Sylhet Today 24 PRINT

গণআদালতের প্রতীকী রায়ে গণহত্যায় সু চি সরকার দোষী সাব্যস্ত

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যার অপরাধে দেশটির সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন আন্তর্জাতিক গণআদালত। শুক্রবার পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনালের সাত সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল এ প্রতীকী রায় ঘোষণা করেন।

কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে আর্জেন্টাইন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারসের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারক দানিয়েল ফিয়েরেস্তেইন রায়টি পড়ে শোনান।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা, কাচিন ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২০০ জনের সাক্ষ্য ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এ রায় দেওয়া হয়।

রায়ে বিচারক দানিয়েল বলেন, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে করা অপরাধে মিয়ানমার সরকার দোষী বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই দেশটিতে থাকা কাচিন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অপরাধে মিয়ানমার সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

রায়ে পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল ১৭টি সুপারিশ করেছে। এছাড়া কয়েকটি সুপারিশ ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির মেকুইয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক প্রধান বিচারক গিল এইচ বোয়েরিঙ্গার বলেন, রোহিঙ্গা, কাচিন ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার যাচাইয়ের জন্য জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান দলকে অবশ্যই মিয়ানমারের ভিসা ও দেশটির রাখাইন রাজ্যে সহজে প্রবেশাধিকার দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই সংবিধান সংশোধন ও নিপীড়িত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আইনের সংস্কার করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের অধিকার ও নাগরিকত্ব দিতে হবে।

এই প্রতীকী বিচারের রায় মানার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা কারও নেই। বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত-প্রক্রিয়ায় যুক্ত আইনবিদ, অধিকারকর্মী ও গবেষকরা এই গণ আদালতে মিলিত হয়েছিলেন মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান দমনাভিযান বন্ধের দাবি নিয়ে।

পিপলস ট্রাইব্যুনালের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকও এই শুনানিতে বিবৃতি দেন। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা তিনি কুয়ালালামপুরে তুলে ধরেন।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারসের সাবেক সভাপতি দানিয়েল ফিয়েরেস্তেইন ছাড়াও এই ট্রাইব্যুনালের বিচারক প্যানেলে ছিলেন ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত-প্রক্রিয়ায় যুক্ত মালয়েশীয় অধিকারকর্মী জুলাইহা ইসমাইল, ঢাকার সেন্টার ফল স্টাডি অব জেনোসাইড অ্যান্ড জাস্টিসের উপদেষ্টা কম্বোডীয় আইনজীবী হেলেন জার্ভিস, অস্ট্রেলিয়ার মেকুইয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক প্রধান গিল এইচ বোয়েরিঙ্গার, ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার আইনজীবী নুরসিয়াবানি কাতজাসুংকানা, ইরানের মানবাধিকার কর্মী আইনজীবী সাদি সদর এবং ইতালির সুপ্রিম কোর্টের সলিসিটর জেনারেল নেল্লো রোসি।

মালয়েশিয়ার স্টার জানিয়েছে, মিয়ানমারে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে ১৭ দফা সুপারিশ করেছে পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল।  জাতিসংঘের একটি ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ দলকে মিয়ানমারে গিয়ে পূর্ণ তদন্ত চালানোর সব ধরনের সুযোগ দেওয়ার কথাও সেখানে রয়েছে।

বাংলাদেশ, মালয়েশিয়াসহ যেসব দেশ লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভার বহন করছে, তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে পিপলস ট্রাইব্যুনালের সুপারিশে।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর ১৯৭৯ সালে ইতালির বোলোনিয়ায় যাত্রা শুরু করে পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল। বিভিন্ন দেশে যুদ্ধপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে এ পর্যন্ত ৪৩টি প্রতীকী বিচারের আয়োজন করেছে এ সংগঠন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.