক সাবেক এই জেনারেলের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রমাণ পেয়েছেন বলে রায়ে উল্লেখ করেন।

বছর দুয়েক আগে মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছে জঙ্গলে পাচারকারীদের পরিত্যক্ত শিবিরে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে ওই ঘটনায় শতাধিক আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। বুধবার সেই মামলার একাংশের রায় ঘোষণা করেন আদালত।

ব্যাংকক পোস্ট বলছে, মানবপাচারে বিচারের মুখোমুখি হওয়াদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদধারী কর্মকর্তা মানাস থাইল্যান্ডের দক্ষিণ অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। ওই এলাকা পরিণত হয়েছিল মানবপাচারের কেন্দ্রে, পাচারকারীদের এই নেটওয়ার্ক মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।

জেনারেল মানাস পাচারকারীদের থেকে তিন কোটি ৫৬ লাখের (১৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন বাথ) বেশি টাকা নিয়েছিলেন বলে আদালতে উঠে আসে। বিনিময়ে তিনি পাচারকারীদের নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকি এড়িয়ে সাগরের পাড় ধরে জঙ্গলের মধ্যে ওই সব শিবিরে যাওয়ার পথ বাতলে দিতেন।

২০১৫ সালের মে মাসে দক্ষিণাঞ্চলীয় সংখলা প্রদেশে পাহাড়ি জঙ্গলের মধ্যে পরিত্যক্ত শিবিরে ৩৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধারের পর মানবপাচারের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালায় থাই সরকার। সে সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এই আসামিদের।

মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ওই শিবিরে আটকে তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হত বলে তদন্তে উঠে আসে।

দণ্ডিতদের মধ্যে অন্তত একজন, পাজুবান অংকাচোতেপান, আধুনিককালের এই ‘দাস ব্যবসার’ অন্যতম হোতা বলে ব্যাংককপোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়। ‘বিগ ব্রাদার টং’ নামে পরিচিত দক্ষিণাঞ্চলীয় সাতুন প্রদেশের এই রাজনীতিক এক সময় প্রাদেশিক সরকারের কর্মকর্তা ছিলেন। ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার। তাকে ৭৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

৭৮ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত আরেক রাজনীতিক বান্নাকং পংফল সংখলা প্রদশের পেদাং বেসারের সাবেক মেয়র।

প্রতিবছর মানব পাচারকারীদের হাতে পড়ে হাজার হাজার মানুষ (বিশেষ করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি ও বাংলাদেশিরা) অবৈধ পথে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করে।

সর্বোচ্চ ৯৪ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে আনওয়ার নামে পরিচিত সোয়ে নেইং নামে একজন রোহিঙ্গার।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সংখলার পাহাড়ি জঙ্গলে মানবপাচারকারীদের যেসব শিবিরের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল, তার একটি পরিচালনাকারী চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন আনওয়ার।

মানব পাচারের আঞ্চলিক কেন্দ্রে পরিণত হওয়া থাইল্যান্ডকে মানুষ কেনা-বেচা, মানবপাচার ও দাস ব্যবসা বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.