Sylhet Today 24 PRINT

আইএসে যোগ দেওয়া শামীমার সন্তানের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক |  ০৯ মার্চ, ২০১৯

আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএসে যোগ দেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণী শামীমা বেগমের শিশুপুত্র শুক্রবার সিরিয়ায় মারা গেছে।

শনিবার (৯ মার্চ) মার্কিন–সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) বরাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২০ দিন বয়সী শিশুটি মারা গেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়।

সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শরণার্থীশিবিরে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন শামীমা বেগম (১৯)। ছেলেকে নিয়ে তিনি দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলেও ব্রিটিশ সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে তার নাগরিকত্ব বাতিল করে।

এর আগে শামীমা আরও দুটি সন্তানের জন্ম দিলেও অসুস্থতা ও অপুষ্টিতে ভুগে শিশু দুটি মারা গেছে।

এসডিএফের মুখপাত্র মুস্তেফা বালি এএফপিকে শিশুটির মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করলেও কীভাবে এবং কখন মারা গেছে, তা জানাননি।

এর আগে টুইটার পোস্টে তিনি শিশুটির মৃত্যুর খবর অস্বীকার করেছিলেন। পরে ওই পোস্ট তিনি মুছে দেন।

শামীমা তার স্কুলের দুই বন্ধু খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসের সঙ্গে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ায় আইএসে যোগ দিতে যুক্তরাজ্য ছেড়ে যান। ওই সময় শামীমার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। সিরিয়ায় আইএসের এক সদস্য ডাচ তরুণকে বিয়ে করেন শামীমা। তার স্বামী আত্মসমর্পণের পর সিরিয়া বাহিনীর কাছে এখন বন্দী। শামীমার বন্ধু খাদিজা সুলতানা বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আমিরার ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা জানা যায়নি।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের দ্য টাইমসের সাংবাদিক অ্যান্টনি লয়েড সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় একটি শরণার্থী শিবিরে সাক্ষাৎ পান শামীমার। ওই সাংবাদিককে শামীমা বলেন, তিনি নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এখন যেকোনো দিন তার সন্তানের জন্ম হতে পারে। এর আগে অপুষ্টি আর রোগে ভুগে তার দুই সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। নবাগত সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরতে চান।

শামীমার ঘটনায় ইউরোপের দেশগুলো উভয়সংকটে পড়ে। জিহাদি এবং আইএসের প্রতি সহানুভূতিশীল কাউকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে, নাকি দেশে ফিরতে বাধা দেওয়া হবে, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি দেখা যায় অনেকের মধ্যে।

সন্তানের জন্য যুক্তরাজ্যে ফেরার ইচ্ছার কথা জানিয়ে শরণার্থীশিবির থেকে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শামীমা বলেছিলেন, ‘আমি আমার এই সন্তানকে হারাতে চাই না। এটা শিশুদের বেড়ে ওঠার মতো কোনো জায়গা নয়।’ তবে ওই সাক্ষাৎকারে আইএসের হামলা নিয়ে শামীমার একটি বক্তব্যে তার বিরুদ্ধে জনসমর্থন চলে যায়।

তিনি বলেছিলেন, ২০১৭ সালে ম্যানচেস্টার এরেনা হামলায় ২২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি ‘বেদনাহত’ হয়েছিলেন। তবে একই সঙ্গে সিরিয়ায় সামরিক হামলার তুলনা করে বলেন, ‘একজন সৈন্যকে হত্যা করা হলে ঠিক আছে, আত্মরক্ষার জন্য তা করা হয়েছে। বাঘুজে নির্বিচারে বোমা মেরে আইএসের নারী ও শিশু হত্যা করা হচ্ছে। এটি এখন দুই দিকের ব্যাপার। কারণ, আইএসেও নারী ও শিশু মারা যাচ্ছে।’

শামীমা আরও বলেন, ‘এটা এক ধরনের প্রতিশোধ। তাদের (আইএস) যুক্তি ছিল যে এটা প্রতিশোধ, তাই আমি ভেবেছিলাম, ঠিক আছে, এটা ন্যায্য।’

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানান।

এদিকে শামীমার সন্তানের মৃত্যুর খবরে ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ডিয়ানে অ্যাবট। তিনি বলেন, কাউকে রাষ্ট্রহীন করা আন্তর্জাতিক আইনপরিপন্থী। একজন ব্রিটিশ নারী তার নাগরিকত্ব হারিয়েছেন বলে আজ একটি নির্দোষ শিশুকে মরতে হলো।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.