Sylhet Today 24 PRINT

ভারতে সরকারি তোপের মুখে বামপন্থী লেখক-বুদ্ধিজীবীরা

বিবিসি বাংলা |  ২৮ আগস্ট, ২০১৮

কবি ভারভারা রাও ও প্রাবন্ধিক-মানবাধিকার কর্মী গৌতম নওলাখাকে গ্রেপ্তার করা হয়

ভারতের পুলিশ মঙ্গলবার বিভিন্ন রাজ্যে বামপন্থী লেখক, বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ বলেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার এক বামপন্থী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে এদের যোগসাজশ পাওয়া গেছে।

দিল্লি, মুম্বাই, হায়দরাবাদ, রাঁচি থেকে শুরু করে আরও অনেক জায়গায় এই পুলিশি অভিযান চলে।

পুলিশ সূত্রগুলি নিশ্চিত করেছে যে মাওবাদীদের সমব্যথী বলে পরিচিত কবি ভারভারা রাওকে হায়দরাবাদ থেকে এবং শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন অফ সিভিল লিবার্টিজ বা পিইউসিএলের প্রধান সুধা ভরদ্বাজকে ফরিদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়াও প্রাবন্ধিক ও মানবাধিকার কর্মী গৌতম নওলাখাকে দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অরুণ ফেরেরা ও ভেনন গঞ্জালভেজকে মহারাষ্ট্র্রের থানে ও মুম্বাই থেকে আটক করা হয়েছে।

গতবছর ৩১ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের ভীমা কোরেগাঁওতে প্রায় তিন লক্ষ দলিত মানুষ জড়ো হয়েছিলেন মারাঠা পেশোয়াদের বিরুদ্ধে তাদের বিজয়ের ২০০ বছর উদযাপন করতে। দলিতরা ভীমা কোরেগাঁওয়ের সেই যুদ্ধে ব্রিটিশদের পক্ষে লড়াই করেছিল।

দক্ষিণপন্থী কিছু সংগঠন ওই উদযাপনের বিরোধিতা করায় অশান্তি শুরু হয়, যা পরে হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। পরবর্তী তিনদিন ধরে নানা শহরে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্তত একজন নিহত হন।

পুনে শহরের পুলিশ ওই ঘটনার তদন্ত করছিল, এবং সেই সূত্রেই মঙ্গলবার দেশ জুড়ে তল্লাশি অভিযান চালানো হয় বলে সেখানকার পুলিশ বলছে।

তারা বলছে ওই ঘটনার তদন্তের সূত্রে এর আগে কয়েকজন সামাজিক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের কাছ থেকেই যেসব ব্যক্তির নাম পাওয়া গিয়েছিল, তাদের বাড়িতেই তল্লাশি অভিযান চালানো হয়।

মঙ্গলবার সকাল থেকে তল্লাশি শুরু হওয়ার পরে থেকেই মানবাধিকার কর্মীরা ওইসব ব্যক্তিদের বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে গিয়েছিলেন।

দেশ জুড়ে এই তল্লাশি অভিযান আর পাইকারি গ্রেপ্তারের তীব্র সমালোচনা করেছেন ভারতের নামকরা মানবাধিকার কর্মী এবং লেখক-বুদ্ধিজীবীরা।

লেখিকা অরুন্ধতী রায় বিবিসিকে জানিয়েছেন, "জনসমক্ষে যারা মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করছে, তাদের না ধরে উকিল, কবি, লেখক আর মানবাধিকার কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।"

"এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে ভারত কোন দিকে চলেছে। হত্যাকারীদের সম্মানিত করা হবে আর ন্যায়বিচার এবং হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে যারা মুখ খুলবেন, তাদের অপরাধী সাজানো হবে। এটা কি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হল?"

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ভারতে এসব গ্রেপ্তারের ঘটনা উদ্বেগজনক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সরকার এই কাজ করছে কীনা সে প্রশ্ন উঠেছে।

অ্যামনেষ্টি বলেছে, "ভারতে আইনজীবী, সাংবাদিক, অধিকার কর্মী এবং মানবাধিকারের রক্ষকদের বিরুদ্ধে এক বিরাট দমন অভিযান শুরু হয়েছে। একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টির পরিবর্তে সরকারের উচিত মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার এবং শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশের অধিকার রক্ষা করা।"

ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ টুইটারে এই গ্রেপ্তার অভিযানের নিন্দা করে বলেছেন, এটি খুবই উদ্বেগজনক। দেশের স্বাধীন কন্ঠগুলো রুদ্ধ করার এই অভিযান বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টের এখনই হস্তক্ষেপ করা উচিত।"

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.