Sylhet Today 24 PRINT

বাংলাদেশি হিন্দুদের নাগরিকত্ব নিয়ে তীব্র আপত্তি আসামের

বিবিসি |  ১৮ মে, ২০১৮

বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভারতের নাগরিকত্ব দেয়ার প্রস্তাব করে নরেন্দ্র মোদির সরকার যে বিল এনেছে তা আসামে প্রবল প্রতিবাদের মুখে পড়েছে। ভারতীয় পার্লামেন্টের একটি যৌথ কমিটি এ ব্যাপারে আসামবাসীর মতামত শুনতে সম্প্রতি সে রাজ্যে গিয়েছিল, কিন্তু আসামের বিভিন্ন সংগঠন সেখানে বিলটির বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ দেখিয়েছে।

আসামের বিভিন্ন দলও বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা মনে করে বিজেপি যাই বলুক, বিদেশিরা বিদেশিই। তাদের হিন্দু-মুসলিম এই বিভাজনে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।

আসামে এই তীব্র প্রতিবাদের মুখে মোদি সরকারের আনা বিলটির ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শুধু মুসলিমরা নন- বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদেরও নাগরিকত্ব দেয়া চলবে না- এই দাবিতে আসামের বিস্তীর্ণ অংশ প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে রয়েছে গত বেশ কিছুদিন ধরেই।

যৌথ পার্লামেন্টারি কমিটির সাম্প্রতিক আসাম সফরের সময় এই দাবিতে তাদের কাছে ধর্না দিয়েছে বহু অসমীয়া সংগঠন ও বেশ কিছু রাজনৈতিক দল।

আসাম গণ পরিষদের (অগপ) সিনিয়র নেতা উৎপল দত্ত বিবিসিকে বলছিলেন, ‘আমার কেন্দ্র লখিমপুর থেকেই যেমন শতাধিক সংগঠন স্মারকলিপি পাঠিয়েছে কমিটির কাছে। তাদের বক্তব্য খুব সহজ, ১৯৭১ সালের পর যারা এসেছেন তাদের নাগরিকত্ব দেয়া চলবে না, সে তারা হিন্দুই হোক বা মুসলিম। হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিলে সমস্যা হবে।’

আসামে মুসলিমদের দল বলে পরিচিত এআইডিইউএফ-ও বলছে, পঁচাশি সালের আসাম চুক্তিতে যে তারিখটা নিয়ে ঐকমত্য হয়েছিল আজ সেটা হিন্দুদের আশ্রয় দেওয়ার নামে লঙ্ঘন করা হলে খুব অন্যায় হবে।

দলের কার্যকরী সভাপতি ড. আদিত্য লাংথাসার কথায়, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হল কাট-অফ ডেট, এটা নিয়ে রাজ্যের সব দল-গোষ্ঠী-সংগঠনই তো একমত হয়েছিল। আজ যদি একাত্তরের পরে আসা হিন্দুদেরও নাগরিকত্ব দেওয়া হয়, প্রতিবাদ তো হবেই। বিদেশিরা সব সময়ই বিদেশি - হিন্দু হোক বা মুসলিম, তাদের কাউকেই নাগরিকত্ব দেওয়া যায় না।

কিন্তু হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে অসমীয়াদের ভয়টা ঠিক কোথায়? অগপ বিধায়ক উৎপল দত্ত বলছিলেন, বাংলাভাষী হিন্দুদের জন্য এভাবে দরজা খুলে দিলে একদিন ত্রিপুরার মতো আসামেও বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যেতে পারেন।

তার যুক্তি, বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা যে-দিক দিয়েই আসুন না কেন, শেষ পর্যন্ত তারা সেই আসামে এসেই থিতু হন। কাজেই আমাদের ভয়, এভাবে চললে আর তাদের নাগরিকত্ব দিলে একদিন আমরা নিজভূমিতেই সংখ্যালঘু হয়ে যাব।

অগপ-র মতোই রাজ্যে বিজেপির আরেক শরিক দল বোড়ো পিপলস ফ্রন্ট। তাদের নেত্রী প্রমীলারানি ব্রহ্ম অবশ্য বিবিসিকে বলছিলেন, এই প্রশ্নে তারা বিজেপির অবস্থানকেই সমর্থন করছেন।

‘আমরা যেহেতু সরকারে আছি, তাই এখানে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যই আমাদের বক্তব্য। আমাদের দল এ ব্যাপারে আলাদা কোনও বিবৃতি দিচ্ছে না, বিজেপির বক্তব্যকেই সমর্থন করছে’- বলছিলেন তিনি।

আসামের মতামত শুনতে যে সংসদীয় কমিটি সে রাজ্যে গিয়েছিল, তার অন্যতম সদস্য মহম্মদ সেলিম আবার বলছিলেন, তারা রাজ্যের এক এক প্রান্তে এক এক রকম বক্তব্য পেয়েছেন - আর তার সবটাতেই ছিল বিভাজনের বীজ।

‘বরাক উপত্যকায় যেখানে বাঙালিরা সংখ্যায় বেশি, সেখানে যা শুনেছি - আর আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় যেখানে অহমীয়ারা বেশি, সেই দুই জায়গায় সম্পূর্ণ উল্টো মতামত শুনেছি আমরা।’

‘কেউ বলছে নাগরিকত্ব নতুন করে দেয়া যাবে না, দিলেও আসামে কেন? কেউ আবার বলছে নাগরিকত্বকে হিন্দু-মুসলিমের নামে ভাগ করা হচ্ছে কেন? একটা অংশ আবার বলছে যত বাঙালি আছে সবাইকে দেয়া হোক। আবার অন্য একটা অংশের মত শুধু হিন্দু বাঙালিদের দিলেই চলবে। কাজেই আসাম এখন বহু মতে ভাগ হয়ে গিয়েছে!’

আসামে জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাতের ইতিহাস খুবই পুরনো- তার মাঝে বিজেপি সরকারের আনা এই বিতর্কিত বিল যে নতুন করে হিংসায় ইন্ধন যোগাচ্ছে সে ইঙ্গিত স্পষ্ট।

আসামের ক্ষোভকে প্রশমিত না-করে নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে এই বিল নিয়ে এগোনো যে বেশ কঠিন হবে, পর্যবেক্ষকরাও সে কথা মানছেন।

খবর: বিবিসি বাংলা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.